প্রথম পাঁচ ম্যাচেই জয়। লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের শুরুটা হয়েছে স্বপ্নের মতো। কার্লো আনচেলত্তির দলের জয়যাত্রা একটা প্রশ্নই তুলে দিয়েছিল, রিয়ালকে থামাবে কে? প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর নিয়ে সামনে আসে অ্যাতলেটিকোর নাম। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীরা বরাবরই রিয়ালের জন্য বড় হুমকি। এবার ম্যাচটাও ছিল অ্যাতেলেতিকো মাদ্রিদের ঘরের মাঠে। কিন্তু অ্যাতলেতিকোও পারল না রিয়ালের জয়রথ থামাতে।

উল্টো নিজেদের দাপট অব্যাহত রেখে রিয়ালই করে ফেলল ছয়ে ছয়। অ্যাতলেতিকোর মাঠ মেত্রোপলিতানোতে গিয়ে আনচেলত্তির দল জিতেছে ২-১ গোলে। দুই লাতিন সৈনিক ব্রাজিলিয়ান রদ্রিগো ও উরুগুইয়ান ফেদেরিকো ভালভার্দের পা ভর করে প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। অ্যাতলেতিকো নিজেদের সান্ত্বনার গোলটা করেছে ম্যাচের শেষ দিকে। গোলটা করেছেন মারিও হারমাসো।

রিয়ালের জয়রথে লাগাম দিতে চেষ্টা কম করেনি অ্যাতলেতিকো। বরং বলা চলে চেষ্টার সীমা ছাপিয়ে অতি-চেষ্টাও করেছে। মাঠের খেলোয়াড়েরা তো বটেই, রিয়ালকে রুখে দিতে এক জোট হয়ে চেষ্টা করেছে অ্যাতলেতিকোর সমর্থকেরাও।

ম্যাচের শুরু থেকেই অ্যাতলেতিকোর সমর্থকেরা বেছে নেয় প্রতিপক্ষ রিয়ালের খেলোয়াড়দের তিতি-বিরক্ত করার কালো পথ। স্লোগান, রিয়ালের খেলোয়াড়দের লক্ষ্য করে এটা-সেটা ছুঁড়ে মারা-সবই করেছে আনচেলত্তির শিষ্যদের মনোযোগে চিড় ধরাতে।

কিন্তু উড়তে থাকা রিয়ালের খেলোয়াড়ে সেসবে বিরক্ত না হয়ে উল্টো যেন উজ্জীবিত হয়েছে। যার ফলও পেয়ে যায় ১৮ মিনিটে। দুর্দান্ত এক গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রদ্রিগো। এই গোলের পর অ্যাতলেতিকোর সমর্থকেরা বেছে নেয় আরও অন্ধকার পথ।

রদ্রিগো গোল করে স্বদেশি সতীর্থ এবং বন্ধু ভিনিসিউয়াস জুনিয়রকে নিয়ে শুরু করে নাচ। নাচটাও আবার সেই নাচ, যে নাচের মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মুখোমুখি ভিনিসিউয়াস জুনিয়র। ভিনিসিউয়াসের সঙ্গে সেই নাচের অনুকরণ করে বর্ণবাদী সমালোচনার প্রতিবাদ জানান রদ্রিগো।

এই গোলের পর অ্যাতলেতিকোর সমর্থককেরা যেন আরও তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। একে তো জয়স্বপ্নের বুকে গোল নামক শেল বিদ্ধ করা, তার উপর পিত্তে জ্বালা ধরানো ওই নাচ! দুইয়ে মিলে অ্যাতলেতিকোর সমর্থকেরা শুরু করে দেন ভিনিসিউয়াসকে নিয়ে বর্ণবাদী গান। ভিনিসিউয়াসকে লক্ষ্য করে মাঠে বোতলও ছুঁড়ে মারেন তারা।

কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। ভিনিসিউয়াস নিজে অবশ্য গোল পাননি। তবে পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছেন তিনি। কোচ আনচেলত্তির ম্যাচসেরাও তাই তিনিই। ভিনিসিউয়াস গোল না পেলেও প্রথম গোলের ঠিক ১৮ মিনিট পর আবারও গোল উদযাপনে মেতে উঠে রিয়াল। এবারের গোলদাতা উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার ভালভার্দে।

অ্যাতলেতিকো চেষ্টা করেছে অন্তত ড্র করে মহামূল্যবান একটা পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়ার। ৮৩ মিনিটে হারমাসোর গোলে ব্যবধান ২-১ করার পর সেই আশা বড়ও করেছিল অ্যাতলেতিকো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশা পূরণ হয়নি তাদের।

উল্টো হারের হতাশার সঙ্গে লালকার্ড হতাশা যুক্ত হয়েছে঳ অ্যাতলেতিকো শিবিরে। যোগ করা সময়ে অযাচিত ফাউলের সুবাদে লালকার্ড দেখে মাঠে ছাড়েন অ্যাতলেতিকোর হয়ে একমাত্র গোলটি করা মারিও হারমাসো।

দারুণ এই জয়ে ৬ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই রয়েছে রিয়াল। সমান ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা। অন্য দিকে ঘরের মাঠে হেরে অ্যাতলেতিকো পয়েন্ট তারিকার আরও নিচে নেমে গেছে। ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান এখন সাতে।