
এলাইন ও জ্যাকবস
জীবনে কখনো কখনো আচমকা এমন কিছু ঘটে যায়, যা নিজের কাছেই বিশ্বাস হতে চায় না! লেমন্ত মার্সেল জাকবসও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, সর্বকালের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টের ছেড়ে যাওয়া রাজ-সিংহাসন দখল করেছেন তিনি। তিনিই এখন পুরুষদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টের নতুন রাজা।
১২৫ বছরের অলিম্পিক ইতিহাসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে (পুরুষ কিংবা নারী, কোনো ইভেন্টেই) কখনোই সোনা জিততে পারেননি ইতালির কোনো স্প্রিন্টার। সোনার পদক দূরের কথা, ইতালির কোনো পুরুষ অ্যাথলেট ১০০ মিটারে কখনো কোনো পদকই জিততে পারেননি। সব ইভেন্ট মিলিয়ে একবার মাত্র ১০০ মিটারে পদকের হাসি হাসতে পেরেছিল ইতালিয়ানরা। সেটিও সেই ১৯৬০ সালে নিজেদের ঘরের মাঠে।
২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক থেকেই পুরুষদের ১০০ মিটারে জ্যামাইকান রাজত্ব করে আসছিলেন উসাইন বোল্ট। তিনি ২০১৭ লন্ডন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মধ্যদিয়ে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডকে বিদায় জানিয়েছেন। বোল্টের ছেড়ে যাওয়া তক্তাসনে এবার কে রাজা বনে যান, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই সেই কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ইয়োহান ব্লেক; কিন্তু জ্যামাইকানদের হতাশ করে সেমিফাইনালেই ছিটকে পড়েন।
জ্যামাইকানদের বিদায়ের পর মূল লাইমলাইটে ছিলেন কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রাস ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রেড কারলি। নজর ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার আকানি সিম্বিনে এবং গ্রেট ব্রিটেনের ঝারনেল হিউজের দিকে; কিন্তু ঝারনেল হিউজ বাঁশির আগেই দৌড় শুরু করে ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে যান। তাতে আন্দ্রে ডি গ্রাস, ফ্রেড কারলিদের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়; কিন্তু ১০ সেকেন্ডের ব্যবধানে লাইমলাইটের নিচে থাকা সেই মার্সেল জ্যাকবসই বাজিমাত করে চমকে দিয়েছেন পুরো বিশ্বকে! সবাই পেছনে ফেলে প্রথম ইতালিয়ান হিসেবে জিতে নিয়েছেন সোনার পদক। লিখেছেন ইতিহাস। বছর দুয়েক আগেও লং জাম্পে সংগ্রাম করা জ্যাকবস টোকিওতে দৌড় শেষ করতে করেছেন ৯.৮০ সেকেন্ডে। যা অলিম্পিকের ইতিহাসে পঞ্চম দ্রুততম সময়ের রেকর্ড।
অলিম্পিকে ইউরোপিয়ান অ্যাথলেটদের মধ্যে দ্রুততম সময়ের আগের রেকর্ডটি ছিল ব্রিটেনের লিনফোর্ড ক্রিস্টির দখলে। ১৯৯২ সালে সোনা জয়ের পথে ৯.৮৪ সেকেন্ড সময় করেছিলেন তিনি। অপ্রত্যাশিত সোনা-সাফল্যের পথে জ্যাকবসের মূল লড়াইটা হয়েছে ফ্রেড কারলি ও আন্দ্রে ডি গ্রাসের সঙ্গেই। ৯.৮৪ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে ফ্রেড কারলি জিতেছেন রূপা, ৯.৮৮ সময় করে কানাডার ডি গ্রাসের ভাগ্যে জুটেছে ব্রোঞ্জ। পুরুষদের ১০০ মিটারে সিংহাসন গদিটা পুরোপুরি উল্টে গেলেও মেয়েদের ১০০ মিটারের চিত্রটা আগের মতোই আছে। ২০১৬ রিও অলিম্পিকের মতো এবারও মেয়েদের ১০০ মিটারে জ্যামাইকান রাজত্বই স্পষ্ট। এবারও মেয়েদের ১০০ মিটারের ৩টি পদকই গেছে জ্যামাইকায়! হ্যাঁ, সত্যিই তাই। মেয়েদের ১০০ মিটারে সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জ-৩টি পদকই জিতেছেন তিন জ্যামাইকান স্প্রিন্টার। রিও অলিম্পিকে প্রথম বারের মতো সোনা জেতা এলাইনে থম্পসন হেরাহ এবারও ‘রাণী’র মুকুট ধরে রেখেছেন। সোনা জিততে এবার তিনি গড়েছেন অলিম্পিকের নতুন রেকর্ড! টোকিওতে তিনি সময় নিয়েছেন ১০.৬১ সেকেন্ড! যা অলিম্পিকের ইতিহাসে মেয়েদের ১০০ মিটারে দ্রুততম সময়ের রেকর্ড! আগের রেকর্ডটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক নারী অ্যাথলেট গ্রিফিত জয়নারের দখলে। ১৯৮৮ সালে সিউল অলিম্পিকে সোনা জয়ের পথে তিনি সময় করেছিলেন ১০.৬২ সেকেন্ড।
৩৩ বছরের পুরো রেকর্ড ভেঙে ২৯ বছর বয়সী এলাইনে থম্পসন হেরাহ ঘোষণা দিয়েছেন স্বদেশি কিংবদন্তি উসাইন বোল্টের কীর্তি ছোঁয়ার। নিজের বয়সের দিকে তাকিয়ে থম্পসন হেরাহ আশাবাদি, তিনি বোল্টের কীর্তি ছুঁতে পারবেন। ‘কেন নয়। আমার বয়স সবে ২৯। ৩০ নয়, ৪০-ও নয়।’ বোল্টের কীর্তি ছোঁয়ার প্রসঙ্গে এভাবেই নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করেন ১০০ স্প্রিন্টের রাণী। টোকিওতে রেকর্ড গড়ে সোনা জয়ের পথে থম্পসনকে লড়াইটা করতে হয়েছে তারই দুই সতীর্থের সঙ্গে। দুই বারের সোনাজয়ী শেলি অ্যান ফ্রেসার-প্রাইস রূপা জিতেছেন ১০.৭৪ সেকেন্ড সময় করে। আরেক জ্যামাইকান শেরিকা জ্যাকসন ১০.৭৬ সেকেন্ড সময় করে জিতেছেন ব্রোঞ্জ। এ নিয়ে টানা ৪টি অলিম্পিকে মেয়েদের ১০০ মিটারে সোনা জিতল জ্যামাইকা।