হকিতে যারাই নিয়ম গড়ে তারাই আবার নিয়ম ভেঙে থাকেন। এক বছর আগে কোনো ঝামেলার কারণে যে কর্মকর্তা ৩ বছর নিষিদ্ধ হন, এক বছর পরই তিনি হয়ে যান জাতীয় দলের ম্যানেজার!
সে কারণে হকিকে বলা হয় নিয়ম ভাঙার খেলা। কোচ, খেলোয়াড় বা কর্মকর্তাকে দেয়া শাস্তির পুরোটা কখনোই ভোগ করতে হয় না।
অতি সম্প্রতি আবারো নিয়ম ভাঙার মতো ঘটনা ঘটেছে দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় খেলাটিতে। পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে গেছে দুই বছরে। ২০১৮ সালে প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগে মোহামেডান ও মেরিনার্স ম্যাচ চলাকালে মাঠে চরম হট্টগোল হয়। বিশৃঙ্খলার দায়ে মেরিনার্সের সাধারণ সম্পাদক হাসান উল্লাহ খান রানা, মোহামেডানের আরিফুল হক প্রিন্স ও একই দলের সহকারী কোচ আসাদুজ্জামান চন্দনকে ৫ বছর নিষিদ্ধসহ ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে মেরিনার্সের আরেক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মৃধাকে ৩ বছর নিষিদ্ধ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর আর প্রিমিয়ার লিগের খেলা টার্ফে গড়ায়নি। তবে ঠিকই শাস্তি প্রত্যাহার করা হয়েছে। হকি ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ সভায় চারজনের শাস্তি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ জানান, শাস্তি প্রত্যাহার হলেও তাদের শর্ত দেয়া হয়েছে লিগে অংশ নিতে হবে। এটিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাই হাস্যকর বলছেন।
শাস্তি দেওয়ার পর সেটি প্রত্যাহারই যদি করতে হয়, তাহলে সেটি না দেয়াই ভালো ছিল। ফেডারেশন যে ক্লাবগুলোর কাছে জিম্মি সেটি আরো একবার প্রমাণিত হলো। অনেকটা পাতানো খেলার মতো করে ক্লাবগুলো তাদের কর্মকর্তাদের ওপর যে শাস্তি দেয়া হয়েছে সেটি প্রত্যাহারের আবেদন জানান। লিখিত না হলেও মৌখিকভাবে মোহামেডান ও মেরিনার্স শর্ত জুড়ে দেয় তাদের কর্মকর্তাদের ওপর দেয়া শাস্তি প্রত্যাহার করলেই কেবল লিগে অংশ নেবে।
পরে ফেডারেশনের পক্ষ থেকেও বলা হয়, কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি জরিমানা প্রত্যাহার করা হলে লিগে খেলার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে মোহামেডান ও মেরিনার্সকে। সে হিসাবে ৫ বছর মেয়াদের শাস্তি দুই বছরেই প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে ঊষা ক্রীড়াচক্র প্রিমিয়ার লিগে খেলবে কিনা তার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এক মৌসুম প্রিমিয়ার ডিভিশন হকিতে না খেলার কারণে প্রথম বিভাগে নামিয়ে দেয়া হয় পুরান ঢাকার ক্লাবটিকে; কিন্তু উষা প্রথম বিভাগে খেলেননি। ফেডারেশনের বর্তমান কমিটিতে ক্লাবটির কর্মকর্তাদের আধিক্য থাকায় উষাকে নিয়েই প্রিমিয়ার লিগ টার্ফে গড়াবে বলে অনেকেই মনে করছেন। সেখানেও নিয়ম ভাঙা হবে। কারণ বাইলজ অনুসারে কোনো দল প্রিমিয়ার লিগে না খেললে আপনা-আপনি প্রথম বিভাগে নেমে যাবে। এরপর প্রথম বিভাগ থেকে চ্যাম্পিয়ন কিংবা রানার্সআপ হয়েই আবার প্রিমিয়ারে ফিরতে হবে। এখন উষাকে প্রিমিয়ারে খেলার সুযোগ দিলে বাইলজ ভেঙে তবেই দিতে হবে।
এই চারজনকে শর্তসাপেক্ষে শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়ার কথা জানিয়ে ফেডারেশনের সভাপতি ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত বলেন, ‘আমাদের প্রিমিয়ার লিগ মাঠে নামাতে হবে। অনেককে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, সবাই মিলে আলোচনা করে শর্তসাপেক্ষে মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, ১ ডিসেম্বর প্রিমিয়ার লিগ শুরু করতে পারব। তার আগে ১০-১৫ দিন দল বদলের জন্য সময় দেয়া হবে।’