ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দল হিসেবে খেলার প্রত্যয়

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২২, ১৫:১৬

ওয়েস্ট ইন্ডিজে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনুশীলন। ছবি: বিসিবি
হারলেও শ্রীলংকার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ছিলেন মুশফিকুর রহিম। ব্যাডপ্যাচ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সমালোচনার জবাব দিতে ব্যাটকে তরবারি বানালেন। দুটি সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য বাড়ালেন আফসোস।
কারণ উইকেটিকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিক পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য ছুটি নিয়েছেন ক্যারিবীয় সফর থেকে। সে কারণে তার ব্যাটের সার্ভিস যে পাওয়া যাবে না এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে অধিনায়ক হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নবযাত্রা শুরু করেছে সাকিব আল হাসান। সে কারণে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশটিতে সাফল্য পেতে হলে বাংলাদেশকে একটি দল হিসেবে খেলতে হবে। তবে সিরিজ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সাকিব আল হাসানকে নিয়ে নাটক শেষ হয়নি।
প্রস্তুতি ম্যাচের আগে ফের ছুটি নিয়েছেন সাকিব; স্বভাবতই ছিলেন না এই ম্যাচে। এ ছাড়া সদ্য সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ প্রস্তুতি ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে হতাশা আরও বাড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সাকিবের যদিও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা, সেটি তিনি প্রথম টেস্টের আগে করেছেনও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছ থেকে আগেই কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে রেখেছিলেন সাকিব।
শ্রীলংকা সিরিজ শেষে তিনি বডি চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাকিব দেশে ফিরে আসেন। কয় দিন পর কাউকে কিছু না জানিয়ে নীরবে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে সাকিবের কিছুটা আগেই দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি ১১ জুন যোগ দেন। স্বল্প সময়ের বিরতি দিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ দল। দুই ভাগে বাংলাদেশ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেছে। ১৬ জুন সিরিজের প্রথম টেস্টে মাঠে নামবে সাকিব আল হাসানের দল।
যদিও মুশফিকুর রহিমের মতো ইনফর্ম ব্যাটসম্যানকে না পাওয়াটা দলের জন্য হতাশার ছিল। এবারের সিরিজে কেমন যেন একটা ছন্নছাড়া ভাব! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে ক্রিকেটার, কোচিং এবং সাপোর্ট স্টাফের সদস্যরা যখন কয়েকটি ভাগে দেশ ছাড়ছেন, তখন আসলে টিম বাংলাদেশকে কিছুটা ছন্নছাড়াই দেখা গেছে। তবে কিছুটা পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে বাদে ক্রিকেটের ময়দানেও এমনই ছন্নছাড়া টাইগাররা! টি-টোয়েন্টিতে আলোর যেখানে দিশা নেই, টেস্টে জুটছে একের পর এক হারের হতাশা; যা দলটাকে স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলতে দিচ্ছে না।
এমতাবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটি তাই নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েই হাজির হয়েছে টিম বাংলাদেশের সামনে। এই সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে তিন সংস্করণেই সিরিজ খেলবে তারা, প্রতিটি সংস্করণেই ভালো কিছুর আশা তাদের। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টাইগারদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স অবশ্য বেশ ভালো। বাংলাদেশের মাটিতে হোক আর প্রতিপক্ষের ডেরা কিংবা নিরপেক্ষ ভেন্যু, সব জায়গাতেই সীমিত ওভারের দুই সংস্করণে ক্যারিবীয়দের উপর ছড়ি ঘুরিয়েছে তামিম ইকবাল-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
অন্যদিকে উল্টো চিত্র টেস্টে। ২০০৯ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে তো হারানো যায়ইনি, উল্টো সাম্প্রতিক অতীতে নিজেদের ডেরায়ও টেস্টে হারতে হয়েছে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ৮ টেস্ট খেলেছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। যার মধ্যে পাঁচ হারের বিপরীতে অতিথিদের জয় দুটো, অন্যটি ড্র হয়েছে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সেই লড়াইয়ে টাইগাররা নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা আর শ্রীলংকার কাছে এই সংস্করণে নাস্তানাবুদ হওয়ার দুঃস্মৃতি নিয়ে। তবে আশার কথা বদল এসেছে নেতৃত্বে।
২০০৯ সালে যার নেতৃত্বে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের ইতিহাস রচনা করেছিল বাংলাদেশ, সেই সাকিব আল হাসানকেই দলের অধিনায়ক করা হয়েছে এবার। এখন পর্যন্ত ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ১৩ ওয়ানডে খেলে ৮টিতে এবং ৭ টি-টোয়েন্টি খেলে ৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে শেষবার যখন সেখানে গিয়েছিল টাইগাররা, তখন দুই টেস্টের সিরিজে ধবলধোলাই হলেও ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে ফিরেছিল বাংলাদেশ দল।
পুরনো ওই পরিসংখ্যানও মনে করিয়ে দিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, ‘আমরা যখন সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিলাম, আমরা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিলাম। ওই অভিজ্ঞতা মজার ছিল। যেহেতু চার বছর পর যাচ্ছি, অবশ্যই ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব সবাই।’ কাজটা যে সহজ হবে না, সেটা সবারই অনুমেয়। কারণ সেখানকার বিরুদ্ধ কন্ডিশন বড় প্রতিবন্ধকতা টাইগারদের জন্য। তবে বিরুদ্ধ কন্ডিশনেও এখন ভালো করছে তারা। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জয় আর দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ জয় সেটাই বলছে। আঙুলের চোট কাটিয়ে দলে ফেরা অলরাউন্ডার মিরাজের আশা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এবার তিন সংস্করণেই ভালো খেলবে টিম বাংলাদেশ, টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি, তিনটিতেই আশা করি ভালো ক্রিকেট খেলব। টেস্টে হয়তো সম্প্রতি ভালো করছি না। কিন্তু আমরা কামব্যাক করতে পারব।’
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের পর সেন্ট লুসিয়ায় ২৪ জুন মাঠে গড়াবে দ্বিতীয় টেস্ট। লাল বলের ক্রিকেট শেষে মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ডমিনিকায় ২ ও ৩ জুলাই প্রথম দুটি ম্যাচ মাঠে গড়াবে। গায়ানায় ৭ জুলাই শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজের সবগুলো ম্যাচই গায়ানাতে। ১০, ১৩ ও ১৬ জুলাই ম্যাচগুলো মাঠে গড়াবে। ২০১৮ সালের পর এবার আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গেলেন টাইগাররা।