তিউনিশিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় জয়ের লক্ষ্য ফ্রান্সের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৫:২২

ছবি: সংগৃহীত
সব ধরনের অনিশ্চয়তাকে পেছনে ফেলে এবারের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে ফ্রান্স। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলটি দারুণ ফুটবল খেলছে। প্রথম দল হিসেবে এক ম্যাচ হাতে রেখে ইতোমধ্যে কাতার বিশ্বকাপের নক-আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে দিদিয়ের দেশমের শীষ্যরা।
যে কারণে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ-ডির শেষ ম্যাচটি ফ্রান্সের জন্য শুধুই নিয়মরক্ষার ম্যাচে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি এক পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থাকা তিউনিসিয়ার জন্য অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। সামান্য কিছু আশা বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে তাদের উড়তে থাকা ফ্রান্সকে মাটিতে নামাতে হবে। যদিও ইতোমধ্যে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করা ফ্রান্সও যেহেতু নির্ভার হয়েই মাঠে নামবে, তাই তারাও ছেড়ে কথা বলবে না। বিশ্বকাপ শুরুর আগ থেকে ইনজুরি ও প্রাক-টুর্নামেন্ট ফর্মহীনতায় ফ্রান্সের শিরোপা ধরে রাখার মিশন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল; কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচেই ফরাসিরা তাদের আগমন জানান দিয় ফেলেছে।
সুপারস্টার ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পের জোড়া গোলে ডেনমার্কের বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নিয়ে নক-আউট পর্বে গেছে ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বে বিজয়ী হতে হুগো লরিসের দলটি এখন শেষ ম্যাচে এক পয়েন্ট হলেই চলবে। এ নিয়ে বিশ্বকাপে টানা ছয় ম্যাচে জয় নিশ্চিত করেছে ফরাসিরা। আজ জিততে পারলে ইতালির সাথে সাত ম্যাচ জয়ের দ্বিতীয় সেরা রেকর্ড স্পর্শ করবে। ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল ব্রাজিল টানা ১১ ম্যাচে জয়ী হয়ে এখনো শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছে। ২০১০ সালের পর এই প্রথম তিউনিসিয়ার মোকাবেলা করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। ওই প্রীতি ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। ফ্রান্স শিবিরে একাধিক পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। নক-আউট পর্বের জন্য মূল দলের অনেককেই বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বড় ভাই লুকাস হার্নান্দেজ গুরুতর লিগামেন্ট ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ায় এই মুহূর্তে দলে একমাত্র স্বীকৃত লেফট-ব্যাক হিসেকে টিকে আছেন থিও হার্নান্দেজ। এসি মিলান ডিফেন্ডার এডুয়ার্ডো কামাভিনগাকে এখনো মাঠে নামাননি দেশম। এমবাপ্পে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিশ্রাম নিতে চাননা, তবে দেশমের হাতে এমবাপ্পের জায়গায় উইলিয়াম সালিবা, মাত্তেও গুয়েনডুজি, কিংসলে কোম্যান ও ইউসুফ ফোফানা রয়ে গেছেন। এমবাপ্পে এখন ৩ গোল করে ইকুয়েডরের ভ্যালেন্সিয়ার সাথে যৌথভাবে গোলদাতার শীর্ষে রয়েছেন। তবে ইনজুরিতে জর্জরিত ফ্রান্স দলটি যেভাবে এবার খেলছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। কোচ দেশম তো বলেই দিয়েছেন, তার দলটি ৪০ শতাংশ শক্তির। এর পরও এই দলটি খেলোয়াড়রা পল পগবা, করিম বেনজেমা, এনগোলা কান্তেদের অভাব বুঝতে দিচ্ছে না। আজকের ম্যাচেও অবশ্যই জিততে চাইবে দেশমের দল। তবে এতটুকু বলা যায়, ম্যাচটি বেশ উপভোগ্যই হবে।
যদিও এবারের বিশ্বকাপে এখনো কোনো গোলের দেখা পায়নি আফ্রিকার দলটি। শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কায় রয়েছে তিউনিসিয়া। এর আগে প্রথম ম্যাচে ডেনমার্ককে গোলশূন্যভাবে রুখে দিয়ে এক পয়েন্ট অর্জন করেছিল তারা। মিশেল ডিউকের ২৩ মিনিটে হেডে সকারুজদের জয় নিশ্চিত হয়। আর এতেই প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়া দারুণ জয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান মজবুত করে। জালেল কাদরির দল যদি ফ্রান্সকে হতবাক করে দিয়ে তিন পয়েন্ট অর্জনও করে, তবু নক-আউট পর্ব নিশ্চিত হবে না। কারণ পরের ম্যাচে ডেনমার্ককে হারাতে পারলে অস্ট্রেলিয়ান পরের রাউন্ড নিশ্চিত হবে। তবে অস্ট্রেলিয়া ড্র করলে তিউনিসিয়ার জন্য দরজা খুলে যাবে। কাতারে আসার আগে শক্তিশালী রক্ষণভাগ নিয়ে সাত ম্যাচে একটি গোলও হজম করেনি তিউনিসিয়া। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে ১৮০ মিনিটে মাত্র এক গোল হজম করেছে; কিন্তু মেক্সিকোর সাথে দ্বিতীয় দল হিসেবে প্রতিপক্ষের জালে এখনো কোনো গোল দিতে পারেনি তিউনিসিয়া।
এর আগে বিশ্বকাপের কোনো আসরে গোল না দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়নি ঈগলসের। অতীত পরিসংখ্যান থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে পারে আফ্রিকানরা। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কাদরি পরিপূর্ণ ফিট দলই হাতে পাচ্ছেন। দলের দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষক বেশিল বেন সাইদ অস্বস্তি কাটিয়ে বদলি বেঞ্চে ফিরেছেন। রাইট-ব্যাক মোহামেদ ড্রাগার দ্বিতীয় ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর আগেই বদলি বেঞ্চে চলে গিয়েছিলেন। এ কারণে তার স্থানে ওয়াজডি কেচিরডা কিংবা ফেরানি সাসির মধ্যে যে কোনো একজনের মূল দলে জায়গা হতে পারে। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ওয়াহবি খাজরির মূল দলে ফিরে আসা প্রায় নিশ্চিত। তবে ফ্রান্সের জন্য তিউনিশিয়া ম্যাচ আজ শুধু আনুষ্ঠানিকতার। শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ফেলার পর বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের মূল মনোযোগ এখন সেখানেই। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দিদিয়ের দেশমও পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘আমাদের মূল মনোযোগ এখন দ্বিতীয় রাউন্ড। এ ম্যাচে কোনো ঝুঁকি নেব না।’ এই ঝুঁকি না নেওয়া মানে শেষ ষোলোর সেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়দের সেরা অবস্থায় পাওয়ার চেষ্টা করা।
কোচ দেশম সেটিই করবেন, ‘পরিবর্তন হবে। তবে কী পরিবর্তন হবে, সেটা আমাদের মধ্যেই আছে। তা প্রকাশ করার জন্য নয়। এই সুযোগটা আমরা পেয়েছি যাতে করে খেলোয়াড়রা কিছুটা সতেজ হয়ে নিতে পারে, যা আমরা কাজে লাগাব।’ অর্থাৎ এ ম্যাচে মূল খেলোয়াড়দের বদলে যারা আগের দুই ম্যাচে কম সুযোগ পেয়েছেন তারাই আসতে পারেন মূল একাদশে।