প্রথম জয়ের খোঁজে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ সোমবার (২৮ নভেম্বর) মাঠে নামতে যাচ্ছে এশিয়ার অন্যতম সেরা দক্ষিণ কোরিয়া ও আফ্রিকার শক্তিধর ঘানা। আজ সন্ধ্যা ৭ টায় এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দল দুটি। দুই দলই এবারের আসরের প্রথম জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ঘানা বনাম দক্ষিণ কোরিয়ার ১০ম ম্যাচ। এর মধ্যে শেষ ছয়টি ম্যাচে উভয় দল তিনটি করে জয় পেয়েছে। 

সর্বশেষ ২০১৪ সালের প্রীতি ম্যাচে ঘানা ৪-০ গোলের উড়ন্ত জয় পেয়েছিল। প্রথম ম্যাচে দারুণ লড়াইয়ের পর পর্তুগালের সাথে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি ব্ল্যাক স্টার্স ঘানা, ৩-২ গোলের পরাজয় বরণ করে তাদের মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। অন্য দিকে গ্রুপের আরেক জায়ান্ট উরুগুয়ের সাথে গোলশূন্য ড্র করে এক পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। উরুগুয়ের বিপক্ষে উজ্জীবিত দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে সমান তালে লড়াই করেছে তাতে তাদেরকে সমীহ করেই খেলতে হবে ঘানাকে। যদিও উরুগুয়ের দু’টি শট ক্রসবারে লেগে ফেরত না এলে ম্যাচের ফলাফল হয়তো ভিন্ন হতে পারত। সেটা হওয়ার হতাশা আজকে কাটাতে পারবে কোরিয়ার দলটি।

ওই ম্যাচে ফেডেরিকো ভালভার্দের পর দিয়েগো গোডিনের শট পোস্টে লাগলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি উরুগুয়ের। পুরো ম্যাচে কোচ পাওলার বেনটোর দল যেভাবে উরুগুয়েকে একের পর এক প্রতিহত করেছে তাতে রক্ষণভাগের শক্তিমত্তা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সামনে এখন সুযোগ ঘানার বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মতো নক আউট পর্বের পথে এক পা দিয়ে রাখার। গত চারটি ম্যাচের তিনটিতে একটি গোলও হজম করেনি। আর এর পেছনে রক্ষণভাগের কাণ্ডারি কিম মিন-জায়ের প্রশংসা করতেই হয়। রক্ষণভাগের শক্তিমত্তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হলেও আক্রমণভাগ নিয়ে মোটেই খুশি হতে পারছে না কোরিয়ানরা। উরুগুয়ের বিরুদ্ধে পুরো ম্যাচে টার্গেটে একটি শটও তারা নিতে পারেনি। বিপরীতে ঘানা কিন্তু পর্তুগালকে ছেড়ে কথা বলেনি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রেকর্ড গোলের পর হুয়াও ফেলিক্স ও রাফায়েল লিয়াওয়ের গোলে পর্তুগালের জয় নিশ্চিত হয়।

এর আগে প্রথম ম্যাচে পর্তুগালের কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করেছে ঘানা। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আফ্রিকান দলটির প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া। এশিয়ান জায়ান্টদের হারিয়ে ‘এইচ’ গ্রুপের দুইয়ে উঠে আসতে চান ঘানার কোচ অটো অ্যাডো। তবে কোরিয়ানরা জানে কিভাবে ঘানাকে হারাতে হবে। 

দক্ষিণ কোরিয়ার মিডফিল্ডার জিয়ং ও-ইয়ং জানালেন, পার্থক্য থাকলেও প্রতিপক্ষের দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিতে চান তারা। আজ গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ কোরিয়া ও ঘানা। উরুগুয়ে-কোরিয়া ম্যাচ ড্র হওয়ায় নিজেদের সুযোগ দেখছেন ঘানা কোচ অটো অ্যাডো। দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে ঘানা কোচ বলেন, ‘মানের বিচারে নয়, মাঠে যারা ভাল খেলবে তারাই জয় নিয়ে ফিরতে পারবে। প্রথমত, নিশ্চিতভাবে আমাদের (দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার) সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া-উরুগুয়ে ম্যাচটি ড্র হওয়ায়।’

ঘানাকে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ‘এইচ’ গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে পর্তুগাল। ১ পয়েন্ট নিয়ে দুই ও তিন নম্বরে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া ও উরুগুয়ে। পয়েন্ট শূন্য ঘানা রয়েছে টেবিলের তলানিতে। আজ ঘানা যদি দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে দেয় তবে তাদের পয়েন্ট হবে ৩। কোরিয়ার পয়েন্ট ১ থাকবে। রাত ১টায় উরুগুয়ের মুখোমুখি হবে পর্তুগাল। সেই ম্যাচে যদি উরুগুয়েকে পর্তুগাল হারিয়ে দেয়, তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের পয়েন্ট হবে ৬। উরুগুয়ের পয়েন্ট ১ থেকে যাবে। অর্থাৎ, পয়েন্ট টেবিলের তলানি থেকে দুইয়ে উঠে যাবে ঘানা। 

ঘানা কোচ অটো অ্যাডো বলেন, ‘অনেক সমীকরণের ম্যাচ এটা। আমরা যদি দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাতে পারি এবং পর্তুগাল যদি উরুগুয়েকে হারায়, তখন আমরা (পয়েন্ট টেবিলে) দ্বিতীয় হয়ে যাব। আমাদের বিরাট সুযোগ রয়েছে।’ অটো অ্যাডো বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়াকে হারানো সহজ হবে না। কিন্তু আমাদের এখন জিততেই হবে। আমরা চাপে রয়েছি। তারাও রয়েছে।’

আফ্রিকার দেশ ঘানার রক্ষণের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের তিন গোলের পেছনে দোষ ছিল ঘানার ডিফেন্ডারদেরও। ৬৫তম মিনিটে নিজেদের ডি-বক্সে রোনালদোকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন ঘানার ডিফেন্ডার মোহাম্মদ সালিসু। ৭৮তম মিনিটে সালিসুর ভুলেই দ্বিতীয় গোল পায় পর্তুগাল। ৮০তম মিনিটে জয়সূচক গোলটি পায় পর্তুগিজরা। সেখানেও ভুল ছিল ঘানার ডিফেন্সের। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিতে চান দক্ষিণ কোরিয়ার মিডফিল্ডার জিয়ং ও-ইয়ং।

তিনি বলেন, ‘আজকের ম্যাচে সেরাটা দেবার লক্ষ্য আমাদের। যদি তাদের রক্ষণের দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারি, আমরা বেশ সুবিধা করতে পারবো।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে পর্তুগালের বিপক্ষে দল হিসেবে তারা ভালো করতে পারেনি। আমরা প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে ভালো খেলেছি। ঘানার বিপক্ষেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করবো।’ দক্ষিণ কোরিয়ার আরেক মিডফিল্ডার সং মিন-কিইউ’র কণ্ঠেও একই সুর। ঘানার রক্ষণের দুর্বলতার সুযোগ নেয়ার কথা বললেন তিনি। ঘানার বিপক্ষে ফেভারিট হয়েই মাঠে নামবে দক্ষিণ কোরিয়া। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২৮তম দল কোরিয়ানরা। ৩৩ ধাপ পিছিয়ে ঘানার অবস্থান ৬১তম। দক্ষিণ কোরিয়ার নেতৃত্বে থাকবেন সন হিউং-মিনের মতো তারকা খেলোয়াড়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ফরোয়ার্ড একাই ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন ম্যাচে।  সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে সাউথ কোরিয়ার চেয়ে কিঞ্চিৎ এগিয়ে ঘানা। নিজেদের সবশেষ ৫ ম্যাচের তিনটি জিতেছে আফ্রিকান দলটি। নিজেদের সবশেষ ৫ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার জয় ২টি।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে মোট ৯ বার দেখা হয়েছে ঘানা ও দক্ষিণ কোরিয়ার। দুই দলই সমান ৪টি করে জিতেছে। একটি ম্যাচ ড্র হয়। সবশেষ ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয় ঘানা ও কোরিয়া। সেই ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-০ গোলে হারায় ঘানা। কাতারের আগে মাত্র তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছে ঘানা। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ অভিষেক হওয়া দলটির সর্বোচ্চ সাফল্য আসে ২০১০ আসরে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল ঘানা। ১৯৮৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের ৯টি আসরের সবকটি খেলেছে দক্ষিণ কোরিয়া। ২০০২ সালে সেরা সাফল্য পায় স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়া। সেবার সেমিফাইনাল খেলেছিল দলটি। আজকের ম্যাচে কি হয় সেটাই দেখার বিষয়। সুযোগটা নিশ্চয়ই কোরিয়ার জন্য বেশি।