
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে আজ ক্রীড়া তারকা বলতে আমরা বুঝি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোস্তাফিজুর রহমান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস, ফুটবলার জামাল ভূঁইয়া, সাদ, জিকো, আরচার রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকী, দাবাড়ু জিয়াউর রহমান, শুটার আব্দুল্লাহ হিল কাফির নাম। তাদের সঙ্গে মোহুতাসিন আহমেদ হৃদয় নামের এক কিশোর টেবিল টেনিস (টিটি) খেলোয়াড় চলে এসেছেন নজরে। সঠিক পরিচর্যা কিংবা দেখভালের অভাবে হৃদয়ের নাম আমরা কতদিন শুনতে পারব, সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।
স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে দুই দশকের বেশি সময় ফুটবল ছিল বাংলাদেশের প্রধান ক্রীড়া বিনোদন। সময়ের পরিবর্তনে এখন বাংলাদেশের শিশু থেকে বৃদ্ধ-সবাই ক্রিকেটকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হলেও আমরা কিন্তু ফুটবল, হকি ও ক্রিকেটের পর কোনো খেলায় তেমনভাবে এগিয়ে যেতে পারিনি।
অর্ধশত বছরে ফুটবল, হকি, ক্রিকেটের পর আরচারিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সুনাম অর্জন করেছে। রোমান সানা, দিয়ার মতো খেলোয়াড় বিশ্ব আরচারিতে বাংলাদেশের নাম লিখিয়েছেন। আরও কিছু খেলায় চেষ্টা করলে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারত। এর মধ্যে শুটিং ও টেবিল টেনিস অন্যতম। শুটিংয়ে বাংলাদেশের আসিফ হোসেন খান, আতিকুর রহমান ও আব্দুস সাত্তারসহ কয়েকজন কমনওয়েলথ গেমস এবং অন্যান্য ক্রীড়া আসরে দারুণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। আতিক ও সাত্তার ১৯৯০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে পুরুষদের এয়ার পিস্তল দ্বৈত ইভেন্টে স্বর্ণপদক জেতেন।
আসিফ ২০০২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে পুরুষদের এয়ার পিস্তল স্বর্ণপদক লাভ করেন। তবে সঠিক পরিচর্যার অভাবে ফুটবল ও হকির মতো শুটিংও আজ ‘মৃতপ্রায়’ খেলায় পরিণত হয়েছে। যেখানে একসময় ফুটবল ও হকি দেখতে গাটের পয়সা খরচ করে দর্শকরা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করার জন্য ‘যুদ্ধ’ করত, সেখানে এখন বিনে পয়সায় খেলা দেখার সুযোগ করে দিলেও গ্যালারির এক-দশমাংশও পূর্ণ হবে না। আসিফ যেদিন কমনওয়েলথ গেমস থেকে দেশে ফেরেন, তখন দারুণ সংবর্ধনা পান। অথচ শুটিং এখন আর আগের মতো বিনোদন সৃষ্টি করে না। এরই মধ্যে হঠাৎ করেই বাংলাদেশের টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হৃদয় নজর কেড়েছেন।
বিশ্ব টেবিল টেনিসের র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের মাসুদ রানা পরাগ রয়েছেন ৭১৩ নম্বরে, মানস চৌধুরী রয়েছেন স্কটল্যান্ডের নিয়াল ক্যামেরুনের সঙ্গে যৌথভাবে ৭১৪ নম্বরে, আর কিশোর খেলোয়াড় মোহতাসিন আহমেদ হৃদয় রয়েছেন মন্টেনিগ্রোর ফিলিপ রাদুলোভিকের সঙ্গে যৌথভাবে ৭১৬ নম্বরে।
ওমানের মাসকটে হওয়া ওয়ার্ল্ড টেবিল টেনিস ইয়ুথ কনটেন্ডার (অনূর্ধ্ব-১৯) প্রতিযোগিতায় দারুণ জয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠেন মাত্র ১৭ বছর বয়সী হৃদয়। যদিও সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আর পেরে ওঠেননি এই তরুণ টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। কোয়ার্টার-ফাইনালে প্রতিযোগিতার শীর্ষ বাছাই ভারতের পায়েস জৈনের বিপক্ষে ৩-০ সেটে হেরে যান হৃদয়। ভারতের প্রতিযোগীর বিপক্ষে প্রথম সেটে ১১-৭ ব্যবধানে হারের পরের দুই সেটে দারুণ লড়াই করেছিলেন তিনি; কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানেন ১১-৯ এবং ১২-১০ ব্যবধানে। তবে বলা যায়, কোয়ার্টার- ফাইনালে হেরে গেলেও তিনটি সেটেই হৃদয় বেশ ভালোই লড়াই করেন। এর আগে, স্বাগতিক ওমানের মাশাল আল-শাহিকে একই ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছিলেন হৃদয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বয়সী এই ইভেন্টে গ্রুপ পর্বে হৃদয় শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীর বিপক্ষে ৩-১ সেটে এবং কাতারের প্রতিযোগীর বিপক্ষে ৩-২ সেটে জেতেন।
এশিয়ান টিটিতে চীন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে। বিশ্ব টিটি কিংবা অলিম্পিকে চীনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই; কিন্তু বাংলাদেশের হৃদয়ের মতো যারা হঠাৎ দ্যুতি ছড়ান, তাদের নিয়ে খুব একটা ভাবনা দেখা যায় না সর্বোচ্চ ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের।