
ছবি: সংগৃহীত
দেশের ক্রীড়া জগতে আর্চারি এখন আশা ভরসার প্রতীক। ২০১৯ সালে সবশেষ সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে ১০টি ইভেন্টের সবকটিতে স্বর্ণ জিতে দুর্দান্ত সাফল্য দেখায় দেশের আর্চাররা। একই বছর দেশের প্রথম আর্চার হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার টিকিট লাভ করেন রোমান সানা। ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠে ব্রোঞ্চ পদক জয় করে এই অসামান্য সাফল্য লাভ করেন তিনি। এবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ।
সবশেষ টোকিও ২০২০ অলিম্পিক গেমসে সরাসরি অংশগ্রহণ করে খেলাটিকে আরও উঁচুতে নিয়ে গিয়েছিলেন রোমান সানা। গলফার সিদ্দিকুর রহমানের পর দেশের দ্বিতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে তিনি এই অসামান্য গৌরব অর্জন করেছিলেন। আরেকটি সাফল্যের প্রত্যাশার টুর্নামেন্ট হিসেবে শুরু হয়েছে ২২তম এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৭টি দেশ নিয়ে এশিয়া সেরা এই প্রতিযোগিতা নিয়ে তাই আগ্রহ কিছুটা বেশি। রাজধানীর বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সেরা সেরা আর্চাররা।
২০১৭ সালে সর্বশেষ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের এই আসর। চার বছর পর আবারও বাংলাদেশে বসেছে এশিয়ার সেরা আর্চারদের এই মিলনমেলা। সেবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলেও নতুন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের আসর। মূলত সংস্কার কাজ চলার কারণেই ভেন্যু সরিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়েছে আসরটিকে। এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন মোট ১৩১ জন তীরন্দাজ। যার মধ্যে রয়েছেন পুরুষ ৭৮ এবং নারী ৫৩ জন।
২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে যদিও বাংলাদেশ কোনো পদক জিততে পারেনি। চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিল। তাই এবারের প্রতিযোগিতাকে ঘিরে বড় কোনো স্বপ্ন না দেখালেও ফেডারেশন কর্তারা দেশবাসীকে চমকে দিতে চান। সে কারণেই হেড কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক আগের অর্জনকে ছাপিয়ে যেতে দলকে তৈরি করেছেন। এবারের আসরে তাই বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধরা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াকে। স্বাগতিক বাংলাদেশ থেকে মোট ১৫ জন তীরন্দাজ খেলছেন। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের ভরাডুবি হয়েছিল।
সেটা নিয়ে এখনো আক্ষেপ করেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের আসরগুলোতে আমরা খেলে এতটা খারাপ ফলাফল কোনো আসরেই হয়নি। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের হতাশাটা এশিয়ান আর্চারিতে দূর করতে চাই। আর্চারি নিয়ে সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা সেটি পূরণ করতে খেলোয়াড়দের তৈরি করেছি।’
স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও এবারের আসরে কোরিয়া, উজবেকিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, জর্ডান, কাজাখস্তান, সৌদি আরব, কুয়েত, লেবানন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন অংশগ্রহণ করছে। কাতার নাম তালিকাভুক্ত করেও করোনার কারণে পরে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে চায়নিজ তাইপে শুরুতে আগ্রহ দেখালেও এই একই ভাইরাসের কারণে না খেলে পিছিয়ে গেছে। সাত দিনব্যাপী এ টুর্নামেন্টটি কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড ও ইলিমিনেশন রাউন্ড পদ্ধতিতে ৭০ মিটার (রিকার্ভ) এবং ৫০ মিটার কম্পাউন্ড শুটিং দূরত্বে রিকার্ভ পুরুষদলীয়, রিকার্ভ পুরুষ একক, রিকার্ভ মহিলা দলীয়, রিকার্ভ মহিলা একক ও রিকার্ভ মিশ্র দলীয়, কম্পাউন্ড পুরুষ দলীয়, কম্পাউন্ড পুরুষ একক, কম্পাউন্ড মহিলা দলীয়, কম্পাউন্ড মহিলা একক ও কম্পাউন্ড মিশ্র দলীয় ইভেন্টে আর্চাররা পদকের জন্য লড়াই করবেন একে অপরের সঙ্গে।
সেটি হোক স্বর্ণ, রৌপ্য কিংবা ব্রোঞ্জ, পদক জয়ের লক্ষ্য বাংলাদেশের। রিকার্ভের পুরুষ একক, মহিলা একক, পুরুষ দলগত, মহিলা দলগত বা মিশ্র দ্বৈতের যে কোনোটিতে পদক জিততে পারলেই লক্ষ্য পূরণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঘরের মঞ্চে এবার এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ভালো পারফরম্যান্স করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল। এদিকে টানা খেলার মধ্যে থেকে বিশ্রাম পাচ্ছে না খেলোয়াড়রা।
এসবকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এবার পদক জয়ের লড়াইয়ে থাকবে বলে মনে করছেন জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ, ‘এবারের আসরে দু‘জন নতুন খেলোয়াড় নিয়ে এশিয়ান আর্চারির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। নেওয়াজ আহমেদ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আর্চার, যে কি-না গত এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসে কম্পাউন্ডে পুরুষ এককে রৌপ্যপদক জিতেছিলেন। বাংলাদেশ আনসারের হয়ে খেলা শ্রাবণী দলে সুযোগ পেয়েছেন মেহনাজ আক্তার খেলতে না পারায়। সবাইকে নিয়ে যে সময় ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, সেটি পদক জেতার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছি।’