
জয়ের পর দৌড়ে গিয়ে উদ্যাপনটা করলেন গ্যালারিতে বসে থাকা মায়ের সাথে। ছবি: সংগৃহীত
ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো প্রায় অনেক খেলোয়াড়েরই রয়েছে কষ্টের অতীত। পেলে থেকে শুরু করে ডিয়াগো ম্যারাডোনা, লিভলদো, মেসিরা এই তালিকায় রয়েছে। এবারের বিশ্বকাপে সেখানে যোগ হয়েছে আশরাফ হাকিরি নাম।
মরক্কোর এই সুপারস্টার হোম ক্লিনার আর হকারের ঘরে জন্ম নিয়েছেন। অথচ স্পেনে জন্ম, চাইলে দেশটির হয়ে খেলতে পারতেন আশরাফ হাকিমি। জন্ম ইউরোপের দেশটিতে হলেও নাড়ি তাঁর উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয়।
হাকিমির বাবা-মা ছিলেন মরক্কোর অভিবাসী, যাঁরা তাঁর জন্মের অনেক আগেই স্পেনে এসেছিলেন। বিশ্বের সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়েও খেলেছিলেন এই অ্যাটাকিং ডিফেন্ডার।
এখন বর্তমানে ফারসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে মেসি-নেইমারদের সাথে খেলেন। তাঁর যে প্রতিভা, তাতে সুযোগ ছিল ফুটবল বিশ্বের সেরা দল স্পেনের হয়ে খেলারও। তবে তিনি সে পথে হাঁটেননি, ছুটেছেন শেকড়ের টানে। মরক্কোর প্রতিনিধিত্ব করাই পছন্দ করলেন।
১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের হেতাফেতে হাকিমির জন্ম। অসচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়া হাকিমি ছোট থেকেই ছিলেন উদ্যমী। মা সাইদা মৌহ প্রায়ই তাঁকে অ্যাথলেটিকসে ভাগ্য পরীক্ষার কথা বলতেন, বিশেষ করে সাঁতারে।
যদিও তাদের ছেলে সাঁতারু হননি; কিন্তু ফুটবলের তারকা হয়ে গেছেন। মরক্কোর পোস্টার বয়। কাতার বিশ্বকাপে জন্মস্থান স্পেনকে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল তুলেছেন মরক্কোকে। টাইব্রেকারে দলের জয় নিশ্চিত করা শুটটি তাঁর পা থেকেই বেরিয়েছে। সাথে সাথে ইতিহাসের পাতায় লিখা হলো মরক্কোর নাম। বিশ্বকাপ প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল আটলাস লায়নরা।
এরপর কোয়াটার ফাইনালে সাবেক ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে ওঠে চমক দেখিয়েছে। স্পেনের বিপক্ষে জয়ের পর দৌড়ে গিয়ে উদ্যাপনটা করলেন গ্যালারিতে বসে থাকা মায়ের সাথে।
চুমু দিয়ে ভালোবাসা নিংড়ে দিয়েছেন মাকে ঘিরে। ছেলের গালেও চুমু দিয়েছেন মা। আশপাশের সমর্থক আর ক্যামেরা তখন এই নিখাদ ভালোবাসার দৃশ্য বন্দী করতে ব্যস্ত। সাইদা মৌহ মানুষের বাড়ি পরিষ্কার করে ছেলে হাকিমি, নাবিল ও মেয়ে উইদাদের জন্য অর্থ উপার্জন করতেন।
নিজের অতীত নিয়ে ২৪ বছর বয়সী আশরাফ হাকিমি বলেছেন, তার মা মানুষের বাড়ি পরিষ্কার করে অর্থ উপার্জন করতেন একটা সময়। হাকিমির বাবা হাসান হাকিমি ছিলেন হকার। হাকিমি বললেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকেই কষ্টে আমার জীবন গড়তে দেখেছি। আমরা যে পরিবার থেকে এসেছি, আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।
আমি এখন প্রতিদিন তাঁদের জন্য লড়াই করি। তাঁরা আমার জন্য ত্যাগ শিকার করেছেন। আমার ভাই-বোন এমন অনেক সুবিধা পাননি, যা আমার সফলতার জন্য দেওয়া হয়েছে।’ গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র, বেলজিয়ামকে ২-০ এবং কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে মরক্কো।