ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেছে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ফ্রান্স।

কাতার বিশ্বকাপের শিরোপা কে জিতবে, সেটা জানা যাবে ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামের ফাইনালে। কিন্তু দলীয় শিরোপার বাইরেও ব্যক্তিগত সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন-বল কে জিতবে, সেটা নিয়ে আছে সকলের আগ্রহ। 

সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আঁতোয়ান গ্রীজম্যানদের সাথে আশ্রাফ হাকিমি ও লুকা মদ্রিচের মত নাম। তবে পারফরর্ম্যান্স কিংবা পরিসংখ্যান হিসেব করলে লুসাইল যুদ্ধে মুখোমুখি হতে যাওয়া দুই দলের মধ্য থেকেই কেউ ‘গোল্ডেন-বল’ পেতে যাচ্ছেন তা এক প্রকার নিশ্চিত। আর এদিক থেকে আমরা বলতে পারি ১৮ তারিখের ফাইনালে শিরোপা জয়ের পাশাপাশি লিওনেল মেসির সাথে ‘গোল্ডেন বল’ নিয়েও লড়াইয়ে মাতবেন ফ্রান্সের দুই সতীর্থ এমবাপ্পে এবং গ্রীজম্যান।

তবে লিওনেল মেসির সামনে অপেক্ষা করছে অন্যরকম রেকর্ডের হাতছানি। শেষ পর্যন্ত তার হাতে যদি ‘গোল্ডেন বল’ উঠেই যায় তবে তিনিই হবেন দু বার ‘গোল্ডেন বল’ জয়ী ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার। এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৪টি ম্যান অফ দ্য ম্যাচসহ মেসি যেভাবে নিজের সেরা ফর্মে রয়েছেন তাতে হয়তো ফাইনালে এমন ইতিহাস তৈরি এখন সময়ের ব্যপার মাত্র। তবে মেসির অবশ্য এসব রেকর্ডে নজর নেই একদমই। কেননা বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিয়ারে থাকা একমাত্র আক্ষেপ ঘোচানোই যে এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য।

মেসির পরেই সম্ভাবনায় এগিয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে। করেছেন আসরের সর্বোচ্চ পাঁচ গোল। তিনি পেয়েছেন তিনটি ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তার গতি আর গোল করার ক্ষমতার কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছে না প্রতিপক্ষ। পল পগবা, এনগোলো কন্তে আর করিম বেঞ্জেমাদের অনুপস্থিতি তিনি একাই ভুলিয়ে দিচ্ছেন। পোল্যান্ডের বিপক্ষে এমবাপ্পের গোল বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। পাঁচটি গোল ছাড়াও কোয়ার্টার পর্যন্ত এমবাপ্পের নামের পাশে আছে তিনটি অ্যাসিস্ট। তাই গোল্ডেন-বুটের মতো গোল্ডেন-বল লড়াইয়েও মেসির সঙ্গে এমবাপ্পের কঠিন লড়াই হবে, এটা অনুমান করা যায় ।

ফ্রান্সের আতোঁয়ান গ্রীজম্যানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি করা খেলোয়াড় গ্রীজম্যান। গোল-এসিস্টে অন্যদের চেয়ে ঢের পিছিয়ে থাকলেও ফ্রান্সের মূল ভরসাই কিন্তু তিনি। মূলত তাকে ঘিরেই ম্যাচের কৌশল সাজান কোচ দিদিয়ের দেশমচ।

গোল্ডেন-বুটের মুল লড়াইটা মেসি আর এমবাপ্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে বলে মনে হচ্ছে। দুজনই করেছেন পাঁচটি করে গোল। তবে এর বাইরে জুলিয়ান আলভারেজ ও অলিভিয়ের জিরুর্ড ৪ গোল নিয়ে এই দৌড়ে সামিল আছেন। ফাইনালে তারা হিসাব পাল্টে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার ‘গোল্ডেন-গ্লাভস’ পাওয়ার মূল লড়াইটা হবে ক্রোয়েশিয়ার কিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ, মরক্কোর ইয়াসিন বুনু আর আর্জেন্টিনার এমি মার্টিনেজের মধ্যে। তবে ফ্রেঞ্চ অধিনায়ক হুগো লরিসও সবাইকে চমকে দিতে পারেন ফাইনালে। ক্রোয়াট কিপার লিভাকোভিচ জাপান আর ব্রাজিলের বিপক্ষে টাইব্রেকারে ছিলেন জয়ের নায়ক। দুটি ম্যাচের ম্যাচসেরাও ছিলেন তিনি। তবে আর্জেন্টিনার কাছে তিন গোল হজম করায় লিভাকোভিচ শেষ পর্যন্ত সেরা তিনে থাকলেও, ‘গোল্ডেন গ্লাভস’ পাবেন কিনা বলা মুশকিল। 

অপরদিকে মরক্কোর ইয়াসিন বুনুও জিতেছেন স্পেন আর পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচসেরার পুরস্কার। শেষ পর্যন্ত তিনিই যদি এ পুরস্কার জিতে নেন তবে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবেনা। তবে ফাইনালে ওঠায় ‘গোল্ডেন গ্লাভস’ জয়ে কিছুটা এগিয়ে আছেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার ইমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ট্রাইবেকারে মার্টিনেজের অমানবীয় পারফর্ম্যান্সের উপর ভর করেই সেমিতে ওঠে আলবিসেলেস্তেরা। 

এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রাউন্ড অফ সিক্সটিনের লড়াইয়েও নিজের সেরাটাই দিয়েছেন তিনি। সেরা গোলরক্ষক হওয়ার দৌড়ে ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিস থাকলেও পুরো টুর্নামেন্টে তেমন পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। তবে সবশেষ ফ্রান্স ফাইনালে ওঠায় তিনিও হয়ে যেতে পারেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার।