
জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন, এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার ও জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখলেই মিলছে মন খারাপের খবর। মা-বাবা, ভাইয়ের আহাজারিতে ভারী চারপাশ। হাসপাতালের বিছানায় নির্যাতিত নারীর নিথর দেহ। সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। নারীদের প্রতি সহিংসতা রীতিমতো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেয়ালে পিঠ ঢেকে যাওয়া বলতে যা বোঝায়, যেন তেমনই একটা অবস্থা। এমন সময়ে আর চুপ করে থাকা সম্ভব নয়; সাধারণ মানুষের ভাবনা এখন এমন। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে পুরো দেশ। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সবাই, হচ্ছে মানববন্ধন।
এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা। জানিয়েছেন তাদের সোচ্চার অবস্থানের কথা।
নারী ক্রীড়াবিদরাও আওয়াজ তুলেছেন ধর্ষণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। ইংরেজি গণমাধ্যম টিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিরাপত্তাহীনতা, ভয় ও উৎকণ্ঠার কথাও জানিয়েছেন দেশের তিন তারকা খেলোয়াড় সালমা খাতুন, মাবিয়া আক্তার ও সাবিনা খাতুন।
এটা নিয়ে দেশের সবাই প্রতিবাদ করছে। তবে প্রতিবাদ যেন জোড়ালো হয়। আমাদের দেশে যখন এসব হয়, তখন জোরালো থাকে। কিন্তু কিছুদিন পরে চাপা পড়ে যায়। এসব যেন চাপা না পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে যেন ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। দ্রুত সাজা হলে এসব কমে আসবে বলে আমি মনে করি। এখন অনেক তোলপাড় হচ্ছে, কয়েকদিন পর আবার চাপা পড়ে যাবে। এই কারণেই কিন্তু এসব বাড়ছে, ধর্ষকরা সাহস পায়। আর আমার একটা প্রশ্ন, যারা এসব করে, তাদের কী মা-বোন নেই? বুঝে উঠতে পারি না।
নারীদের সাথে যখন আশেপাশে প্রতিনিয়ত এসব ঘটছে, তখন ভয়-উৎকণ্ঠা কাজ করেই। আমিও একজন নারী। শুধু আমি বলে নয়, বাংলাদেশের সব মেয়েরাই হয়তো ভয়ে থাকে। যখন দেখে কোনো বিচার নেই, এসব বেড়েই চলেছে, তখন ভয়ও বাড়ে। তাই আবারও বলি, এটার আইন হওয়া উচিত। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দ্রুততার সঙ্গে নিশ্চিত করা উচিত।
সমাজ আমরা তৈরি করছি, আমরাই নষ্ট করছি। খারাপ কাজগুলো আমরাই করছি। সত্যি বলতে আমরা সমাজের মানুষরাই ভালো নই। এতো কিছুর দরকারই হয় না, দরকার শুধু মানসিকতার পরিবর্তনের।
ইভটিজিং বা অ্যাসিড নিক্ষেপ বন্ধে আইন আছে। আইন থাকায় অ্যাসিড নিক্ষেপ কমে গেছে। এটারও যদি আইন থাকতো, কঠিন একটা শাস্তি থাকতো, এটা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেত। এটার আইন না থাকায় ধর্ষকরা ভাবছে আমরা তো পাড় পেয়ে যাচ্ছি। আমার মনে হয় এটার একটা আইন দরকার, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে এটা কমবে।
এর বাইরে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিবাদ জানাতেই হবে। যদিও এতে বিশেষ কিছু হয় না। তবু চুপ থাকা যাবে না। এভাবে চলতে পারে না। দ্রুতই আইন করতে হবে। এটা অনেক ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। এমন না যে দুই-একটা ঘটনা, এটা ঘটেই যাচ্ছে। ২৬ দিনে ৩৮ জন মেয়ে নির্যাযিত, এটা সামান্য কথা নয়। ধর্ষকদের কাছে বয়সেরও মাত্রা নেই। ঘৃণ্য কাজ করেই যাচ্ছে তারা।
আমরা যারা নারী, তাদের জন্য এটা ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যে বাসা থেকে বাইরে বের হচ্ছি, ভালোভাবে আবার বাসায় ফিরে আসতে পারব কিনা, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাইরে আমাদের কোনো নিরপত্তা নেই। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে আমাদের। ভয় কাজ করছে এখন। যারা এসব করছে, আমরা চাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
এসব ঘটেই যাচ্ছে। এদের মধ্য থেকে যদি একজনকে কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু এসব কমে আসে। ৫জনকে শাস্তি দিন আর একজনকে, সেটা যদি কঠিনতম হয়, আমার মনেহয় এসব কমে আসবে। শাস্তিটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। সমস্যাটা এখানেই। আমাদের আইন আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। ধর্ষকদের জন্য শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে। সেভাবে শাস্তি হয় না বলেই কিন্তু তারা সাহস পায়। কয়েকদিন পর এসে দেখে সব ঠিকই আছে।
ফেসবুকে প্রতিবাদ হচ্ছে, মানব বন্ধন হচ্ছে দেখছি। কিন্তু ফেসবুকে ঢুকে আপনি প্রতিদিন ধর্ষণের খবরও দেখছেন। মানব বন্ধন হচ্ছে, রাস্তায় নেমে মানুষ আন্দোলন করছে। কিন্তু লাভ কী হচ্ছে? কিছুই হচ্ছে না। আবার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশেরও সংঘর্ষ হয়, মারামারি হয়। তাহলে এতসব করে কী লাভ! আসলে এটা বন্ধ করার ক্ষেত্রে ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করাই একমাত্র উপায়।