
ম্যাসকট লা’ইব। ফাইল ছবি
ম্যাসকট লা’ইব
বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু থেকেই মে, জুন আর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হলেও এবার প্রথা ভেঙে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কাতার বিশ্বকাপের ম্যাসকট প্রকাশ করেছে ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা)। রাজধানী দোহাতে আয়োজিত ২০২২ বিশ্বকাপ ড্রয়ের অনুষ্ঠানে ম্যাসকটকে প্রকাশ্যে আনা হয়।
ম্যাসকটের নাম রাখা হয়েছে লা’ইব। আরবি ভাষায় যার অর্থ- ‘অত্যন্ত দক্ষ খেলোয়াড়’ বা ‘বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন খেলোয়াড়’। আয়োজকদের বক্তব্য অনুযায়ী কাতার বিশ্বকাপের ম্যাসকট লা’ইব নিজেদের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস করতে শেখায় মানুষকে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে কমিউনিকেশন ও টুর্নামেন্ট এক্সপেরিয়েন্স কমিটির ডেপুটি সেক্রেটারি খালিদ আলি আল মাওলালোয়াই বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বে অনুষ্ঠিত হতে চলা প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপের ম্যাসকট হিসেবে লা’ইবের নাম প্রকাশ করতে পেরে আমরা দারুণ আনন্দিত। লা’ইব একটি সমান্তরাল ম্যাসকটভার্সের বাসিন্দা। ম্যাসকটভার্স এমন একটা দুনিয়া, যা বর্ণনা করা যায় না। আমরা সবাইকে কল্পনার দুনিয়ায় পাড়ি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বল- আল রিহলা
টি মেডেল থেকে টেলেস্টার হয়ে এবার আল রিহলা। বিশ্বকাপ ফুটবলে বলের গল্পটা এভাবেই জানতে পেরেছে খেলাটিকে ভালোবাসা মানুষ। কাতার বিশ্বকাপের জন্য অ্যাডিডাসের তৈরি করা বলের নাম আল রিহলা। আরবি ভাষায় ভ্রমণ বোঝানো আল রিহলা নামের এই বল কাতারের সংস্কৃতি, স্থাপনা, ঐতিহ্যবাহী নৌকা ও পতাকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে। ফিফা দাবি করেছে, বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাতাসে সবচেয়ে দ্রুতগতির বল হবে এটি।
ম্যাচের গতি আরও বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই বলটির নকশা এভাবে তৈরি করা হয়েছে। বলটির নকশা পরিচালক ফ্রাঞ্জিস্কা লোফেলমানের ভাষায়- ‘ফুটবল এখন দিন দিন আরও গতিময় হচ্ছে। আর গতি যত বাড়ছে, বলের নিখুঁত থাকা এবং বাতাসে ঠিক থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। নতুন এই নকশার কারণে বলটা বাতাসে ভাসার সময় আগের চেয়ে বেশ গতিসম্পন্ন হবে বলেই এভাবে তৈরি করা হয়েছে।’
বলের ওপরের দিকের চামড়ার গুণগত মান ও প্যানেল আকৃতির কারণে খেলার দিক থেকে আল রিহলা পুরোপুরি নিখুঁত ও ভরসা করার মতো বল হবে বলেই জানিয়েছে ফিফা। বলের জ্বলজ্বলে রং আসলে বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ কাতার এবং দিন দিন বাড়তে থাকা খেলার গতিকে বোঝাতেই ব্যবহার করা হয়েছে। ইকার ক্যাসিয়াস, কাকা, ফারাহ জেফরি ও নউফ আল আনজির মতো কিংবদন্তিরা প্রথমে বলটি জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। এর পর আল রিহলা বিশ্বজুড়ে ১০টি শহরে প্রদক্ষিণ করে। এখন শুরু মাঠের লড়াইয়ের। এ ছাড়া লিওনেল মেসি ও সন হিউং মিনের উপস্থিতিতে এডিডাসের প্রস্তুত করা বল ‘আল রিহলা’র কথা জানিয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। এ নিয়ে টানা ১৪ আসরে ফিফা বিশ্বকাপের বল প্রস্তুত করল এডিডাস।
এই বলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- সিআরটি কোর এবং স্পিডশেল। সিআরটি কোরটিকে মূলত বলের হৃৎপিণ্ড হিসেবে বলা হয়ে থাকে। এখান থেকেই গতি, নির্ভুলতা এবং ধারাবাহিকতা সঞ্চার ঘটবে। এই সিআরটি কোরের কারণে বাতাসের সঞ্চালনও থাকবে যথাযথ। পাশাপাশি আল রিহলাই ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম বল, যেটি পুরোটা প্রস্তুত করা হয়েছে জলভিত্তিক কালি ও আঠার সমন্বয়ে।
থিম সং- হায়া হায়া
থিম সং হিসেবে হায়া হায়া সামনে আসতেই আলোড়ন উঠে যায়। ফিফা অনবদ্য এই থিম সং প্রকাশ করার পর থেকেই ঝড় বইছে ফুটবল বিশ্বে। কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল থিম সং ‘হায়া হায়া (একসঙ্গে ভালো)’। হৈ চৈ ফেলে দেওয়া এই জিঙ্গলসে দেখা যায় ত্রিনিদাদ কর্ডোনা, দাবিদো এবং আইশাকে। এই প্রথমবার ফিফা বিশ্বকাপের অফিসিয়াল থিম সং একাধিক গানকে মিলিয়ে-মিশিয়ে বানানো হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা একাধিক সুরের মিউজিককে একসূত্রে গেঁথে জিঙ্গলস বানিয়েছেন। ফুটবল এবং সুরকে একই র্যাকেটে রেখে শিল্পী, খেলার দুনিয়া, মিউজিক উৎসাহী সবাইকে একসঙ্গে ধরে রাখতে উদ্যোগী হয়েছে ফিফা। বিশ্বকাপ ড্রয়ের মঞ্চে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এই থিম সংয়ের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিনিদাদ কর্ডোনা, আফ্রো বিটস আইকন দাবিদো এবং কাতারের প্রখ্যাত মিউজিশিয়ান আইশা একসঙ্গে ভিডিওতে ধরা দিয়েছেন। এ বিষয়ে ফিফার প্রধান কমার্শিয়াল অফিসিয়ালকে মাদাতি জানিয়েছেন, ‘কাতার বিশ্বকাপের জন্য আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রখ্যাত সুরকার এবং গায়কদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে বোঝানো হয়েছে ফুটবল এবং মিউজিক গোটা বিশ্বকে একসূত্রে বাঁধতে পারে। বিশ্বকাপের আগে ফিফা নিজস্ব অফিসিয়াল টিকটক চ্যানেল লঞ্চ করেছে। সেই চ্যানেলেও রিলিজ করা হয়েছে এই থিম সং। ইতোমধ্যে যা ভাইরাল হয়েছে। বিশ্বকাপের গনগনে উন্মাদনা গায়ে মেখে এই থিম সং আরও কতটা আলোড়ন তুলতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।