Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

শক্তির সমতা ফিরেছে ঘরোয়া ফুটবলে

Icon

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:৫৭

শক্তির সমতা ফিরেছে ঘরোয়া ফুটবলে

ছবি: সংগৃহীত

দারুণ আর জমজমাট একটা টুর্নামেন্ট দিয়ে পর্দা নেমেছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের। সাধারণত ফেডারেশন কাপ দিয়ে মৌসুম শুরু হলেও স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে স্বাধীনতা কাপ দিয়ে শুরু হয় এবারের খেলা। সেখানে শিরোপা জিতেছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড।

ফাইনালে সাম্প্রতিক সময়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাওয়া বসুন্ধরা কিংসকে পরাজিত করেছে ৩-১ গোলের ব্যবধানে। এই ফলাফলটা তাই অনেকের কাছেই আশ্চর্য ঠেকবে। কারণ গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে টানা সাফল্যের মধ্যে রয়েছে। জিতেছে পাঁচটি ট্রফি। সে কারণে এখন বসুন্ধরা কিংসের দল গঠন করা মানেই শিরোপা জয়ের পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। গত দুই মৌসুম ধরে এই ধারাবাহিকতা বিরাজমান থাকলেও এবার শুরুতেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করেছে। 

সর্বশেষ মৌসুমে যেমন করে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি, ঠিক তেমনি বিপিএল ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন কিংবা রানার্সআপ কোনোটাই হতে পারেনি আবাহনী। তৃতীয় হয়ে হতাশ করেছে। ভক্তকুলে যখন চরম হতাশা ঠিক তখনই সেরা দল গঠনে মাঠে নামে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা। গেল তিন বছরে কোনো শিরোপা জিততে না পারা কোচ মারিও লেমোসও জিতলেন প্রথম শিরোপা। আর সময়ের হিসেবে ৩১ বছর পর স্বাধীনতা কাপের ট্রফি ঘরে তুলেছে নাবীব নেওয়াজ জীবনের দল। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে একটা ভারসাম্যপূর্ণ দলে পরিণত হয়েছে এবার আবাহনী। সে কারণে মাঠে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে লড়াইটাও হয়েছে জমজমাট। সে হিসেবে বলা যায়, শক্তির সমতা ফিরেছে দেশের ঘরোয়া ফুটবলে। অনেকে আবার বসুন্ধরাকে একটা সময়ের মোহামেডানের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। কারণ সাদাকালো প্রতিনিধিরা আগের সেই অবস্থানে না থাকায় তাদের জায়গা নিয়েছে বসুন্ধরা। তাই আবাহনীর মোহামেডান এখন এই ‘বসুন্ধরা কিংস’!

ঘরোয়া ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দ্বৈরথ বলা যেতে পারে আবাহনী-মোহামেডান লড়াইকে; কিন্তু সেটি এখন হারিয়ে গেছে। আবাহনী তার জায়গায় থাকলেও মোহামেডান এখনো ধুঁকছে। সর্বশেষ স্বাধীনতা কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে মতিঝিলের জায়ান্ট দলটি। ২০১৮ সালের ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর একমাত্র জয়ের ম্যাচে খেলোয়াড়দের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। সেবার ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনীকে সরিয়ে বসুন্ধরার রাজা হয়ে ওঠার শুরুটা হয়েছিল কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেসের হাত ধরে। বসুন্ধরার জেতা পাঁচ শিরোপার প্রথম তিনটিতেই এই বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলারের ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ স্বাধীনতা কাপে কলিনড্রেসের নেতৃত্বেই শেখ রাসেলকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বসুন্ধরা। এরপরের সফলতার গল্পটাতে অন্য কোন দলের সুযোগ ছিল না।

তবে এবার রীতিমতো জুয়াই খেলেছে আবাহনী। দলটির ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু বসুন্ধরার ছেড়ে দেওয়া কলিনড্রেসকে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্বান্ত নেওয়ার বিষয়ে বলেন, ’আমি অনেকটা ক্লাবের লিমিট ক্রস করে এক প্রকার ক্লাবের নীতি নির্ধারকদের না জানিয়েই আবাহনীর দলীয় শক্তি বাড়াতে কলিনড্রেসকে নিয়েছি’। 

ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে সফলতম ক্লাব আবাহনীর ট্রফি ক্যাবিনেটে সব ধরনের শিরোপা থাকলে ও স্বাধীনতা কাপের শিরোপা ছিল ওই একটাই। সেটা ও এসেছিল ৩১ বছর আগে ১৯৯০ সালে। কাকতালীয়ভাবে সে দলটির অধিনায়ক ছিলেন বর্তমান ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু। 

এবারের সাফল্যের বিষয়ে রুপু বলেন, ‘ক্লাব টিম ম্যানেজমেন্ট এবং কোচ লেমোসের চাওয়া ছিল রাফায়েল আগস্তোকে ধরে রাখা, সেই চাওয়া অনুযায়ীই আগস্তোর সঙ্গে ক্লাবের কথা এবং চুক্তি ও হয়। পরবর্তীতে আবাহনীতে অতীতে দীর্ঘ সময় খেলা সানডে চিজোবার জায়গায় নাম্বার ৯ পজিশনে ব্রাজিলিয়ান ডরিয়েলটন এবং এশিয়ান ক্যাটাগরি থেকে ইরানের মিলাদ শেখকে দলে নেই। এরপর শেষ বিদেশি হিসেবে কলিনড্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পেয়ে যাই’।

মূলত কোস্টারিকান এই প্লেমেকারের আগ্রহেই তাকে আবাহনীতে নিয়ে আসা। রুপুর কাছে এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জয়ের মাধ্যমে আবাহনী ম্যানেজারের সিদ্ধান্ত যে কতটা সঠিক আর সময়োপযোগী ছিল সেটার প্রমাণ মিলেছে। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ফ্রি কিক থেকে একটি গোল করেছিলেন কলিনড্রেস, অন্য গোলটিও করিয়েছেন। স্বাধীনতা কাপের ৫ ম্যাচে ১৪ গোল করেছে আবাহনী। ফাইনালে বসুন্ধরাকে কোনো সুযোগই দেওয়া হয়নি। এই ধরনের ম্যাচ খেলার মাধ্যমে ফুটবলারদের যে উন্নতি হচ্ছে সেটাতে লাভ হবে জাতীয় দল আর বাংলাদেশের ফুটবলে। ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর ফেডারেশন কাপের ঘটনাবহুল ফাইনালে এই বসুন্ধরাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ঘরোয়া মৌসুমে সর্বশেষ ট্রফি জিতেছিল আবাহনী লিমিটেড। 

গত তিন বছর ধানমন্ডিপাড়ার ক্লাবটির চোখের সামনে দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কিংস। এবার কি তাহলে আবাহনীর পালা শুরু হলো। যেভাবে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে শুরু করল সেটা প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য একটা বার্তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫