
ডেনমার্ক ফুটবল দল
পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে থেকে তিউনিয়শিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামছে ডেনমার্ক। ইউরোপের দলের লড়াইয়ের সাথে মোকাবেলা করবে আফ্রিকার প্রতিনিধিরা। এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৭ টায়। গ্রুপ ডিতে মোকাবেলা করবে একে অপরের সাথে। সাফল্যের বিচারে এবারের ডেনিশ দলটি অন্যান্য যে কোনো বারের তুলনায় কিছুটা হলেও ভিন্ন। এর একমাত্র কারণ ইতিহাসে অন্যতম বড় একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে দলটির মধ্যে একাত্মতা আরো শক্তিশালী হয়েছে।
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে মাঠের ভেতরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে আসা ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের জন্যই শুধু নয়, এ যেন পুরো দলের জন্যই নতুন জীবন ফিরে পাওয়া। কাতারে খেলতে এসেও ডেনমার্কের পুরো আকর্ষণই কেড়ে নিয়েছেন এরিকসেন। ওই ঘটনা শুধু ডেনমার্ককে নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল। বিশ্বকাপের দলেও শেষ মুহূর্তে ইনজুরি থেকে ফিরে জায়গা করে নিয়েছেন এরিকসেন।
গত বছর ইউরোপিয়ান আসরের প্রথম ম্যাচেই সতীর্থকে মাঠে গড়িয়ে পড়তে দেখে পুরো দল মুষড়ে পড়েছিল। কিন্তু তার পরও সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে ম্যাচটি শেষ করার পাশাপাশি যেভাবে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলেছিল তাতে তাদের দৃঢ়তার প্রশংসা ছিল সর্বত্র। আকস্মিক এই ঘটনায় পুরো দল যেন এক হয়ে শুধু এরিকসেনের জন্যই খেলেছে। ২০২২ সালেও সেই যাত্রা অব্যাহত রেখে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে একটি ম্যাচ ছাড়া বাকি সব কটিতে জিতেছে ডেনমার্ক। নেশন্স লিগে শক্তিশালী ফ্রান্সকে দুবার পরাজিত করেছে। কোচ কাসপার হালমান্ড বলেছেন, ‘বড় কিছুর আশা নিয়ে কাতারে এসেছি আমরা। শুধু ইউরোতে নয়, ২০২১ সালে অনেক কিছুই ঘটেছে। এসময় আমরা ১৮টি ম্যাচ খেলেছি, সবগুলোতে আমরা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছি। বাছাইপর্বের যাত্রাটাও ছিল অসাধারণ, ইউরোর ফল বাড়তি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’ অধিনায়ক সিমন কায়ের, গোলরক্ষক কাসপার সিমিচেলসহ কোচ হালমান্ড এরিকসেনকে ছাড়া যেভাবে জাতীয় দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাতে যেকোনো স্কোয়াডই অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে পারে।
আর এতেই উজ্জীবিত হয়ে এরিকসেনও নিজেকে ধীরে ধীরে ক্লাব ও জাতীয় দলে ফিরিয়ে এনেছেন। ফিফা র্যাংকিংয়ে অবশ্য জার্মানিরও ওপরে ডেনমার্ক। বাছাইয়ের দুর্দান্ত রেকর্ড এবং নেশনস লিগে দুইবার ফ্রান্সকে হারানোর সুখস্মৃতি নিয়ে ড্যানিশরা খেলছে বিশ্বকাপে। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে খেলা একঝাঁক অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবান খেলোয়াড় নিয়ে গড়া দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দল ডেনমার্ক। দলীয় শক্তি, অতীত, ঐতিহ্য, সব মিলিয়ে পরিষ্কার ফেভারিট হয়েই আজ তিউনিশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে ক্যাস্পার হুলমান্ডের দল। বিশ্বকাপে এর আগে তাদের সেরা সাফল্য শেষ আটে খেলা। এবার স্বপ্নটা শিরোপা পর্যন্ত প্রসারিত ড্যানিশদের। এই স্বপ্ন পূরণের সামর্থ্য এই দলের আছে বলেও বিশ্বাস কোচ হুলমান্ডের, ‘বড় স্বপ্ন আছে এবার। আমরা সব কিছুই জিততে চাই। এই খেলোয়াড়দের জেতার সামর্থ্যও আছে। ’
ডেনমার্ক কোচ সাথে যোগ করেন, ‘পরিসংখ্যানের বিচারে আমরা কি ফেভারিট? না। কিন্তু নিজেদের দিনে আমরা যে কাউকে হারাতে পারি। এ নিয়ে আমরা দারুণ আত্মপ্রত্যয়ী। একসাথে খেলা আমাদের ভালো কিছু খেলোয়াড় আছে। আর সব কিছু জিততে হলে স্বপ্নও বড় হওয়া চাই।’ বড় স্বপ্ন আছে অবশ্য তিউনিশিয়ারও! প্রথমবার খেলতে চায় তারা নক আউটে। এ লক্ষ্য অর্জনে ড্যানিশদের বিপক্ষে ইতিবাচক শুরুর প্রত্যাশায় তিউনিশিয়া কোচ জালাল কাদরি। তবে বাস্তবতা যে বড্ড কঠিন সেটাও মানছেন তিনি, ‘আমাদের গ্রুপটা মোটেও সহজ নয়। ড্রটা আমাদের জন্য ভালো হয়নি। ইউরোপের অন্যতম সেরা দল ডেনমার্ক। আমরা জানি প্রতিটি বিভাগে ওদের ভালো মানের খেলোয়াড় আছে। তবে আমরাও সর্বোচ্চটা নিংড়ে দেব।’
এদিকে আশাবাদী ডেনমার্ক লিগে খেলা ফরোয়ার্ড ইসাম জেবিলিও, ‘দল যেভাবে খেলছে তাতে করে ভালো কিছুর প্রত্যাশা আছে এবার। ডেনমার্ক কিভাবে খেলে এমনকি তাদের চিন্তা-চেতনা সম্পর্কেও আমরা জানি। আমাদের ভালো সুযোগ আছে। আমাদের একে অন্যের ওপর বিশ্বাসও আছে।’