
কানাডার জালে গোল করার মরক্কোর উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত
সেনেগালের পর দ্বিতীয় আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে মরক্কো। তাও পাক্কা ৩৬ বছর পর। তাই বিশ্বকাপে ‘এফ’ গ্রুপ মানেই কি দ্বিতীয় রাউন্ডে মরক্কো, এই প্রশ্ন উঠেছে।
সর্বশেষ ১৯৮৬ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল মরক্কো। তারপর থেকে দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষা। মজার ব্যাপার হলো, দুবারই মরক্কো ছিল ‘এফ’ গ্রুপে।
মেক্সিকোতে হওয়া ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ‘এফ’ গ্রুপে মরক্কোর প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড ও পর্তুগাল। ইংল্যান্ড ও পোল্যান্ড এই দুই দলের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে। এরপর সবচেয়ে বড় চমক দেখায় পর্তুগালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে।
একটি জয় ও দুই ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছেছিলো আফ্রিকা মহাদেশের এই দেশটি। ৩৬ বছর পর কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপে আবারো ‘এফ’ গ্রুপে পড়ে তারা।
মরক্কো এবার খেলেছে ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডার বিপক্ষে। গত ২৩ নভেম্বর আল-বায়েত স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোলশুন্য ড্র করে টুর্নামেন্ট শুরু করে দেশটি।
এরপর বেলজিয়ামের বিপক্ষে চমক দেখায় মরক্কো। গত ২৭ নভেম্বর আল থুমামা স্টেডিয়ামে রেড ডেভিলদের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পায় আফ্রিকান এই দেশটি। আর আল থুমামায় কানাডাকে ২-১ গোলে পরাজিত করে ‘এফ’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছায়।
৬ ডিসেম্বর এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে মরক্কোর প্রতিপক্ষ ‘ই’ গ্রুপের রানারআপ স্পেন। ৩৬ বছর আগে মেক্সিকো স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় রাউন্ডে মরক্কোর প্রতিপক্ষ ছিল আরেক ইউরোপীয় দল।
শেষ ষোলর সেই ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির (বর্তমান জার্মানি) কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল আফ্রিকার এই দেশটি। দুইবারই গ্রুপ পর্বে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে মরক্কো। অবশেষে ৩ যুগ পর পুনরায় নকআউট স্টেজে পা রেখেছে তারা।
মরক্কোর ইতিহাসের নায়ক বলা যেতে পারে জিয়েখকে। গ্রুপে আগেরবারের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া ছিল; রাশিয়া বিশ্বকাপে তৃতীয় দল, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় সেরা দল বেলজিয়ামও ছিল।
মরক্কো সেই ‘এফ’ গ্রুপ থেকেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে, সেটাও আবার গ্রুপসেরা হয়ে। শেষ দিনে কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে এই অবিস্মরণীয় অর্জনটা ঝুলিতে পুরেছে আফ্রিকান দেশটি।
এমন অর্জনের জন্য শেষ দিনে কানাডাকে হারাতে হতো মরোক্কোর। ম্যাচের শুরুতে একটা উপহারই পেয়ে যায় দলটি। কানাডার গোলরক্ষক বোরজান ভুলে বলের দখল দিয়ে দেন মরক্কোকে। হেকিম জিয়েখ গোলটা করতে ভুল করেননি। তার গোলেই এগিয়ে যায় মরক্কানরা।
শেষমেশ ম্যাচটা জেতে ২-১ ব্যবধানে। গড়ে ফেলে ইতিহাসও। জিয়েখ কেবল শুরুর গোলটাই করেননি। পুরো ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছেন। যার ফলেই এই অবিস্মরণীয় জয়টা তুলে নিতে পেরেছে তার উত্তর আফ্রিকান দেশটি।
আক্রমণভাগে ম্যাচটা শুরু করা জিয়েখ পুরো ম্যাচেই রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমি আর স্ট্রাইকার ইউসেফ এন নেসেরির সঙ্গে দেখিয়েছেন দারুণ বোঝাপড়া। দেখিয়েছেন, কেন কোচ ওয়ালিদ রেগরাগি তাকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে দলে এনেছেন।
তার এমন আলো ছড়ানো পারফর্ম্যান্সে ভর করেই মরক্কো উঠে গেছে শেষ ষোলতে। ম্যাচ সেরা হয়ে তিনিও যোগ্য হিসেবেই পেয়েছেন পুরস্কারটা। এবার স্পেনকে চমকে দেবার পালা।