
কিলিয়েন এমবাপ্পে। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বকাপে নিজের জাতটা আরো আগেই চিনিয়েছেন। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে তার গতির কাছেই পরাস্ত হয়েছিল আর্জেন্টিনা। বলা হচ্ছিলো কিলিয়েন এমাবপ্পের কথা।
বিশ্বকাপে এরই মধ্যে একাধিক রেকর্ডের মালিক বনে গেছেন এই পিএসজি তারকা। এবার ছাড়ালেন পেলেকে, গড়লেন দুটি নতুন রেকর্ড।
গতির সাথে ড্রিবলিং; কিলিয়ান এমবাপ্পে মানেই প্রতিপক্ষের জন্য যেমন আতংক ঠিক তেমনি রক্ষণ ভেঙে চুরমার। এজন্যই হয়তো পোলিশ এক ফুটবলার ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, এমবাপ্পের গতি আটকাতে তাদের ডিফেন্ডারদের স্কুটার লাগতে পারে।
সেই কথাই যেন সত্যি হলো নকআউট পর্বে এসে। লিওনেল মেসির পেনাল্টি আটকানো পোলিশ গোলকিপার সাজনিও এই তরুণের গোল আর আটকাতে পারেননি। বলা যায় তার গতির কাছেই পরাভুত হতে হয়েছে।
রবার্ট লেভানডভস্কির পোল্যান্ডের বিপক্ষের গোলেই নতুন রেকর্ড গড়েছেন এমবাপ্পে। ছাড়িয়ে গেলেন দুই কিংবদন্তি পেলে ও ইউসেবিওকে।
দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে গতকাল রবিবার (৪ ডিসেম্বর) শেষ ষোলোয় পোল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৪তম মিনিটে দারুণ গোলে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান এমবাপে।
বিশ্বকাপে এটা এমবাপ্পের অষ্টম গোল। বয়স ২৪ বছর হওয়ার আগে বিশ্ব সেরার মঞ্চে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডে পেলেকে (৭) ছাড়িয়ে এককভাবে চূড়ায় বসেন তিনি।
একই সাথে ভেঙে দেন পর্তুগিজ কিংবদন্তী ইউসেবিওর সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপের আট গোলের রেকর্ডও। ২৪ বছর ১৮২ দিন বয়সে ৮টি গোল করেছিলেন ইউজেবিও।
আর এমবাপ্পে করলেন ২৩ বছর ৩৪৯ দিন বয়সে। পোলিশদের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে যোগ করা সময়ে আরেকটি গোল করেন এমবাপ্পে। বিশ্বকাপে এখন তার গোল সংখ্যা নয়। কিলিয়ান এমবাপ্পের গোল দুটিকে কী বলা যায়!
পোল্যান্ডের গোলকিপার ভয়চেক সেজনি নিশ্চয়ই বলবেন, ওই গোল দুটি কামানের গোলা। বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে পোল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
অলিভিয়ের জিরু পোল্যান্ডের গোলমুখ খোলার পর এমবাপ্পের জোড়া গোলেই বিজয় নিশ্চিত ফ্রান্সের। আর এই গোল দুটিতে রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন পিএসজির ফরাসি তারকা।
৭৪ মিনিটে ডি-বক্সের কাছে বল পেয়ে কাছের পোস্টে দুর্দান্ত এক শটে পোলিশ গোলকিপার সেজনিকে পরাস্ত করেন এমবাপ্পে। তার শটে জোর এত বেশি ছিল যে সেজনির মতো গোলকিপারও কিছুই করতে পারেননি।
এই গোলে বিশ্বকাপে তিনি পেয়ে যান তার অষ্টম গোলটি। এর মধ্য দিয়ে তিনি ভাঙেন ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি পেলের রেকর্ড।
বলা যায়, পোলিশ গোলরক্ষককে রীতিমতো অসহায় বানিয়ে ফেলেছেন এমবাপ্পে। পেলে তার ২৪ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপে ৭ গোল করেছিলেন। ফরাসি তারকা নিজের ২৪ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে সেই রেকর্ড ভেঙে করলেন ৮ গোল।
এবারের বিশ্বকাপে এটি ছিল এমবাপ্পের চতুর্থ গোল। যার মাধ্যমে তিনি আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, নেদারল্যান্ডসের কোডি গাকপো, স্পেনের আলভারো মোরাতা, ইংল্যান্ডের মার্কাস রাশফোর্ড ও ইকুয়েডরের এনার ভ্যালেন্সিয়াকে পেছনে ফেললেন। এমবাপ্পে এখানে অবশ্য থামেননি।
যোগ করা সময়ে প্রায় একই জায়গা থেকে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে সবাইকে তাক লাড়িয়ে দেন। তবে এই গোলটি তিনি করেন দূরের পোস্ট লক্ষ্য করে। গোলটির সময় তিনজন পোলিশ ডিফেন্ডার তাঁর সামনে ছিলেন।
এমবাপ্পে বাঁকানো শটে তিন রক্ষণসেনাকে বোকা বানিয়ে গোলকিপার সেজনিকে পরাস্ত করেন তিনি। বিশ্বকাপে নবম গোল করে তিনি পাশে বসলেন মেসির।
বিশ্বকাপে ৯ গোল করা এই দলে মেসি ছাড়াও আছেন ব্রাজিলের আদেমির, ভাভা, জার্জিনিও, পর্তুগালের ইউসেবিও, জার্মানির কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে, উয়ি সিলার, ইতালির পাওলো রসি, রবার্তো ব্যাজ্জিও, ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি, স্পেনের ডেভিড ভিয়া ও আর্জেন্টিনার গিয়ের্মো স্তাবিলে।
এমবাপ্পে দুটি বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচ খেলে এই রেকর্ড গড়লেন। মেসি ৯ গোল করেছেন ২৩ ম্যাচে। এমবাপ্পের চেয়ে কম ম্যাচ খেলে ৯ গোল করেছেন শুধু ব্রাজিলের আদেমির (৬ ম্যাচ), পর্তুগালের ইউসেবিও (৬ ম্যাচ) ও ইতালির ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি (৯ ম্যাচ)।
সে কারণেই ফ্রান্সের এবারের আসরে নিজেকে একটার পর একটা ম্যাচে প্রমাণ করে চলেছেন। সে কারণে এমবাপ্পের উপর ভরসা করাই যায়।