
বাংলাদেশের দাবার বিস্ময়বালক বলা হয়ে থাকে মোহাম্মদ ফাহাদ রহমানকে। বয়স ১০ পেরোনোর আগেই যিনি দেশের বড় বড় দাবাড়ুদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন ভবিষ্যতের সেনানী। তার সমবয়সী কেউ তাকে হারাতে পারত না।
মাঝে মধ্যে আবার সিনিয়র কাউকে পরাজিত করে চারদিকে হই চই ফেলে দিতেন। কিছুটা ধীরে হলেও দাবার ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে তাকে ভাবা হচ্ছে। যার প্রমাণ প্রায়ই রেখে চলেছেন তিনি।
দাবার আশা-ভরসার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। বছর খানেকেরও বেশি আগে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার্স দাবার শিরোপা জেতাটা বড় অর্জনের মধ্যে পড়ে। একজন আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার্স দাবার শিরোপা জেতাটাকে অসামান্য অর্জন হিসেবেই দেখতে চাইছেন খেলাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
আর এবার বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে দেশের মান যা একটু রেখেছেন, তা এই ফাহাদ রহমানই। তার পারফরম্যান্সকে ব্যতিক্রমই বলতে হবে এবার।
করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় পড়ে এবার প্রথমবারের মতো সামনাসামনি বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডের লড়াই হচ্ছে না। প্রতিযোগিতা চলছে অনলাইনে। আর নতুন এ লড়াইয়ে বাংলাদেশের শুরুটা খুব যে ভালো হয়েছে, সেটি বলা যাবে না। ১০ দলের মধ্যে নবম হয়ে কোনোরকমে মান বাঁচিয়েছে জাতীয় দল। অলিম্পিয়াডের ডিভিশন টুয়ের প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল জার্মানি। আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ হারিয়ে দিয়েছেন জার্মানির গ্র্যান্ডমাস্টার লুইস অ্যাঞ্জেলকে। এখানে অনেকটা আলাদাভাবে ফাহাদ নিজেকে প্রমাণ করলেও বাকিদের পারফরম্যান্স হতাশা ছড়িয়েছে।
গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান হারলেও আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার ড্র করেছেন। এই গ্রুপ থেকে জার্মানি, বুলগেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশ নয় খেলায় তিন ম্যাচ পয়েন্ট ও ১৭ গেম পয়েন্ট পায়। প্রথম দিনের মতো শেষ দিনের খেলায়ও বাংলাদেশ ভালো করতে পারেনি। তিন রাউন্ডের একটিতে ড্র ও দুটিতে হেরেছে। বাংলাদেশ সপ্তম রাউন্ডে ৩-৩ গেম পয়েন্টে ড্র করে তুর্কমেনিস্তানের সাথে। এই রাউন্ডে আন্তর্জাতিক মাস্টার মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান ফিদে মাস্টার নুরমামিদভ আজাতকে ও মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার আহমেদ ওয়ালিজা তুর্কমেনিস্তানের মহিলা ফিদে মাস্টার মেকানোভা আনাগোজেলকে পরাজিত করেন।
হতাশার খবরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান আলো কেড়েছেন। জুনিয়র বোর্ডে এই দাবাড়ু জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার দুই গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারিয়ে ৫ পয়েন্ট অর্জন করেছেন। ওপেন বোর্ডে তিন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ, রিফাত বিন সাত্তার ও জিয়াউর রহমান সর্বসাকুল্যে ৭ পয়েন্ট অর্জন করেছেন। নিয়াজের ২.৫, জিয়ার ২.৫ ও রিফাতের ২। এই ফলাফল হতাশারই।
ছেলেরা কিছু পয়েন্ট অর্জন করলেও মেয়েরা দারুণভাবে হতাশ করেছেন। বিশেষ করে সিনিয়র মেয়েদের দুই বোর্ডেই আশার আলো দেখাতে পারেনি। সেখানে সম্ভাব্য ১৮ পয়েন্ট থেকে দুই আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী হামিদ ও শারমিন সুলতানা মিলে মাত্র ২ পয়েন্ট অর্জন করেছেন। জুনিয়র বোর্ডেই পয়েন্ট সবচেয়ে বেশি, ফাহাদের ৫ পয়েন্টের পাশাপাশি ওয়ালিজা আহমেদ ও নোশিন আঞ্জুম মিলে নিয়েছেন আরো ৩ পয়েন্ট।
মোট ৩৫টি দল নিয়ে টপ ডিভিশনের খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিহাস বলছে, অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ সেরা ৩৫-এর মধ্যে ছিল দুইবার। এবার তার ধারে কাছেও নেই। এবারের আসরে বাংলাদেশের চাওয়া ছিল এক জয় ও ড্র। সেটি কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে। তবে রেটিংয়ে বেশি পিছিয়ে ছিল লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের গড় রেটিং যেখানে ২১৬৭, সেখানে জার্মানির ২৪১৯ আর বেলারুশের রেটিং ২৩২৭। ডিভিশন থ্রি থেকে উঠে আসা বেলজিয়ামের রেটিংই শুধু বাংলাদেশের চেয়ে কম, ২০৬৭।
এখন অনলাইন দাবায় ভালো করতে হলে আরো সময় ব্যয় করতে হবে।