Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

এগোচ্ছে ভারত আর পেছাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল?

Icon

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২২, ১৪:৪১

এগোচ্ছে ভারত আর পেছাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল?

এএফসি কাপে জয়ের পর উচ্ছ্বসিত বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়রা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের পারফরম্যান্সের ছাপ পড়েছে ক্লাব ফুটবলে। সর্বশেষ দুটি এএফসি কাপের আসরের দিকে তাকালে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। বাংলাদেশের কোনো ক্লাবই পেরোতে পারেনি এশিয়ার দ্বিতীয় সেরা এই আসরের গ্রুপপর্বের গণ্ডি।

যে বসুন্ধরা কিংসের উপর প্রত্যাশা তারা বেশি হতাশ করেছে। এর আগে প্রাক বাছাইপর্ব পার হতে পারেনি বাংলাদেশের আরেক ক্লাব আবাহনী লিমিটেড। দেশের সেরা দুটি ক্লাব জাতীয় দলের মতোই ভুগেছে স্কোরিং সমস্যায়।

একটা বিষয় অনেকটাই পরিষ্কার, মানসম্পন্ন স্ট্রাইকার যেন বাংলাদেশের ফুটবলে আকাল পড়েছে। বিশেষ করে দেশি ফুটবলারদের মধ্যে এই সংখ্যাটা দিনে দিনে কমছে। যার প্রভাব দেখেছে জাতীয় দল। এবার দেখল বসুন্ধরা কিংসও। ভালোমানের বিদেশি খেলোয়াড় নিয়েও এএফসি কাপের গ্রুপপর্ব পেরোতে পারেননি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন দেশটি। এদিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফুটবলে বিদেশিদের দাপট অব্যাহত রয়েছে। দেশসেরা এই লিগে গোলের পাশাপাশি হ্যাটট্রিকেও দেশিদের কোনো দাপট নেই। এখানে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমেও বিদেশিদের দারুণ খেলা দেখছেন দর্শকরা। 

দেশিদের হতাশা যেন জাতীয় দলের জন্যও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশিরা কতটা কার্যকর সেটি একটি পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। কুমিল্লা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে বিপিএল ফুটবলের হারতে বসা ম্যাচে মোহামেডানকে নাটকীয় ড্র এনে দিয়েছেন সোলেমান দিয়াবাতে। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে কর্নার থেকে তার হেডে স্কোরলাইন হয় ৩-৩। ততক্ষণে দিয়াবাতের হ্যাটট্রিকও পূর্ণ হয়ে গেছে! এমন কোনো অর্জনের সঙ্গী হতে পারেনি দেশি কোনো ফুটবলার।

১২ দলের বিপিএল ফুটবলে এখন পর্যন্ত হ্যাটট্রিক হয়েছে ৭টি। যার সবগুলোই এসেছে বিদেশিদের পা থেকে। ৪টি করেছেন নাইজেরিয়ানরা। চট্টগ্রাম আবাহনীর নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার পিটার থ্যাংকগডের হ্যাটট্রিক আবার দুটি। এছাড়া ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ডরিয়েলটন গোমেজ, বাংলাদেশ পুলিশের আফগান ফুটবলার আমরেদিন শরিফি, সাইফ স্পোর্টিংয়ের নাইজেরিয়ান এমেকা ওগবোহ, শেখ জামালের নাইজেরিয়ান চিনেদু ম্যাথিনু। 

এবার বিপিএল ফুটবলের প্রথম পর্বের পর থেকে এখন পর্যন্ত হ্যাটট্রিক করা খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোকপাত করতে গেলে সকল বিদেশিকে পাওয়া যাচ্ছে; যা দেশের ফুটবলের বড় একটা সমস্যা হলেও পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এএফসি কাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর তাই বলাবলি হচ্ছে, কলকাতার চেয়ে পিছিয়ে আছে ঢাকার ফুটবল। বহু বছর ধরেই কলকাতার ক্লাব আর ঢাকার ক্লাবের সাথে ফুটবল ম্যাচ হলেই চলে আসে দুই বাংলার ঐতিহ্য আর সম্মানের প্রসঙ্গ। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে ওপার বাংলার ক্লাবদের সাথে আর পেরে ওঠে না এপার বাংলার ক্লাবগুলো। যার সর্বশেষ উদাহরণ চলমান এএফসি কাপে।

২১ মে বলকাতার মোহনবাগান ক্লাবের কাছে বসুন্ধরা কিংসের হার ০-৪ গোলে। যা আসর থেকেই ছিটকে ফেলেছে বাংলাদেশি ক্লাবটিকে। বসুন্ধরা অপর ভারতীয় ক্লাব গোকুলাম কেরালাকে ২-১ গোলে হারালেও রাতে মোহনবাগান ৫-২ গোলে মালদ্বীপের মাজিয়া এফসিকে উড়িয়ে দিয়ে হয়েছে গ্রুপসেরা। বসুন্ধরা ও মোহনবাগানের পয়েন্ট সমান হলেও হেড টু হেডে ইন্টারজোন সেমিতে পৌঁছে গেছে ভারতের ক্লাবটি। 

এ নিয়ে টানা দুবার বাংলাদেশি ক্লাবটির বাধা হয়ে দাঁড়াল কলকাতার ক্লাবগুলো। শুধু বসুন্ধরা কিংসই নয়, ঢাকা আবাহনী ও মুক্তিযোদ্ধা কোনো ক্লাবই এএফসি কাপে এখন পর্যন্ত জিততে পারছে না কলকাতার ক্লাবের বিপক্ষে! এবারের এএফসি কাপের প্লে-অফে এই মোহনবাগানের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরেছিল ঢাকা আবাহনী।

২০১৭ সালেও এই আসরের গ্রুপ পর্বে দুই দলের দেখা হয়েছিল দুই দফায়। কিন্তু জয়ের দেখা পায়নি ঢাকার ক্লাবটি। কলকাতায় গিয়ে ১-৩ গোলে হার মেনে নিজেদের অবস্থানটাকে পরিষ্কার করেছে আবাহনী। আর ঢাকার ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করাও তাই পড়ে গেছে আড়ালে। গত বছর এএফসি কাপে বসুন্ধরা কিংস ও মোহনবাগানের খেলা ১-১-এ ড্র হলে অস্কার ব্রুজোনের দলকে টপকে গোল পার্থক্যে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় কলকাতার ক্লাবটি। অবশ্য ভারতের অন্য ক্লাবদের বিপক্ষে ঠিকই জয় পাচ্ছে বাংলাদেশি ক্লাবগুলো। ২০১৯ সালে আবাহনীর এএফসি কাপের গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে যাওয়া ভারতের চেন্নাইয়ান সিটি এফসি এবং মিনার্ভা পাঞ্জাবকে পরাজিত করে। ২০১৭ সালে আবাহনী ঢাকার মাটিতে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বেঙ্গালুরু এফসিকে। 

তারও আগে ২০১৫ সালে ভুটানের কিংস কাপে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব এই মোহনবাগানকে ৫-২ গোলে হারিয়েছিল। এর পর ফাইনালে মারুফুল হকের দল ১-০-তে পরাজিত করে অপর ভারতীয় ক্লাব পুনে এফসিকে। ২০১৪ সালের কলকাতার আইএফএ শিল্ডে শেখ জামাল গ্রুপ পর্বে মোহনবাগানকে ১-০ গোলে হারালেও কলকাতা মোহামেডানের কাছে ১-২ গোলে হেরে যায়। এরপর সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে ৩-০ জয় পেলেও ফাইনালে আর পেরে উঠতে পারেনি মোহামেডানের কাছে পরাজিত হয়ে। ১-১ গোলে ১২০ মিনিটের খেলা শেষ হলে টাইব্রেকারে ৩-৪ গোলে পরাজিত হয় শেখ জামাল।

এ থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেছে, এএফসি কাপে কলকাতার ক্লাবদের সাথে পেরে উঠছে না ঢাকা তথা বাংলাদেশের ক্লাবগুলো। বসুন্ধরা কিংসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বি এ যোবায়ের নিপুর কাছেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে, ‘আমরা এবার পারিনি মোহনবাগানের বিপক্ষে ম্যাচে বাজে খেলার কারণে। ডিফেন্স যেমন খারাপ খেলেছিল, তেমনি ভাগ্যও আমাদের সহায় ছিল না। ২০ মিনিটে দুই শট পোস্টে না লাগলে অন্যরকম হতে পারত ম্যাচের ফল। তাছাড়া মোহনবাগানের স্থানীয় খেলোয়াড়রা আমাদের লোকালদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে।’ 

একই সুর আবার ঢাকা আবাহনীর কোচ মারিও লেমোসেরও। তিনি মোহনবাগানের বিদেশিদের খুবই উন্নত মানের বলে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে এবারের এএফসি কাপে খেলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কলকাতার ক্লাবগুলোর বিদেশি কালেকশন আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। সামনের এএফসির আসরে ভালো করতে হলে এখন থেকেই আবাহনী, বসুন্ধরার মতো ক্লাবগুলোকে ভাবতে হবে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫