সারা দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীরাই এখন একই রোগে আক্রান্ত- সবার গায়েই ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ উন্মাদনার জ্বর। তবে এই জ্বর কাউকেই লেপ-কম্বলের নিচে টেনে নিচ্ছে না; উল্টো রোমাঞ্চের বুদবুদ তুলে শরীর-মনকে আরও চাঙ্গা করছে! বিতর্কের ঝড় তুলতে বসিয়ে দিচ্ছে চায়ের আড্ডায়, গবেষণার টেবিলে।

কাতারে কোন দল বিশ্বকাপ জিতবে, কোন দল কত দূর যাবে, কোন কোন খেলোয়াড় আলো ছড়াবেন, কে সোনার বল, সোনার জুতা, সোনার গ্লাভস জিতবেন- সেসব নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে নিজের অমিয় ফুটবল পাণ্ডিত্য জাহির করতে হবে তো!

সেই পাণ্ডিত্য জাহিরপর্বে আলোচনাটা বেশি হচ্ছে তারকা ফুটবলারদের নিয়ে। প্রতিভা, সামর্থ্য, দক্ষতা, কারিশমায় কারা কাতার মাতাবেন, তা নিয়ে দর্শক সমাজে তর্ক-বিতর্কের অন্ত নেই! আর নিশ্চিতভাবেই এই আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারণ হচ্ছে লিওনেল মেসি, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নাম।

সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ‘বড় তারকা’ আরও অনেকেই আছেন। যেমন- করিম বেনজেমা, বরার্ট লেভানডভস্কি, কেভিন ডি ব্রুইনা, হ্যারি কেন, সাদিও মানে, ভিনিসিউয়াস জুনিয়ররা; কিন্তু তর্ক-বিতর্কের টেবিলে সবার ওপরে ওই ৪ জনই- মেসি, রোনালদো, নেইমার ও এমবাপ্পে।

কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে এই ৪ তারকা যেন দুই ধারায় বিভক্ত! সেটাও দুই দিক থেকে। মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে- এই তিনজনই ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে খেলেন। রোনালদোর ঠিকানা ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। মানে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে একই ধারায়, তাদের মধ্যে আরও একটি বড় মিলও আছে। কাতার মহাযজ্ঞের আগে তিনজনই ফর্মে উড়ছেন, তিনজনই রয়েছেন খোশ মেজাজে।

অন্যদিকে ম্যানইউর পর্তুগিজ তারকা রোনালদোর অবস্থানটা এর উল্টো মেরুতে। একে তো ফর্মটা ভালো যাচ্ছে না। তার ওপর বিশ্বকাপের দরজায় দাঁড়িয়ে এক মহাবির্তকের ঘেরাটোপে বন্দি রোনালদো। ক্লাব ম্যানইউ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, কোচ টেন হাগের প্রতি তার কোনো সম্মান নেই- এসব বলে ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো নিজেই নিজেকে বিতর্কের চাদরে মুড়িয়ে নিয়েছেন। বোমা ফাটিয়ে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, ম্যানইউতে তিনি বড় অসুখী!

তার ফর্মে ভাটার টানটা স্পষ্ট। মৌসুমে সব মিলে এ পর্যন্ত ১৬ ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র ৩ গোল! পর্তুগাল জাতীয় দলের জার্সিতেও একই অবস্থা, ২০২২ সালে জাতীয় দলের হয়ে ৭ ম্যাচে করেছেন মাত্র ২ গোল। এসব পরিসংখ্যান রোনালদোর নামের সঙ্গে বড় বেশি বেমানান। তার ওপর মনের ভেতর জ্বলছে অশান্তির আগুন।

এমনও শোনা যাচ্ছে- রোনালদোকে হয়তো বিশ্বকাপে নামতে হতে পারে ক্লাব ছাড়া হয়ে! বোমা ফাটানোর জেরে ক্লাব ম্যানইউও তাকে ছেড়ে দিতে পারে, অথবা রোনালদো নিজেই চুক্তি ভেঙে দিতে পারেন! এমন অশান্ত মন নিয়ে রোনালদো কীভাবে বিশ্বমঞ্চে নিজেকে মেলে ধরবেন- প্রশ্নটা থাকছেই। তবে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি রোনালদোভক্ত আশাবাদী- সব বিতর্ক মাটিচাপা দিয়ে রোনালদো ঠিকই কাতারে জ্বলে উঠে নিজের শেষ বিশ্বকাপটা তার রঙে রাঙাবেন।

রোনালদোর ঠিক উল্টো স্রোতে পিএসজির তিন সতীর্থ- মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে। ক্লাব পিএসজির হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মৌসুমে এ পর্যন্ত ১৯ ম্যাচ খেলে ১২ গোল করেছেন মেসি। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ২০২২ সালে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলে করেছেন ১০ গোল। নেইমার ক্লাবের জার্সিতে মৌসুমে ২০ ম্যাচে করেছেন ১৫ গোল, ব্রাজিলের জার্সি গায়ে ৫ ম্যাচে ৫ গোল। এমবাপ্পে ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে এ বছরে ৬ ম্যাচে করেছেন ৪ গোল, ক্লাব পিএসজির হয়ে মৌসুমে ২০ ম্যাচে করেছেন ১৯ গোল।

এই পরিসংখ্যান স্পষ্টই বলছে, উড়ছেন তারা; শরীর-মনও তাদের চাঙ্গা।  আর শরীর-মন ভালো থাকলে মাঠে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পেরা কী করতে পারেন, সেটি তো জানাই। রোনালদোরও সামর্থ্য আছে বিতর্ককে শক্তিতে রূপান্তর করে স্বরূপে জ্বলে ওঠার। বিশ্ববাসী কিন্তু তাদের চারজনেরই পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায়।