উড়ছে শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির সাফল্যের পতাকা

খলিলুর রহমান
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৫৫

বাফুফে অনূর্ধ- ১৮ ফুটবল লিগের শিরোপা জয়ী শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সদস্যরা। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
১১ বছর আগে ফুটবলের যে চারাটি লাগানো হয়েছিল, ক্রমে ক্রমে সেটি এখন ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ। যে ফুলের সুবাসের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশের ফুটবলে। বলা হচ্ছে- যশোর শহরের অদূরে হামিদপুরে অবস্থিত শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির কথা। সত্যিকার অর্থেই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই একাডেমি যেন ব্যর্থতার কানাগলি দিয়ে পেছনের পথে হাঁটা বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন আশার প্রদীপ।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শামস- উল- হুদা ফুটবল একাডেমি আর সাফল্য একে অন্যের হাত ধরাধরি করে চলছে। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের মুকুটে নতুন করে আরেকটি পালক যুক্ত হলো গত সপ্তাহে। প্রথম বারের মতো আয়োজিত বাফুফে অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল লিগের শিরোপা জিতেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। শেখ জামালের এই শিরোপা- সাফল্যের সবচেয়ে বড় ভাগিদার যশোরের শামস-উল- হুদা ফুটবল একাডেমী। চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের ২৫ সদস্যের স্কোয়াডের ২০ জনই যে এই শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমীর খেলোয়াড়।
শুধু কি তাই? টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে এক ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা জিতে নেয় শেখ জামাল। বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে গুরুত্বপর্ণ ওই ম্যাচটিতে শেখ জামালের শুরুর একাদশের ৯ জনই ছিলেন শামস-উল- হুদা ফুটবল একাডেমীর খেলোয়াড়। বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন আরও একজন।
শুধু কি শেখ জামালের এবারের এই সাফল্যের অংশীদার? ২০১৮ সালে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়েও বড় অবদান ছিল শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির। প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) প্রথমে অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল টুর্নামেন্টই আয়োজন করে। দুই বছর এই নামেই টুর্নামেন্টটি হয়; কিন্তু এবার সেই টুর্নামেন্টকেই লিগে রূপান্তর করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাফুফে অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল লিগ’। আর প্রথমবারই লিগটির শিরোপা জিতে নিল শেখ জামাল। তাদের যে সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে শামস- উল- হুদা ফুটবল একাডেমি।
শেখ জামাল বা আবাহনীর জেতা অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবলের শিরোপা জয়ের ঘটনা তো শামস- উল- হুদা ফুটবল একাডেমির সাফল্যের যাত্রার খণ্ডিত অংশমাত্র। বাফুফে আয়োজিত বয়সভিত্তিক সব টুর্নামেন্টেই নিয়মিত আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন শামস- উল- হুদা একাডেমির তরুণ খেলোয়াড়রা। এমনকি আলো ছড়াচ্ছেন দেশের শীর্ষ ফুটবল লিগ (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়েও। বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ জামালসহ ঢাকার সব বড় ক্লাবের হয়েই প্রিমিয়ার লিগসহ সব টুর্নমেন্টে খেলছেন শামস- উল- হুদা ফুটবল একাডেমীর খেলোয়াড়রা। সর্বশেষ জাতীয় দলেও ছিলেন শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির একজন। রাইট-ব্যাক মোহাম্মদ রিমন হোসেন এই একাডেমিরই খেলোয়াড়। এর আগের ঘোষিত জাতীয় দলে ছিলেন দুজন।
মোদ্দা কথা- বাংলাদেশের ফুটবলে এখন শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডে অবিচ্ছেদ্য এক নাম। খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। দেশের ফুটবলের হারিয়ে ফেলা সোনালি সময় ফিরিয়ে আনার ব্রত নিয়েই কাজ করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফুটবলকে সঠিক পথের দিশা দিতে নিরলস প্রচেষ্টায় তৈরি করে চলেছে খেলোয়াড়।
দেশের ফুটবল আবার হারানো গৌরবোজ্জ্বল সোনালি দিন ফিরে পাবে। দেশের অসহায়, দরিদ্র পরিবারের ছেলেরা বড় ফুটবলার হবে, নিজেদের ক্যারিয়ার গড়বে, দেশকে টেনে নিয়ে যাবে সামনের পথে- এমন অনেক বড় বড় স্বপ্ন নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। তিনিই একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এটি পরিচালনায় সমস্ত অর্থের জোগানও দেন তিনি।
শুধু খেলা শেখানো নয়, ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ছেলেদের পড়ালেখা করানোর গুরু দায়িত্বও পালন করে একাডেমি। খেলার পাশাপাশি সবাইকে ভর্তি করা হয় স্কুল, কলেজে। শিক্ষার সব খরচও বহন করে শামস-উল-হুদা একাডেমি। এক কথায়, শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হওয়া মানেই জীবনের নির্ভার এক ঠিকানা খুঁজে পাওয়া।