দুঃস্বপ্নের নিউজিল্যান্ড সফর: ভাঙল না হতাশার বৃত্ত

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২১, ১০:৪৮
ফাইল ছবি
ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের আনন্দ-বেদনার মহাকাব্যের নাম ক্রিকেট। এরই মধ্যে যুক্ত হলো হতাশার নিউজিল্যান্ড সফর। ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবল ধোলাই হয়েছে টাইগাররা।
বাজে পারফরমেন্সে সমালোচনায় বিদ্ধ তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রায় সব দলের জন্য সফলতা পাওয়া বেশ কঠিন। বাংলাদেশ গো হারার আগেই অস্ট্রেলিয়া দল সিরিজ হেরেছে উইলিয়ামসনদের কাছে।
তবে যে ধরনের ক্রিকেট খেললে সমালোচনা হতো না সেটি করতে পারেনি টাইগাররা।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ২০০১ সাল থেকে এখনো কোনো ম্যাচেই জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ দল। সব ম্যাচ একসঙ্গে করলে দেখা যায় ৩২ ম্যাচে পরাজয়ের বেদনা নিয়ে মাঠ ছেড়েছে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা।
অথচ সেরা প্রস্তুতি নিয়ে এবার একটি ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ- এমন প্রত্যাশা নিয়ে সিরিজ শুরু করলেও ম্যাচে দেখা গেছে পুরোপুরি উল্টো চিত্র। জেতার চেয়ে নিজেদের সেরা খেলাটাও খেলতে পারেনি কোনো ক্রিকেটার। বরং ২০০৯ সালে প্রথমবারের নিজেদের মাটিতে বাংলাওয়াশ করার স্মৃতিটা এখন যেন তেতো লাগছে। তবে চলনে বলনে ইতিবাচক মানসিকতার পরিচয় দিতে পারলে এতটা সমালোচনা হতো না।
দলের জন্য যে এখনো সাকিব আল হাসান কতটা প্রয়োজনীয় তা এই সফরে প্রতিনিয়ত টের পাওয়া গেছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কয়েক বছর আগে টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশে বিদেশে যেখানেই খেলা হোক না কেন সাকিব পারফরমার হিসেবে থাকেন সবার ওপরে। খারাপ খেললে কখনো বলেন না, আমরা শিখছি!
যেমন করে তৃতীয় টোয়েন্টি-২০ ম্যাচে হঠাৎ করেই অধিনায়কত্ব পাওয়া লিটন দাস বলেছিলেন, আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি! পুরো সিরিজে ব্যর্থ এই ডানহাতি ওপেনার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ইনজুরির সুবাদে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন; কিন্তু প্রথম বলে আউট হয়ে ছেলেমানুষির পরিচয় দিয়েছেন। একজন অধিনায়ক যে দলের নেতা সেটি প্রমাণ করতে পারেননি এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। পুরো সিরিজে লিটনের আউট হওয়ার ধরনটা প্রতীকী হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, অনেকের কাছে দলের খেলোয়াড়দের জন্য শিক্ষা সফর ছিল এটি। নিউজিল্যান্ডের সৌন্দর্য্য দেখেই যেন তৃপ্ত হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু এই সফরেও হতাশার বৃত্ত ভাঙা হলো না। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন পজিশনের কোনোটিতেই যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারেনি ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে সমীহ জাগানো দলে পরিণত হলেও এই সিরিজে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর টি-টোয়েন্টিও যেনো টেস্ট ক্রিকেটের মতো বেহাল দশা, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। সে কারণেই বারবার প্রশ্ন উঠেছে, কী শিখছেন লিটন আর কীইবা শিখছেন বাংলাদেশ দলের অন্য ক্রিকেটাররা?
তারুণ্যের জয়গানের পরিবর্তে মিলল বাজে হতাশা। এই হারের মধ্য দিয়ে দুঃস্বপ্নের এক সফর শেষ হলো বাংলাদেশের। ক্রিকেটাররা যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে চাইবেন নিউজিল্যান্ড সফর। এই সিরিজে আরও পিছিয়ে পড়েছে তামিম ইকবালের ওয়ানডে দল। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে উড়ন্ত সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর ভারত, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে দুই নম্বরে জায়গা করে নিয়েছিল টাইগার বাহিনী। এক সিরিজ পরেই বাংলাদেশের অবস্থান এখন আফগানিস্তানেরও নিচে। ৬ ম্যাচ খেলে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে ৫ নম্বরে নেমে গেছে বাংলাদেশ।
টাইগারদের উপরে থাকা নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং ইংল্যান্ডের পয়েন্টও সমান ৩০। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এরচেয়ে বড় হতাশার নাম আর কী হতে পারে?