Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

জিমন্যাস্টিকসে অনুপ্রেরণার নাম ‘মার্গারিটা মামুন’

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৫০

জিমন্যাস্টিকসে অনুপ্রেরণার নাম ‘মার্গারিটা মামুন’

ছবি: সংগৃহীত

এক দশক পর জিমন্যাস্টিকসের আন্তর্জাতিক আসর বসেছিল বাংলাদেশে। ভবিষ্যতের জন্য উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখা এই আসরে বড় অনুপ্রেরণার নাম ছিল মার্গারিটা মামুন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই রাশিয়ান জিমন্যাস্ট ৫ম বঙ্গবন্ধু সেন্ট্রাল সাউথ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপ এ শুভেচ্ছা দূত হয়ে বাংলাদেশে এসে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিয়ে গেছেন। পুরো আসরে ১টি রৌপ্যে পদকের পাশাপাশি ৩টি ব্রোঞ্জ জিতেছিল লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় দিনে একমাত্র রৌপ্য পদকটি জয় করেন রাজীব চাকমা। পুরুষ (জুনিয়র) ব্যক্তিগত ফ্লোর এক্সারসাইজে ১২.১০ স্কোর গড়ে রুপার পদক জেতেন তিনি। ফেভারিট উজবেকিস্তান ১৯টি স্বর্ণ, ১১টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জসহ মোট ৩৮টি পদক জিতে শীর্ষে থেকে আসর শেষ করে। দুইয়ে থাকা ভারত জয় করেছে ৩টি স্বর্ণ, ৯টি রৌপ্য ও ১২টি ব্রোঞ্জসহ মোট ২৪টি পদক। তৃতীয় হওয়া বাংলাদেশের পরই শ্রীলঙ্কা ১টি রৌপ্য ও ১টি ব্রোঞ্জ জিতেছে। এর আগে ভোল্টিং টেবিলে ব্রোঞ্জ জয় করেন বনফুলী চাকমা।

বাংলাদেশের খেলাধুলা অঙ্গনে অতি পরিচিত নামগুলোর মধ্যে একটি থাকলেও জনপ্রিয়তায় অনেক পিছিয়ে জিমন্যাস্টিকস। এই খেলার কোনো খেলোয়াড়ের কথাও মানুষজনের জানা নেই। সেখানে কিছুটা হলেও পরিচিত বলা যেতে পারে মার্গারিটা মামুন ও সাইক সিজার। দু’জনেরই জন্ম দেশের বাইরে, তাই তারা পুরোপুরি বাংলাদেশি নয়। সেখানে আবার এগিয়ে রয়েছে মার্গারিটা। রাশিয়ায় জন্ম নেওয়ার পর জিমন্যাস্টিকসে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। বিশ্ব জিমন্যাস্টিকসে আলোক উজ্জ্বল একটি নাম মার্গারিটা মামুন। নামের শেষাংশ দেখে বাংলাদেশের পরিচয় পাওয়া যায়। রাজশাহীর কৃতী সন্তান প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন মার্গারিটার বাবা।

বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্গারিটার অনেক অজানা কথা এবার শোনা গেছে। নিজের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অর্জন অলিম্পিক স্বর্ণপদক নিয়েও রাজধানী ঢাকার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সেন্ট্রাল সাউথ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিম্যানাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপ। রিও অলিম্পিক গেমসে রিদমিক জিমন্যাস্টিকস অলঅ্যারাউন্ড ইভেন্টে স্বর্ণপদক জেতা মার্গারিটা মামুন তার পরিবার নিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সফরে তার সঙ্গে ছিলেন এক পুত্র সন্তান লেবস, রাশিয়ান স্বামী ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত আলেকসান্দার এবং মা এনা মামুন। মার্গারিটার বাবা মারা গেছেন ২০১৬ রিও অলিম্পিক গেমস চলাকালীন। 

এর আগেই দেশের খেলাপ্রিয়রা জেনেছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন নারীর স্বর্ণ জয়ের সুখবর। স্বর্ণ জয় করার পর তার মনটা তেমন একটা ভালো ছিল না। বুকের ভেতর চাপা কষ্ট নিয়ে তারপরও সেদিন হাসি মুখে কথা বলতে হয়েছিল সবার সঙ্গে। ক্যারিয়ারের শুরুতে জিমন্যাস্ট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মাত্র চার বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মার্গারিটা। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার মূল্যায়ান ছিল অনেকটা এরকম, ‘আমার মা রাশিয়ান আর বাবা বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। সে হিসেবে আমি অর্ধেক বাংলাদেশি আর অর্ধেক রাশিয়ান।’ বাবার জন্মভিটা রাজশাহী। রাজশাহীর বিখ্যাত আম, সেখানকার তৈরি সিল্ক যে কতটা জনপ্রিয়, সেটা জানাতে ভুল করেননি। রাজশাহীর আম সম্পর্কে বলতে গিয়ে মার্গারিটা বলেন, ‘আমার জানামতে কেউ যদি রাজশাহীতে বেড়াতে যায়, তাহলে বলি আমার জন্য কার্টুন ভরে আম আনবে। রাজশাহীর সিল্কও আমার অনেক পছন্দ। ইচ্ছে ছিল বাংলায় কথা বলব, তবে সেটি এবার আর হয়ে ওঠেনি।’ 

এদিকে সেই ছোটবেলা থেকেই বাংলা এবং ইংরেজি কোনোটাই ভালো দক্ষতা না থাকায় দোভাষীর মাধ্যমে রাশিয়ান ভাষায় কথা বলেন তিনি। জাতিসংঘের নারী দূত হয়েও অনেক দিন ধরে কাজ করে চলেছেন মার্গারিটা। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে বাংলাদেশের নারী সমাজের উন্নতির জন্যও কাজ করবেন। নারী জাতিকে সাহস দেওয়ার কাজটি সব সময় করতে চান তিনি। নারী খেলোয়াড়দের পোশাক নিয়ে মার্গারিটা কিছুটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমি সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিক গেমসেও দেখেছি মিসরের মেয়েদের পোশাক নিয়ে নানা কথা বলতে। মুসলিম নারীরা কীভাবে খেলছেন সেটা দেখার পর বলেছি, আসলে পোশাক কোনো ব্যাপার নয়। ধর্ম, পরিবেশ এসব নিয়ে এখনো যদি কেউ কথা বলেন, সেটাকে দুঃখজনক বলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫