ইতিহাসের আলোয় বিশ্বকাপ ফুটবল
বিশ্বকাপ ১৯৫০: উরুগুয়ের দ্বিতীয় শিরোপা জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ২২:০২

ছবি: সংগৃহীত
১৯৩৮ সালের আসরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। যুদ্ধ লেগে যাওয়ার কারণে ১৯৮২ ও ১৮৪৬ সালের আসর অনুষ্ঠিত হয়নি। সময়ের হিসেবে এক যুগ পর আবারো বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর শুরু হয়। সাম্বা নৃত্যের দেশ ব্রাজিলে প্রথমবারের মতো বসে চতুর্থ আসর।
আলোচিত অনেক কারণের পাশাপাশি চতুর্থ আসরে এসে স্বাগতিক দলের শিরোপা জিততে না পারার ঘটনাটি সবাইকে অবাক করে দেয়। এই আসরেও মান অভিমান পর্ব চলমান থাকে। ফুটবলের জনক হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ড অংশ নিলেও ইউরোপের বাকি দেশগুলো ছিল অনুপস্থিত। সে কারণে দল সংখ্যা না বেড়ে নেমে আসে ১৩টিতে। যার মধ্যে তুরস্ক ও স্কটল্যান্ড বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়েও পরে নাম প্রত্যাহার করে নেয়। আর এই সুযোগে বাদ পড়া ফ্রান্স খেলবে বলে কথা দিয়েও পরে আর আসেনি। অযুহাত হিসেবে দাড় করায়, প্রস্তুতির অপ্রতুলতা ও এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যেতে অনেক সময় লাগার বিষয়টি। তবে প্রথমবারের মতো ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু খেলোয়াড়রা খালি পায়ে খেলতে পারবেন না বলে পরে আর খেলা হয়ে ওঠেনি। এরপর আর সুযোগ পায়নি তারা।
ল্যাটিন আমেরিকার আরেক দেশ আর্জেন্টিনা তো ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের সাথে তর্কে জড়িয়ে বাছাইপর্ব খেলেনি। তবে মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হয়েও বিশ্বকাপে খেলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালি। ১৯৪৯ সালের মে মাসে বিমান দুর্ঘটনায় তুরিনো ক্লাবের যে ১৭ জন ফুটবলার মারা যায় সেখানে দেশটির জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিলেন ৮ জন। তবুও কথা দিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে এসেও সুইডেন ও প্যারাগুয়ের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। অভিষেক বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের জো গেটজেন্সের দেয়া একমাত্র গোলে পরাজিত হয়ে নাক উঁচু করা ইংল্যান্ড বিদায় নেয়। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়া জার্মানি ও জাপানকে বাছাইপর্বই খেলতে দেয় ফিফা। যদিও আলোচিত আসরের ফাইনালে বলার মতো কিছু ছিল না। ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জয় করে উরুগুয়ে।
প্রথমবারের মতো ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হলেও ছিল না আনুষ্ঠানিক ফাইনাল ম্যাচ। উরুগুয়ে আর ব্রাজিলের শেষ ম্যাচটি তাই পরিণত হয় শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ হিসেবে। যে দল জিতবে তার হাতেই উঠবে শিরোপা, এমন সমীকরণের ম্যাচে ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামের হতাশ হতে হয় দর্শকদের। রাজধানী রিও ডি জেনিরোর ঐতিহ্যবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামে প্রথম শিরোপা উল্লাসের সঙ্গী হতে হাজির হয়েছিলেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৪ জন দর্শক। ফুটবল ইতিহাসে এত দর্শক সমাগমের ম্যাচ আর দেখা যায়নি। ব্রাজিলের যেখানে ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল, সেখানে ভিক্টোরি সংও তৈরি করা হয়েছিল। শিরোপা জিততে না পারায় এতটাই হতাশ হয়ে যায় ব্রাজিল, চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের হাতে শিরোপা তুলে দেবার কথাটিও বেলালুম ভুলে যায়। পরে ফিফা সভাপতি জুলে রিমে ট্রফি তুলে দেন। এখনো মারাকানার কান্নার আওয়াজ শুনতে চান ফুটবলপ্রিয়রা।
এক নজরে চতুর্থ আসর
স্বাগতিক : ব্রাজিল
চ্যাম্পিয়ন : উরুগুয়ে (দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়)
রানার্সআপ : ব্রাজিল
সময়কাল : ২৪ জুন-১৬ জুলাই ১৯৫০
অংশগ্রহণকারী দলসমুহ : চার গ্রুপে মোট ১৩টি দল (ব্রাজিল, যুগোস্লাভিয়া, মেক্সিকো, স্পেন, ইংল্যান্ড, চিলি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, ইতালি. প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে ও বলিভিয়া)
মোট ভেন্যু : ৬টি (৬ শহরে)
মোট ম্যাচ : ২২ টি
মোট গোল : ৮৮ টি (ম্যাচ প্রতি ৪.০০)
সর্বোচ্চ গোলদাতা : আদিমির (ব্রাজিল) ৮টি
মোট দর্শক উপস্থিতি : ১০৪৩০০ (ম্যাচ প্রতি গড়ে ৪৭৪৩২)