চেলসির বিরুদ্ধে ঘরের মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে গোলশূন্য ড্রয়ের পরে দলের আক্রমণ ভাগের পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তিত ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজার ওয়ে গুন্নার সোলসার। 

তবে তারচেয়েও তিনি এই ম্যাচের পরে বেশি সরব রেফারিং নিয়ে। সোলসারের দাবি, নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে তার দলকে বঞ্চিত করেছেন রেফারি।

গত রবিবারের ম্যাচে চেলসির ক্যালাম হাডসন-ওডোইয়ের হাতে বক্সের ভিতর বল লাগলে পেনাল্টির দাবি তোলেন ম্যানইউ ফুটবলারেরা। যদিও খেলা থামিয়ে মাঠের পাশে রাখা মনিটরে পুরো ঘটনা দেখার পরে পেনাল্টির আবেদন উপেক্ষা করে খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন রেফারি স্টুয়ার্ট অ্যাটওয়েল। কিন্তু রেফারির সেই সিদ্ধান্তের সাথে একমত নন ম্যানইউ ম্যানেজার। 

তার কথায়, ওটা একশো শতাংশ নিশ্চিত পেনাল্টি ছিল। আমি জানতাম ওটা দেয়া হবে না। কারণ আগেই আমাদের পেনাল্টি পাওয়া নিয়ে গুঞ্জন তৈরির চেষ্টা হয়েছে।

চেলসি বক্সের ভিতর একটি বলের দখল নেয়ার জন্য লড়াই চলছিল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মেসন গ্রিনউড ও চেলসির হাডসন-ওডোইয়ের মধ্যে। বল দুইজনকেই স্পর্শ করে। গ্রিনউডের হাতের উপরের দিকে আর হাডসন-ওডোইয়ের হাতের নিচের দিকে লেগেছিল বল। কিন্তু রেফারি পেনাল্টি দেননি। ভিডিও প্রযুক্তির (ভিএআর) সাহায্য নিয়েও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তিনি। জানান, চেলসির ফুটবলার বলের কাছে হাত নিয়ে যাননি। বল তার হাতে লেগে গিয়েছে। তাই পেনাল্টি দেয়া হচ্ছে না।

করোনাভাইরাস মহামারির পরে গত মরসুমে ফের খেলা শুরুর পরে ম্যানইউ এ পর্যন্ত ২২টি পেনাল্টি পেয়েছে। যা অন্য কোনো ক্লাব পায়নি। সম্প্রতি তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন লিভারপুল ম্যানেজার যুর্গেন ক্লপ ও চেলসির সাবেক ম্যানেজার ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। কেন তাদের দল এত পেনাল্টি পায় না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তারা। 

সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই সোলসার বলেন, কিছু ম্যানেজার আমাদের পেনাল্টি পাওয়া নিয়ে রেফারিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। বিশ্বাস আছে, এই ফাঁদে রেফারিরা পা দেবেন না। কিন্তু চেলসির বিরুদ্ধে নিশ্চিত পেনাল্টি না পাওয়ায় আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। 

যদিও চেলসি ম্যানেজার থোমাস তুহেল বলে দিয়েছেন, ‍ওই বল হাতে লেগেছিল ম্যানইউ ফুটবলারের।

পেনাল্টি প্রসঙ্গে এই ম্যাচের আগে চেলসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন সোলসার। যেখানে লেখা হয়েছিল, এর আগে চেলসির বিরুদ্ধে সাক্ষাতে ম্যানইউ ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়ের নিজেদের বক্সে ফাউল করেও ছাড় পেয়েছিলেন। কোনো পেনাল্টি দেয়া হয়নি। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে সোলসার বলেন, এগুলোই বাইরে থেকে রেফারিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা।

কেন রেফারি পেনাল্টি দেননি, তা জানতে চাইলে সোলসার বলেন, ‍রেফারি ম্যাচ থামিয়ে মনিটরে পুরো ঘটনাটি দেখেন। কিন্তু হাতে বল লেগেছে দেখার পরেও দুই পয়েন্ট আমাদের থেকে কেড়ে নেন। কেন তা জানা নেই।

চেলসি ম্যানেজার থোমাস তুহেল অবশ্য জানিয়েছেন, ওটা কোনো পেনাল্টিই ছিল না। ম্যাচের পরে তিনি বলেন, ভিডিও প্রযুক্তি লাগবে কেন? ম্যানইউ ফুটবলারের হাতে বল লেগেছিল। তারপরে ওরাই কী ভাবে পেনাল্টি চাইতে পারে? আমি পুরো ঘটনাটি আইপ্যাডে দেখেছি। রেফারি কেন খেলা থামিয়ে এটি পরীক্ষা করে দেখতে গিয়েছিলেন, তা বুঝলাম না। তবে আমি খুশি তিনি প্রভাবিত হয়ে পেনাল্টি দেননি।

এর পাশাপাশি, সোলসার চিন্তিত দলের আক্রমণ ভাগ নিয়েও। ম্যাচের পরে দলের রক্ষণের প্রশংসা করলেও আক্রমণ ভাগের ফুটবলারদের আরো উন্নতি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। চলতি মরসুমে যদিও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সব চেয়ে বেশি গোল (৫৩টি) করেছে সোলসারের ছেলেরাই। এই মুহূর্তে ২৬ রাউন্ডের পরে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ম্যানইউ। শীর্ষে থাকা ম্যানসিটির চেয়ে ১২ পয়েন্ট পিছনে রয়েছে ম্যানইউ। 

সোলসারের কথায়, ‍আমরা প্রচুর গোল যে করতে পারিনি তা ঠিক। গোল না খেয়ে ম্যাচ অমীমাংসিত রেখে ফেরার জন্য রক্ষণকে ধন্যবাদ দিতেই হচ্ছে। এই ছন্দ ধরে রাখতে হবে। কিন্তু উন্নতির পরের ধাপ হলো, এই ধরনের ম্যাচ জিততে হবে। আর তার জন্য দরকার গোল। -আনন্দবাজার পত্রিকা