Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

বাল্যবিবাহ ঠেকানো ইতির জীবনের গল্প

Icon

রানা প্রামানিক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২০, ০৯:২৬

বাল্যবিবাহ ঠেকানো ইতির জীবনের গল্প

ইতি খাতুন

যেসব খেলোয়াড় পাহাড়সম প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছেন- তাদেরই একজন আর্চারি খেলোয়াড় ইতি খাতুন। 

এসএ গেমসে প্রথম নারী হিসেবে তিনটি সোনা জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি। ঘটনাটি ছিল ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বরে। বাংলাদেশের এসএ গেমসের ৩৫ বছরের ইতিহাসে এর আগে কোনো নারী খেলোয়াড় একই গেমসে তিনটি সোনা জিততে পারেননি। সেবার নেপালের পোখরার অন্নপূর্ণার কোলে দাঁড়িয়ে সে ইতিহাস গড়েছিলেন ইতি। 

বাংলাদেশের আর্চারির ইতিহাসে এই বিস্ময়বালিকার আজ হয়তো এখানে আসাই হতো না। আর্চারিতে না এলে হয়তো কোনো এক গ্রামে ঘরকোণায় ব্যস্ত থাকতেন এতদিন। হাজারো বালিকাবধূর মতোই ইতি খাতুনের নাম হারিয়ে যেতে পারত কালের গহ্বরে। কারণ বছর তিনেক আগে মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার। 

চুয়াডাঙ্গার এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য ইতি। বাবা ইবাদত আলী ছিলেন হোটেল কর্মচারী। তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হতো তাকে। পরিবারের স্বাভাবিক খরচ জোগাতেই দিন ফুরিয়ে যেত তার। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে অনেকটা দায়মুক্তি চেয়েছিলেন হয়তো তিনি।


ইতি সে সময় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন। পুতুল খেলার বয়স ছিল তার। অথচ বিয়েটা ঠিক হয়ে যায়। ওই সময় আর্চারি ফেডারেশনের চুয়াডাঙ্গায় প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন ইতি। অনেকটা পালিয়ে আসার মতোই ছিল ব্যাপারটা। পরিবারের সম্মতি ছিল না ইতির এই ক্যাম্পে যোগ দেয়া। সেখানে আর্চারির স্থানীয় কোচ সালেহ ইমরানের নজর কাড়েন পারফরম্যান্স দিয়ে। এরপর ক্যাম্পে যান। সেই ক্যাম্পই ইতিকে বিয়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছে তখন। সেই অধ্যায় আর মনে করতে চান না সোনাজয়ী এ মেয়ে। 

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আর সেই কথা মনে করতে চাই না। তখন বিয়ে হয়ে গেলে অবশ্য জীবনের গল্প ভিন্ন হতো। শুধু এটুকু বলব আর্চারি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে।’

তিনি নবম জাতীয় আর্চারিতে ২০১৮ সালে জেতেন প্রথম পদক। তিরন্দাজ সংসদের হয়ে মেয়েদের রিকার্ভ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জেতেন চুয়াডাঙ্গার এ কিশোরী। চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে আর্চারির প্রাথমিক বাছাইয়ে হয়েছিলেন প্রথম। চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী প্রথমবার আন্তর্জাতিক আসরে সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠলেন। বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে অনেক আগেই একটা যুদ্ধে জিতে গেছেন তিনি। মাঠের লড়াইয়ে একের পর এক জয় ছিনিয়ে তিনি এখন ইতিহাস গড়ে চলছেন।

ইতি অবশ্য একটা যুদ্ধ জয় করেই থেমে থাকেননি। এখনো প্রতিটি মুহূর্তেই তাকে যুদ্ধ করতে হয়। তীর ছোড়ার আগে লক্ষ্যস্থির করতে হয়। চারপাশটাকে ভুলে মনোযোগ স্থির করার লড়াইয়ে জয়ী হতে হয়। তার এই যুদ্ধ জয়ের গল্প হাজারো নারীর জীবন বদলে দিতে পারে। প্রেরণা দিতে পারে নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার। সাহস জোগাতে পারে অসম্ভবকে সম্ভব করার।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫