Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

রেকর্ডের আন্তর্জাতিক মান নিয়ে সংশয়

Icon

মোস্তফা তারিক আল বান্না

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১০:৪৯

রেকর্ডের আন্তর্জাতিক মান নিয়ে সংশয়

শেষ হলো বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের নবম আসর

শেষ হলো বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের নবম আসর। ১৯৭৮ সাল থেকে দেশে আয়োজন হয়ে আসছে এ গেমস আসর। এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নাম পরিবর্তন করে হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস। 

৪৩ বছর ধরে গেমসে শত শত জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি হয়ে আসছে। এবারের আসরে নতুন অনেক জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু এই রেকর্ডগুলো বাংলাদেশের ক্রীড়ার আন্তর্জাতিক মান বাড়াতে কতটা ভূমিকা রাখে, তা নিয়ে সংশয় আছে। 

আর এসব যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব যাদের, সেই বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) কী বিষয়টি আমলে নিয়েছে, প্রশ্ন সেটাই। কারণ, বিশ্ব ক্রীড়ায় বাংলাদেশের অবস্থান এখনো যে সেই তলানিতেই রয়েছে। যার প্রমাণ আমরা দেখি বিশ্ব অলিম্পিক প্রতিযোগিতায়। আমাদের যে ক্রীড়াবিদরা বাংলাদেশ গেমস সাঁতারে পুল কাঁপিয়ে দিচ্ছেন, তাদের বিশ্ব অলিম্পিকের বাছাইপর্বে হাবুডুবু খেতে দেখা যায়, মূলপর্বে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য আর হয় না। 

এবারের গেমসে পুরুষ বিভাগের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট এ মোহাম্মাদ ইসমাইল ১০.৫০ সেকেন্ডে দূরত্ব অতিক্রম করে স্বর্ণপদক জয় করেন এবং দেশের দ্রুততম মানব উপাধি অক্ষুণ্ন রাখেন। একইভাবে মহিলা বিভাগে শিরিন আখতার ১১.৬০ সেকেন্ডে দূরত্ব পার হয়ে স্বর্ণপদক জেতেন, হন দেশের দ্রুততম মানবী। শিরিন ও ইসমাইলের ছবি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে আর তাদের দৌড়ের ভিডিও বিভিন্ন টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে। এমনকি অনেক মিডিয়ায় তাদের সাক্ষাৎকারও প্রচার হয়েছে বা হচ্ছে। 

কিন্তু তারা বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পুরুষ ও মহিলার তুলনায় যে কতটা পিছিয়ে তার হিসেব কী আমাদের জানা আছে? সর্বশেষ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সে পুরুষ বিভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোলম্যান ৯.৭৬ সেকেন্ডে দূরত্ব অতিক্রম করে স্বর্ণপদক জেতেন। আর মহিলা বিভাগে জ্যামাইকার শেলি অ্যান ফ্রেজার প্রাইস ১০.৭০ সেকেন্ডে দূরত্ব অতিক্রম করে শিরোপা লাভ করেন। আমাদের ইসমাইলের সঙ্গে কোলম্যানের দল পার্থক্য (১০.৫০- ৯.৭৬) দশমিক ৭৪ সেকেন্ড। দশমিক ৭৪ সেকেন্ড মানে এক সেকেন্ডেরও কম সময়। সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হবে এই পার্থক্য খুব বেশি নয়; কিন্তু দশমিক ৭৪ সেকেন্ডের মধ্যে আসলে বিস্তর ব্যাবধান। কারণ অলিম্পিক কিংবা বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের হিটে দেখা যায়, কোলম্যান হয়তো প্রথম ৫ জনের ভেতর রয়েছেন; কিন্তু আমাদের ইসমাইলরা হিটে লাভ করেন ৯০/১০০ তম স্থান। আবার শিরিন ও শেলি অ্যানের (১১.৬৯-১০.৭০) পার্থক্য দশমিক ৯৯ সেকেন্ডকে মনে হবে সেটাও তো খুব বেশি নয়; কিন্তু অলিম্পিক বা বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের হিটে ওই দশমিক ৯৯ এর মধ্যেও প্রায় ১০০ ক্রীড়াবিদ অবস্থান করেন। দেখা যায়, শিরিন হিটেই বাদ পড়েন নতুবা নব্বইয়ের আশপাশে স্থান পেয়েছেন। 

গেমস সাঁতারে পুরুষদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে আসিফ রেজা ২৩.৩২ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণপদক জিতেছেন। আর মহিলাদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জিতেছেন সোনিয়া আক্তার ২৯.৬৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে। 

পুরুষদের এই ইভেন্টে বিশ্বরেকর্ড ব্রাজিলের সিজার সিয়েলোর। ২০০৯ সালে ব্রাজিলিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি ২০.৯১ সেকেন্ড সময়ে দূরত্ব অতিক্রম করে ওই রেকর্ড গড়েন। বাংলাদেশের আসিফ রেজার সঙ্গে সিজারের সময়ের ব্যবধান ২.৪১ সেকেন্ড। মনে হবে খুব সামান্য কিন্তু এই ২.৪১ সেকেন্ড যে কত বড় ব্যবধান, তা শুধু সাঁতারুরাই জানেন। মহিলাদের বিশ্ব রেকর্ড সুইডেনের সারাহ জসট্রম। তিনি ২০১৭ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ২৩.৬৭ সেকেন্ডে ওই রেকর্ড গড়েন। বাংলাদেশের সোনিয়ার সঙ্গে তার সময়ের ব্যবধান ৬.০২ সেকেন্ড। মনে হতে পারে ৬ সেকেন্ড কী এমন পার্থক্য; কিন্তু সোনিয়া নিজেই জানেন, এই পার্থক্য কত বড়। 

এসব তো শুধু স্প্রিন্ট ও সাঁতারের সামান্য হিসেব। দূরপাল্লার দৌড়, শুটিং, গোলক নিক্ষেপ, লংজাম্প, হাইজাম্পসহ সব ইভেন্টে আমাদের ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের ক্রীড়াবিদদের ওই একই পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কেন এত পার্থক্য, কীভাবে তা কমানো যায়, এসব খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে বিওএ কর্মকর্তাদের। যদিও বিগত ৪৩ বছরেও (প্রথম বাংলাদেশ গেমস ১৮৭৮ সালে) বোঝেন নাই, সুতরাং আগামীতেও তা বুঝবেন বলে মনে হয় না।

যদি গেমসের রেকর্ড ও সাফল্যগুলো আন্তর্জাতিক আসরে কোনো ভূমিকাই রাখতে না পারে, তাহলে এত টাকা ব্যয় করে তার আয়োজনের কী দরকার আছে? অনেকেই এক বাক্যে বলবেন, প্রয়োজন নেই; কিন্তু এর প্রয়োজন রয়েছে। উপরে উঠার প্রথম সিঁড়ি এই বাংলাদেশ গেমসই। আমাদের যা দরকার তা হলো, গেমসে যারা কৃতিত্ব দেখান তাদেরকে সঠিক পরিচর্যার আওতায় আনা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫