কাতার বিশ্বকাপে ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়াদের কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৪৩

করিম বেনজেমা, সাদিও মানে ও ফিলিপে কুতিনিও। ছবি: সংগৃহীত
প্রথমবারের মতো জুন-জুলাইয়ের পরিবর্তে নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। সময়ের পরিবর্তনের চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে লিগ চলাকালীন সময়েই বিশ্বসেরা আসর অনুষ্ঠিত হওয়ায় খেলোয়াড়দের মধ্যে ইনজুরিতে পড়ার প্রবণতা ছিল বেশি। বিশ্বকাপ শুরুর পর সেটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে। অনেক তারকা খেলোয়াড়কে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে হচ্ছে ফেভারিট দলগুলোকে। কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে আয়োজনে কোনো কমতি রাখা হয়নি।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে সম্ভব সবকিছু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট দেশ কাতার। অথচ পুরো আয়োজনটাই রঙ আর বর্ণহীন হতে গেছে, একের পর এক ফুটবলারের ইনজুরিতে। ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন অনেক দেশের বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার। শঙ্কা রয়েছে আরো অনেককে নিয়ে। আবারো সেখান থেকে বিশ্বকাপের মধ্যেই ইনজুরি আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে এবারের কাতার বিশ্বকাপকে এরই মধ্যে ইনজুরির বিশ্বকাপ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইনজুরির মিছিলে যোগ দেওয়া তারকাদের মধ্যে ফ্রান্সের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা করিম বেনজেমা। এরপরই সর্বশেষ ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা ফুটবলার মার্টিন বয়েল।
মূলত ফুটবলারদের ইনজুরিতে পড়ার মূল কারণ, বিশ্বকাপ শুরুর এক সপ্তাহ আগেও ক্লাব ফুটবল খেলতে হয়েছে বেশিরভাগ ফুটবলারকে। আর ক্লাব পর্যায়ের ফুটবল কতটা কঠিন, তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রয়েছেন সবাই। ইনজুরিতে পড়তে পারেন, এ কারণে অবশ্য পিএসজির হয়ে শেষ দুই ম্যাচের একটি খেলেননি লিওনেল মেসি। অন্য সময় বিশ্বকাপের আগে অন্তত এক থেকে দেড়মাস সময় পেতো ফুটবলাররা নিজেদের তৈরি করে নেয়ার জন্য। কিন্তু এবার সে রকম কোনো সময়ই পায়নি তারা। ইনজুরি সমস্যা তো রয়েছেই, এছাড়া টানা ক্লাব ফুটবল খেলে খেলে পুরোপুরি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন খেলোয়াড়রা। যার ফলে সেরা সেরা তারকাদের কাছ থেকেও তাদের সেরা পারফরম্যান্স দেখা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কাতারের মরুর বুকে বাহারি সব স্টেডিয়াম সারা দুনিয়ার ফুটবলপ্রিয় মানুষের মন কেড়ে নিয়েছে। চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশ দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব ভেন্যু। এই স্টেডিয়ামের ভেন্যুগুলো দর্শন ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করলেও খেলোয়াড়দের একের পর ইনজুরি নষ্ট করেছে এবারের কাতার বিশ্বকাপের সৌন্দর্যকে। বিশ্বকাপের আগে ফুটবলারদের চোটের কারণে ছিটকে পড়া নতুন কিছু নয়। এবার যেন একটু বেশি পরিমাণেই পড়েছেন ইনজুরির কারণে।
প্রস্তুতির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রীতিম্যাচের পর আর্জেন্টিনার দুই ফুটবলার নিকো গঞ্জালেস ও জ্যাকুলিন কোররেয়া বাদ পড়েছেন ইনজুরির কারণে। একই কারণে বাদ পড়তে হয়েছে জিওভান্নি লো সেলসোকে। সেনেগালের সাদিও মানের বাদ পড়াটা আফ্রিকান নেশনস কাপের সেরা দলটির জন্য বিশাল বড় একটা ধাক্কা। বেনজেমার আগে অবশ্য ইনজুরিতে পড়ে ফরাসি দলে জায়গা হারান এনগোলো কন্তে ও পল পগবা। পর্তুগাল হারিয়েছে তাদের অন্যতম স্ট্রাইকার দিয়েগো জোতাকে। ঘানার জোজো ওয়াল্টাকোট, ব্রাজিলের লিভারপুলের ডিফেন্ডার আর্তুর মেলো, মরক্কোর আমিনে হারিত, জার্মানি মার্কুস রেউস, জাপানের উতা নাকায়ামারা এবারের বিশ্বকাপে দর্শক হিসেবেই থাকবেন ইনজুরির কারণে। ইনজুরিতে পড়ার কারণে ছিটকে গেছেন, এমন কয়েকজন ফুটবলারকে নিয়েই সাজানো হয়েছে এবারের প্রতিবেদন।
করিম বেনজেমা, ফ্রান্স
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফিফা ব্যালন ডি অরের পুরস্কার জিতেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলেও দারুণ ফর্মে রয়েছেন। বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন। রিয়াল মাদ্রিদে নিজেকে উজার করে দিয়ে খেলেন। জাতীয় দলও তার কাছ থেকে সেরাটা চেয়েছিল। কিন্তু আসর শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তেই বাদ পড়ে গেছেন ইনজুরিতে পড়ে। যাতে ক্ষতিটা বেশি হয়েছে ফ্রান্সেরই।
সাদিও মানে, সেনেগাল
আফ্রিকার সেরা ফুটবলার সাদিও মানে। মহাদেশে মোহাম্মদ সালাহর সাথে তার লড়াইটাও হয় জমজমাট। মিশরকে পেছনে ফেলে সেনেগালকে বিশ্বকাপের টিকিট পাইয়ে দিতে দারুণ ভূমিকাও রেখেছেন। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন লিগে বায়ার্ন মিউনিখে খেলার সময়ই ইনজুরিতে পড়েছিলেন। তাকে নিয়ে কাতারে গেলেও পড়ে দেশের ফিরতি বিমানে উঠতে হয়েছিল মানেকে। ক্ষতিটা অবশ্য সবচেয়ে বেশি হয়েছে সেনেগালের। দলের সেরা তারকাকে হারিয়ে একাদশ সাজাতে নতুন চিন্তা করতে হচ্ছে দলটি টিম ম্যানেজমেন্টকে।
ফিলিপে কুতিনিও, ব্রাজিল
ক্লাব ফুটবলের চেয়ে সবসময়ই তাকে ব্রাজিল জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইনজুরি তার কাতার বিমানে ওঠার সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছে। এর আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে অ্যাস্টন ভিলার শুরুর স্কোয়াডে না থাকায় অনেকের ধারণা ছিল ফর্মের কারণে বাদ পড়েছেন ফিলিপে কুতিনিও। কারণ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটির হয়ে গোল পাচ্ছিলেন না, আর গোল বানিয়েও দিতে পারছিলেন না। তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দলের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচটি শেষে কুতিনিওকে নিয়ে দুঃসংবাদই শুনিয়েছেন ভিলা কোচ উনাই এমিরি। অনুশীলনে ঊরুর পেশিতে চোট পাওয়ার পর শুরুতে তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন কোচ। এরপর নিশ্চিত হওয়া যায় তার ইনজুরি গুরুতর এবং অন্তত ৯ থেকে ১০ সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করার ঠিক এক দিন আগে দল থেকে ছিটকে গেলেন কুতিনিও। কুতিনিওর চোট অবশ্য তিতের কাজ অনেকটাই সহজও করে দিয়েছে। যদিও ৩০ বছর বয়সী এই আক্রমণাক্তক মিডফিল্ডারের সাম্প্রতিক নৈপুণ্য তার পক্ষে কথা বলছিল না। বার্সেলোনা থেকে ধারে অ্যাস্টন ভিলায় এসেছেন এ বছরের জানুয়ারিতে। ২০২১-২২ মৌসুমের বাকি অংশে ১৯ ম্যাচ খেলে ৫ গোল করেন। নতুন মৌসুমে তাকে ইংলিশ দলটিকে স্থায়ীভাবে দলভুক্ত করা হয়। ব্রাজিলের হয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন এই কুতিনিও। গ্রুপ পর্বে সুইজারল্যান্ড ও কোস্টারিকার বিপক্ষে ২ গোলের পর কোয়ার্টার ফাইনালেও একটি গোলে সহায়তা করেন। ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও ২ গোল করেন।
সার্জিও রবের্তো, স্পেন
২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন স্পেন দলেও হানা দিয়েছে ইনজুরি। অংশগ্রহণকারী ৩২টি দলের অনেকেই ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে খেলে থাকেন। তাই তো কেউ একজন চোট পেলেই আঁতকে ওঠেন তার দেশা। এই যেমন অ্যাতলেটিকো বিলবাওর বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পায় বার্সেলোনা। ওই ম্যাচেই চোটে পড়েন সার্জিও রবের্তো। আর যে চোট শুধু বার্সার নয়, স্পেনের জন্যও বড় দুশ্চিন্তার। এক বিবৃতিতে ক্লাব দল বার্সার পক্ষ থেকে তার চোট নিয়ে জানানো হয়েছে। যেখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, ‘বার্সেলোনা ও স্পেন মূল দলের খেলোয়াড় রবের্তোর বাঁ কাঁধের হাড় নড়ে গেছে। তাকে আপাতত আর পাওয়া যাচ্ছে না। রবের্তোর মাঠে ফেরা নির্ভর করছে সেরে ওঠার ওপর। সেই সময়টা অবশ্য বলা যাচ্ছেনা’। তবে চোট কতটুকু গুরুতর সেটি অবশ্য স্পষ্ট করে জানায়নি বার্সা। অবশ্য মাঠ থেকে স্ট্রেচারে করে বের হওয়াটা মোটেও ভালো খবর ছিলনা স্পেনের জন্য।
পল পগবা, ফ্রান্স
ফ্রান্সের আরেক ভরসার নাম পল পগবা। কাতার বিশ্বকাপে তার খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল আগে থেকেই। শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্যি বলে প্রমাণিত হলো। চোট থেকে সেরে না ওঠায় শেষ হয়ে গেল তার বিশ্বকাপে খেলার শেষ সম্ভাবনাটুকুও। বিশ্বকাপ শুরুর আগে হাঁটুর চোট কাটিয়ে ফরাসি মিডফিল্ডারের সেরে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন তার এজেন্ট। গত গ্রীষ্মের দলবদলের সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে জুভেন্টাসে যোগ দেন পগবা। এরপর দলটির প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি সফরের সময় ডান হাঁটুতে চোট পান তিনি। শুরুতে বিশ্বকাপে খেলার ঝুঁকি বিবেচনা করে অস্ত্রোপচার করানোর পক্ষে ছিলেন না পগবা। পরে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অস্ত্রোপচার করাতে রাজি হন তিনি। ওই সময় তার ক্লাব জুভেন্টাস কোচ মাস্সিমিলিয়ানো আল্টেগ্রিও বলেছিলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের আগে তিনি পগবার মাঠে ফেরার সম্ভাবনা দেখেন না। গত ১৮ অক্টোবর জুভেন্টাসের অনুশীলনে ফেরেন তিনি। ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম বলেন, শতভাগ ফিট না হলে তার দলে জায়গা মিলবে না ২৯ বছর বয়সী এই ফুটবলারের। তার এজেন্ট রাফায়েলা পিমেন্তা জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের আগে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ী তারকার। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৪-২ গোলে জেতা ম্যাচে একটি গোল করেছিলেন তিনি।
বেন চিলওয়েল, ইংল্যান্ড
ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল বেন চিলওয়েলের। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়েছেন ইংল্যান্ডের এই লেফটব্যাক। ২৫ বছর বয়সী ইংলিশ ফুটবলারের চোটে পড়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছে তার ক্লাব চেলসি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ডিনামো জাগরেবের বিপক্ষে চেলসির ম্যাচের সময় চোটে পড়েন চিলওয়েলে। ম্যাচটি ব্লুজরা ২-১ গোলে জয় পেয়েছিল। এরপরই এক বিবৃতিতে চেলসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘জাগরেবের বিপক্ষে সর্বশেষ খেলায় ইনজুরিতে পড়া বেন চিলওয়েলের হ্যামস্ট্রিং স্ক্যান করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, বেনের চোটটি গুরুতর। দুর্ভাগ্যবশত এই ডিফেন্ডার বিশ্বকাপ মিস করার সম্ভাবনাই এখন বেশি। তাকে এখন ক্লাবের চিকিৎসক দলের সঙ্গে পুনর্বাসন পক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। চিলওয়েলের ছিটকে পড়াটা ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারি সাউথগেটের জন্য বড় বেশি দুশ্চিন্তার কারণ। ‘থ্রি লায়ন্স’ ম্যানেজারকে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে লেফটব্যাক পজিশন নিয়ে। বিশ্বকাপের আগে চোট থেকে সেরে উঠতে লড়াই করেছেন রিস জেমস, কাইল ওয়াকার, সাকা ও কেলভিন ফিলিপস। যার মধ্যে জেমসের বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।
টিমু ভেরনা, জার্মানি
ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল ভেরনার। যদিও শেষবার বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাটা মোটেও ভালো হয়নি টিমু ভেরনার। তার দল প্রথম রাউন্ড শেষে গ্রুপের তলানিতে থেকে বিদায় নেয়। তিন ম্যাচের কোনোটিতেই জয় পায়নি দল। নিজেও অবশ্য কোনো ম্যাচে গোল পাননি। সব মিলিয়ে রাশিয়ায় বিভীষিকাময় একটা টুর্নামেন্টই কাটিয়েছেন জার্মান স্ট্রাইকার। বিশ্বকাপে পর অবশ্য নিজের সেরা ফর্মেই ছিলেন। ক্লাব পাল্টে ইংল্যান্ডে এসে অবশ্য হারিয়ে ফেলেছিলেন নিজেকেই। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে ফরমে ফেরার তাগিদেই আবার ফিরে গিয়েছিলেন সাবেক ক্লাবটিতে। সেখানে নিজের স্বাভাবিক রূপেই ফেরার লক্ষণও দেখা গিয়েছিল। আপাতত আর সেই সুখ আর টিকছে না তার ভাগ্যে। চ্যাম্পিয়নস লিগে শাখতার দোনেৎস্ক এর হয়ে ম্যাচে চোটে পড়েছিলেন এই স্ট্রাইকার। এটাই কাল হলো তার জন্য। এবার নিশ্চিত হয়েছে, বিশ্বকাপের আগে সারবে না এই চোট। ফলে ঘরে বসেই দেখতে হবে কাতার বিশ্বকাপের খেলা। চোটে বাদ পড়ায় তার ক্ষতির পাশাপাশি জার্মানির জন্যও বড় ক্ষতি হয়েছে। জাতীয় দলের হয়ে ফরমে থাকা ভেরনার বিকল্প ভাবতে হবে কোচ হানসি ফ্লিককে। জার্মান জাতীয় দলের হয়ে ৫৫ ম্যাচে ২৪ গোল করেছিলেন লাইপজিগের এই ফরোয়ার্ড।
এনগোলা কন্তে, ফ্রান্স
বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। দলটির মিডফিল্ডের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম এনগোলা কন্তে। নিজ দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করতে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন। অথচ চার বছর ঘুরতেই পড়ে গেছেন ইনজুরিতে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েছেন এই মিডফিল্ডার। এখন অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের প্রাণভোমরা বলা যেতে পারে এনগোলা কন্তেকে। কিন্তু এক ইনজুরি তার কাতার বিমান ধরার স্বপ্নে কুঠারাঘাত করেছে। টটেনহামের বিপক্ষে গত আগস্টের এক ম্যাচে খুঁড়িয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন এই মিডফিল্ড জেনারেল। ফরাসি মিডফিল্ডার তারপর আর মাঠে নামেননি। এরপর শোনা গেল আরো খারাপ খবর। হ্যামস্ট্রিংয়ে অস্ত্রোপচার করানোয় প্রায় চার মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে কন্তেকে। অর্থাৎ, ফ্রান্সের হয়ে তার কাতার বিশ্বকাপে যাওয়া হচ্ছে না। কন্তের চার মাস মাঠের বাইরে ছিটকে পড়ার বিষয়টি জানিয়ে তার ক্লাব চেলসির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘হ্যামস্ট্রিংয়ে ইনজুরির কারণে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন এনগোলো কন্তে। ক্লাবের মেডিকেল বিভাগের সহায়তায় একজন বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিলেন এই মিডফিল্ডার চোট পরবর্তী পুনর্বাসন নিয়ে কথা বলার জন্য। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতেই চোট সারাতে এনগোলোরের অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় প্রায় চার মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে।’ ফ্রান্সের হয়ে গত বিশ্বকাপজয়ী কন্তে এই মৌসুমে চোটের কারণে বেশির ভাগ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে মাত্র ২টি ম্যাচ খেলেছেন। কন্তের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার খবর বেশ বড় ধাক্কাই বলা যায় ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশমের জন্য।
দিয়াগো জোতা, পর্তুগাল
ইনজুরির কারণে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দিয়াগো জোতাকে হারাতে হয়েছে।
পর্তুগালের এই ফরোয়ার্ডের ওয়েস্ট হামের ম্যাচ সামনে রেখে ছিটকে পড়ার খবরটি নিশ্চিত করেছেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। তার দেওয়া তথ্যমতে, ‘অনেকটা হঠাৎ করেই চোটে পড়েন জোতা। সে কারণে আগামী কয়েক মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। লিভারপুলের হয়ে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচের সময় গোড়ালির চোটে পড়েন জোতা। ম্যাচ শেষ হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে চোট নিয়ে স্ট্রেচারে করে যেভাবে মাঠ ছেড়েছিলেন, তা পর্তুগাল সমর্থকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেটিই সত্যি বলে প্রমাণিত হলো’। ২০১৯ সালে ডাক পাওয়ার পর থেকেই পর্তুগাল দলের আক্রমণভাগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছিলেন জোতা। বিশ্বকাপেও পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের বড় ভরসা হতেন ২৫ বছর বয়সী তারকা খেলোয়াড়। জোতা এখন পর্যন্ত পর্তুগালের জার্সিতে ২৯ ম্যাচে ১০ গোল করেছেন।
ইনজুরিতে যাদের স্বপ্ন শেষ হয়েছিল
বিশ্বকাপের আগে চোট সমস্যা অবশ্য খুব নতুন কিছু নয়। চোট এর আগেও বিভিন্ন সময় একাধিক ফুটবলারকে বিশ্বসেরা আসর থেকে ছিটকে দিয়েছিল। সেরা আর আলোচিত তারকাদের মধ্যে ১৯৬২ সালে চোটে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন আলফ্রেডো ডি স্টেফানো। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে মাংসপেশির চোটে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েন ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক রোমারিও। ম্যানচেস্টার সিটির বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলা ২০০২ বিশ্বকাপে দর্শক হয়েছিলেন ডান পায়ের লিগামেন্টের চোটে পড়ার কারণে। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে একই কারণে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ হারান রিও ফার্ডিনান্দ। একই বিশ্বকাপে জার্মান তারকা মাইকেল বালাকেরও হয়েছিল অভিন্ন এক পরিণতি। এ ছাড়া ডেভিড বেকহাম, মাইকেল ওয়েন, রাদামেল ফালকাও এবং মার্কো রয়েসসহ অনেককে বিভিন্ন বিশ্বকাপের আগে পাওয়া চোটের কারণে দর্শকের ভূমিকা থাকতে হয়েছিল। তবে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভিন্ন। দলগুলোতে অবশ্য চোটের যেন মড়ক লেগেছে। চোটের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতিও প্রচুর। গত মাসে ব্লুমবার্গে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ফুটবলে চোটের কারণে প্রতিবছর ক্ষতি হয় ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড এবং চোটের পরিমাণ আগের মৌসুমের চেয়ে গত মৌসুমে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২০ শতাংশ। আর বিশ্বকাপকেও এবার তারকাদের চোটের মূল্য দিতে হবে।
আরো যারা ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন
টিমো ওয়ার্নার (জার্মানি), রিস জেমস (ইংল্যান্ড), বুবাকার কামারা (ফ্রান্স), আর্থার মেলো (ব্রাজিল), স্কট কেনেডি (কানাডা), হেসাস টেকাটিটো করোনা (মেক্সিকো), জিওভানি লো সেলসো (আর্জেন্টিনা), মার্কো রেউস (জার্মানি), ইউতা নাকায়ামা, আমিনে হেরিট (মরক্কো), ক্রিস্টোফার এনকোকু (ফ্রান্স), হোসে গায়া (স্পেন), নিকোলাস গঞ্জালেজ (আর্জেন্টিনা), জোয়াকিন কোরেয়া (আর্জেন্টিনা), মার্টিন বয়েল (অস্ট্রেলিয়া)।