রেকর্ডের ভাঙাগড়ায় জমজমাট ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’

আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:১৩

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি ও নেইমার জুনিয়র। ছবি: সংগৃহীত
বিস্ময় আর অঘটনের সকল সীমা ছাড়িয়ে কাতার বিশ্বকাপ এখন জমজমাট। উদ্বোধনী দিন থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। ফিফা বিশ্বকাপে কখনো স্বাগতিকরা উদ্বোধনী ম্যাচে হারেনি। ইকুয়েডরের কাছে কাতারের পরাজয়ে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে সেই গৌরব। দ্বিতীয় ম্যাচেও কাতার হেরেছে সেনেগালের কাছে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম দুই ম্যাচে স্বাগতিকদের হার এই প্রথম। ২০১০ সালের পর দ্বিতীয় স্বাগতিক হিসেবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে কাতারের। শেষ ম্যাচে হল্যান্ডের কাছে হারলে প্রথম স্বাগতিক হিসেবে কোনো পয়েন্ট ছাড়াই বিদায়ের লজ্জাজনক রেকর্ড গড়বে কাতার!
টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার গৌরব নিয়ে কাতার এসেছিল আর্জেন্টিনা। তাদের সেই গৌরব ধুলোয় লুটিয়েছে সৌদি আরবের কাছে। এশিয়ার প্রথম কোনো দল হিসেবে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সৌদি জন্ম দিয়েছে বিশ্বকাপের অন্যতম অঘটনের। সৌদি আরবের বিপক্ষে বিশ্বসেরা লিওনেল মেসি পেনাল্টি থেকে গোল পেলেও বাকি সময়ে ছিলেন নিষ্প্রভ। কিন্তু মেক্সিকোর বিপক্ষে দলের জয়ের দিনে মেসি অনেকটাই ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। নিজে দুর্দান্ত একটি গোল করেছেন। অ্যাসিস্ট করেছেন এঞ্জো ফার্নান্দেজের গোলে। ম্যাচের সেরাও হয়েছেন তিনি। তাতে অনেকগুলো রেকর্ডের মালিকও বনে গেছেন, তিনি এখন বিশ্বকাপে যৌথ সর্বোচ্চ সাতটি ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ অ্যাওয়ার্ডের মালিক। এছাড়া প্রয়াত আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর দিয়াগো ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি ২২টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেললেন মেসি।
মেসি ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে ১৮ বছর ৩৫৭ দিন বয়সে সার্বিয়ার বিপক্ষে গোল এবং অ্যাসিস্ট করেছিলেন সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে। এবার মেক্সিকোর বিপক্ষে করেছেন ৩৫ বছর ১৫৫ দিনে সবচেয়ে বেশি বয়সের খেলোয়াড় হিসেবে।
টানা পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ঘানার বিপক্ষে খেলার ৬৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলে রোনালদো ভেঙে দেন পেলে, মেসি, উইয়ে সিলার আর মিরোস্লাভ ক্লোসার রেকর্ড। তারা সবাই চার বিশ্বকাপে গোল করেছেন। কিন্তু টানা পাঁচ বিশ্বকাপে গোলের মালিক একমাত্র সিআর-সেভেন। সঙ্গে পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। যা বিশ্বকাপে তার সপ্তম ‘ম্যান অব দা ম্যাচ’ অ্যাওয়ার্ড। মেসির সঙ্গে যৌথ সর্বোচ্চ।
মেসি-রোনালদো যুগে ব্যালন ডি অর এবং ফিফা বর্ষসেরা হওয়ার কৃতিত্ব একমাত্র লুকা মদ্রিচের। মরক্কোর বিপক্ষে মাঠে নেমে ক্রোয়েশিয়ান মহাতারকাও নাম লিখিয়েছেন রেকর্ডের পাতায়। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি ভিন্ন দশকে তিনি খেলেছেন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ আর বিশ্বকাপ। ২০০৮ সাল থেকে টানা চারটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছেন। বিশ্বকাপ খেলেছেন ২০০৬, ২০১৪ আর ২০১৮ সালে। আছেন ২০২২ সালেও।
রেকর্ডের খাতায় নাম লিখিয়েছেন ফ্রান্সের অলিভার জিরুদ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি জোড়া গোল করেছেন। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তার গোলের সংখ্যা থিয়েরি অঁরির সঙ্গে যৌথ সর্বোচ্চ ৫১টি। অস্ট্রেলিয়ার পর ডেনমার্ককে হারিয়ে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স সবার আগে পৌঁছে গেছে নক-আউট পর্বে।
জার্মানির বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও ২-১ গোলের দুর্দান্ত জয় পেয়েছিল জাপান। বিশ্বকাপে আগে কখনো পিছিয়ে পড়া ম্যাচে জয় পায়নি ব্লু সামুরাইরা। এ ছাড়া ২৮ বছরে প্রথম কোনো বিশ্বকাপ ম্যাচে জার্মানি শুরুতে এগিয়ে গিয়ে হেরেছে। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রথমে এগিয়ে গিয়েও হেরেছিল সেই সময়ের পশ্চিম জার্মানি।
চলতি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ৬-২ গোলে হারিয়েছে ইরানকে। যা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ইংলিশদের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। ২০১৮ সালের আসরে ইংল্যান্ড ৬-১ গোলে হারিয়েছিল পানামাকে। কিন্তু সেটা ছিল গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ম্যাচ।
কাতারে রেকর্ড গড়েছে স্পেন ৭-০ গোলে কোস্টারিকাকে হারিয়ে। এটিই বিশ্বকাপে স্পেনের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। এর আগে ১৯৯৮ সালে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ৬-১ ব্যবধানে জিতেছিল স্পেন।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাতার বিশ্বকাপে যত রেকর্ড আর অঘটন ঘটেছে, তা দেখা যায়নি পূর্বের ২১টি আসরে। ইতোমধ্যেই এশিয়ার মাটিতে চলমান বিশ্বকাপকে ‘বিস্ময়ের আসর’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অনেকেই। দিন যত গড়াবে, সেই অঘটন আর রেকর্ডের সংখ্যা বাড়বে সন্দেহ নেই।