
১৯৬৬ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ববি মুরের হাতে বিশ্বকাপ তুলে দিচ্ছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ফাইল ছবি
কাতার বিশ্বকাপ মাঠে গড়াতে বেশি দিন বাকি নেই। প্রতি বিশ্বকাপের মতো কাতার বিশ্বকাপও হাজির হচ্ছে অনেক বিশেষত্ব নিয়ে। যার মধ্যে রয়েছে সদ্য প্রয়াত ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে বিশ্বকাপের সম্পৃক্ততা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ হবে পৃথিবীতে তার উপস্থিতি ছাড়াই। এ ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে। আগে সেগুলোই দেখা যাক।
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে কোনো আরব দেশে। এর আগে এশিয়াতে একবারই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০২ সালে, যৌথভাবে আয়োজন করেছিল জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ইতিহাসে ফুটবল বিশ্বকাপ হচ্ছে শীতকালে। সাধারইত মে-জুলাইয়ে বিশ্বকাপ হলেও এবার হচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। কাতারের শরীর সিদ্ধ করা তাপ থেকে বাঁচার জন্যই বিশ্বকাপটি শীতকালে আয়োজন। কাতার এর আগে কখনো বিশ্বকাপ খেলেনি।
১৯৬৩ সালে ফিফার সদস্যভুক্ত হলেও বিশ্বকাপ বাছাইয়ের বাধা কখনো পেরোতে পারেনি। কাতারিদের বিশ্বকাপে খেলার আজন্ম স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে আয়োজক হিসেবে। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ আয়োজন করা দেশগুলোর মধ্যে কাতার আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে ছোট দেশ। ১১ হাজার স্কয়ার কিলোমিটারের দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ২৬ লাখ। ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক উরুগুয়ের জনসংখ্যা ছিল ৩৫ লাখ।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে কাতারই হতে যাচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল আসর। নতুন নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ, হোটেল, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি নির্মাণে কাতারের ব্যয় হয়েছে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে কমসংখ্যক স্টেডিয়ামে হবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো।
ফাইনালসহ ৬৪টি ম্যাচ হবে মাত্র ৮টি স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোর মধ্যে দূরত্ব সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার। দর্শকরা মাত্র ৯০ মিনিটে এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যেতে পারবে। এতো কম দূরত্বের মধ্যে ভেন্যুগুলোর অবস্থান আর কখনো হয়নি। ইতিহাসের সবচেয়ে কম সময়ে এবারের বিশ্বকাপ শেষ হবে। ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর, মাত্র ২৮ দিনের মধ্যে। দর্শক আগমনেও রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে কাতার। বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাতারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫ লাখ লোকের আগমণ ঘটবে।
শীতকালে হলেও বিশ্বকাপ চলাকালে কাতারের আবহাওয়া গরমই থাকবে। তা থেকে বাঁচতে প্রতিটি স্টেডিয়াম করা হয়েছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। খেলোয়াড় ও দর্শকরা নতুন অভিজ্ঞতাই অর্জন করবে। ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক যে দূরত্ব ছিল, বিশ্বকাপের মাধ্যমে তা অনেকটাই ঘুচবে বলে আশা।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন রানী এলিজাবেথ, গত ৮ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ৯৬ বছর বয়সে। প্রথম বিশ্বকাপ হয় ১৯৩০ সালে। তখন রানী ছিলেন ৪ বছরের শিশু। বিশ্বকাপের সঙ্গে রানীর একটি দারুণ ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি বিশ্বকাপের বহু আসরে সশরীরে উপস্থিত থেকে খেলা উপভোগ করেছেন। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ উদ্বোধন করেন এবং শিরোপাজয়ী ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেন তিনি। রানী ছিলেন প্রচণ্ড ফুটবলভক্ত। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর কথাতেই ফুটে ওঠে তা, ‘বিশ্ব ফুটবল মহান অনুপ্রেরণাদাতা হারাল।’