
বিপদগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি)। আর্থিক ক্ষতির মধ্যে থাকা পাটকল প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে আরো বেশি বিপদসংকুল অবস্থার মধ্যে।
লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েক মাস আগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিজেএমসির অধীনে দৈনিক মজুরিভিত্তিক যত অস্থায়ী শ্রমিক আছে সবার নিয়োগ বাতিল করা হয়। বাদপড়াদের সেই তালিকায় আড়াই শ’র বেশি খেলোয়াড়ও রয়েছেন।
এই তালিকায় যারা বিজেএমসির হয়ে খেলে থাকেন সেই সব খেলোয়াড়রা অস্থায়ী শ্রমিক শ্রেণিতে চাকরি করেছিলেন। তাদেরকে নিয়েই ক্রীড়াঙ্গনে অংশগ্রহণ করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। নতুন সিদ্ধান্তে চাকরি চলে যায় সেই সব খেলোয়াড়দেরও। সে কারণে দল গঠন করা থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছে বিজেএমসি। এই বিজেএমসি জাতীয় অ্যাথলেটিকস এ একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দলটির নামের সাথে ‘টিম’ যোগ হলেও এখন সেটি নেই। স্থবির হয়ে থাকা দেশের ক্রীড়াঙ্গন সরব হলেও আর দেখা যাবে না বিজেএমসিকে। অথচ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আজকের অবস্থানে আসার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল এ সার্ভিসেস দলের। ফুটবল আর ক্রিকেটে খুব বেশি আলোচনা শোনা না গেলেও বাকি খেলাগুলোতে অবদান রয়েছে তাদের।
তবে মেয়েদের ফুটবলে এ সার্ভিসেস দলের অবদান রয়েছে। বিজেএমসিতে আনসারের মতো দলে চাকরি করার পাশাপাশি খেলেছেন খেলোয়াড়রা। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী দল হিসেবে এগিয়ে আসায় অনেক খেলোয়াড়ের চাকরি হয়েছে। এখন দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যাওয়া বাংলাদেশ পুলিশও বড় বড় স্বপ্ন দেখছে। এই দলগুলোর মধ্যে এখন বেশ নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে বিজেএমসি।
সার্ভিসেস দল হিসেবে এখন খেলোয়াড়দের নিয়ে তাদের ভাবনাটা অনেকটাই কমে এসেছে। আর নতুন হিসেবে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
তবে একটি দল বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য ভালো কোনো খবর হতে পারে না, যা আশাহত করেছে অনেক খেলোয়াড়কে। বিশেষ করে মেয়েদের কাবাডি ও ফুটবলে এখন আর দল গঠন না করায় সেখানে চাকরি পাওয়া খেলোয়াড়রা পড়ে গেছেন চরম দুশ্চিন্তায়। অনেকের চাকরি চলে গেছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
বদলে যাওয়ার এই ছবিটা অনেকের কাছে যেমন আশার আবার কারও কারও কাছে দারুণ হতাশার। বিজেএমসির দল গঠন না করা মানে খেলাধুলার আকাশ থেকে একটি তারকা হারিয়ে যাওয়া। নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে দল গঠন করে বিভিন্ন খেলা পরিচালনা করা এখন একেবারেই সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ধীরে ধীরে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে বিজেএমসি।
সবচেয়ে বেশি ১৯ বার সাইক্লিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ১১ বার হ্যান্ডবল হওয়ার পাশাপাশি ভলিবল, কাবাডিতে একাধিক জাতীয় আসরে শিরোপা জেতার রেকর্ড রয়েছে। এছাড়া তায়কোয়ানদো, জিমন্যাস্টিকস, উশু, ভারোত্তোলনসহ আড়ালের অনেক খেলাই দল গঠন করেছিল।
এখন নতুন করে একশ খেলোয়াড় নিয়ে হয়তো বিজেএমসি একটি নাম হিসেবেই বেঁচে থাকবে, আর কিছু নয়।