
সর্বোচ্চ চারটি করে স্বর্ণ জিতেছেন জহির রায়হান ও শিরিন আক্তার।
অ্যাথলেটিকস হচ্ছে খেলাধুলার নিউক্লিয়াস, এটি বিশ্বের অনেক নামি-দামি ফুটবলার ও ক্রিকেটাররা বলে আসছেন। কেননা এর মধ্যে থেকেই খেলোয়াড়দের গতি সঞ্চার হয়। সেই অ্যাথলেটিকস ও দেশসেরা খেতাব পেয়েছে নৌবাহিনী। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শেষ দিনে নতুন কোনো রেকর্ড হয়নি। অন্য সময়ে রেকর্ডের ছড়াছড়ি থাকলেও এবার হয়েছে মাত্র দুটি। এতেই করোনায় অ্যাথলেটদের করুণ দশা ফুটে উঠেছে।
অ্যাথলেটিকসের কোনো আসর বসলেই ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের টার্ফ নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। টার্ফের জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্যেই এবার ৪৪তম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খেলোয়াড়দের ইনজুরিতে পড়ার শঙ্কা থাকলেও সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। টার্ফের কারণে ৪৩তম আসরটি চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ঘাসের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এবার রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর এই আসর। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সেরার মুকুট গলায় পড়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। অথচ বড় দুই খেলা ক্রিকেট ও ফুটবলে তাদের শিরোপার দেখা নেই। অবশ্য জনপ্রিয় দুই ডিসিপ্লিনে তারা খেলছেও না; কিন্তু ঘরোয়া আসরে যে সব ডিসিপ্লিনে অংশ নিচ্ছে, সেখানে শুধুই নৌবাহিনীর জয়-জয়কার। ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বৃহস্পতি তুঙ্গেই বলা যায়। একের পর এক জয়ে সবাইকে পেছনে ফেলে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে।
অ্যাথলেটিকসে তারা এবার নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। ক্রীড়াঙ্গনে স্বীকৃত অন্য বড় দলগুলোর পক্ষে যা সম্ভব হয়নি। তবে নৌবাহিনীর জহির রায়হান ও শিরিন আক্তার ব্যক্তিগতভাবে ৪টি করে সোনা জিতে নজর কেড়েছেন। নৌবাহিনী ২১ টি স্বর্ণ, ১২ টি রৌপ্য, ১৩ টি ব্রোঞ্জসহ মোট ৪৬টি পদক জিতে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৩ টি স্বর্ণ, ২০ টি রৌপ্য ও ৯ টি ব্রোঞ্জ জিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। তিন দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় ২টি নতুন জাতীয় রেকর্ড করেছে। হাইজাম্প মহিলা ইভেন্টে ১.৭০ মিটার লাফিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রিতু আক্তার। এই ইভেন্টে ১.৬৮ মিটার লাফিয়ে ২০১৯ সালের পূর্বের রেকর্ড বাংলাদেশ জেলের পক্ষে উম্মে হাফসা রুমকীর। এবারও একই উচ্চতা লাফিয়েছেন তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হয়ে।
বাকি রেকর্ডটি ৩ হাজার মিটার মহিলা ইভেন্টে, ১৭ বছর পর ১০:৪৩.৩০ মিনিট সময় নিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রিংকি বিশ্বাস। এই ইভেন্টে ২০০৩ সালে হালিমা খানম বীথি সময় নিয়েছিলেন ১১:০৮.১৫ মিনিট। ৪টি স্বর্ণ পদক পেয়ে পুরুষদের সেরা খেলোয়াড় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জহির রায়হান এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেরা মহিলা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন হাইজাম্পে রেকর্ড করায় উদীয়মান রিতু আক্তার। এই প্রতিযোগিতায় সেরা সংগঠকের পুরস্কার পেয়েছেন যশোরের শেখ শরাফত একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এস এম শরাফত হোসেন।
আসরের দুই সেরা সফল খেলোয়াড় জহির রায়হান ও শিরিন আক্তার মেয়াদোত্তীর্ণ টার্ফে খেলার বিষয়ে ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন। জহির বলেন, ‘এই টার্ফে আমার হাটতেই ভয় লাগে, এখানে কীভাবে খেলা সম্ভব আমি বুঝি না। ফেডারেশন চেষ্টা করছে বলে শুনেছি; কিন্তু এখানে খেলার ঝুঁকি নেওয়াটা আমার জন্য হয়তো বড় বিপদের হতে পারে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি নতুন টার্ফ বসানোর’।
জহির যেখানে চারটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে সবকটিতে স্বর্ণ জিতেছেন, একই অর্জন শিরিনেরও। টানা ১১ বারের এই দ্রুততম মানবী বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও আমি স্বর্ণ জিততে পারায় বেশ খুশি হয়েছি। তবে যে টার্ফে আমরা দৌড়িয়েছি সেটাকে হতাশা ছাড়া আর কিছুই বলার উপায় নেই। ভবিষ্যতে এই ধরনের টার্ফে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স হলে খেলোয়াড়দের ইনজুরিতে পড়ার ভয় থাকে। আমাদেরকে সেটি এড়াতে হবে। আর সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন টার্ফ বসিয়ে আমাদের খেলার পরিবেশ করে দেওয়া হয়’।