
কিলিয়েন এমবাপ্পে ও পেলে। ছবি: সংগৃহীত
শিরোপা জয়ের সব রসদই জমা করা হয়েছিল। কিন্তু লিওনেল মেসির দলের সাথে লড়াই করেও জিততে পারলেন না। তিনবার পিছিয়ে পড়েও খেলায় ফিরে দারুণ কিছু নজির রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর টাইব্রেকার নামক ভাগ্যের খেলায় হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ফ্রান্সকে।
কিন্তু কিলিয়েন এমবাপ্পে হতে পারতেন ফাইনালের নায়ক। রেকর্ড গড়া হ্যাটট্রিক করে সেই রাস্তাও তৈরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু টাইব্রেকারে কপাল পুড়ল ফ্রান্সের। ফরাসিদের টপকে ৩৬ বছর পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ফাইনালের মঞ্চে তিন গোল করেও হতাশার সাগরে ভাসলেন এমবাপ্পে। দেখা পেলেন না শিরোপার।
সাথে ছোঁয়া হলো না ব্রাজিলিয়ান গ্রেট পেলের রেকর্ডও। সবচেয়ে কম বয়সে টানা দুটি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে (১৯৫৮, ১৯৬২) মাত্র ২১ বছর বয়সে। পেলের পর কমবয়সী ফুটবলার হিসেবে টানা দুটি ট্রফি জেতার হাতছানি ছিল এমবাপ্পের (২৪ বছর) সামনে। কিন্তু হলো না। শিরোপা না জিতলেও টুর্নামেন্টের গোল্ডেন বুট ঠিকই জিতেছেন তিনি। মেসিকে (৭) টপকে ৮ গোল তার। বিশ্বকাপ ফুটবলে দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড গড়েন এমবাপ্পে।
আজ থেকে ৫৬ বছর আগে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট। সেবার হার্স্টের দল চ্যাম্পিয়ন হলেও এমবাপ্পের দল হলো রানার্সআপ। পেলেকে ছোঁয়া না হলেও এমবাপ্পে নতুন রেকর্ড গড়েছেন বিশ্বকাপে।
এছাড়া সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করলেন এমবাপ্পে। সব মিলিয়ে তিনি পঞ্চম ফুটবলার। একাধিক বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা বাকি চারজন হলেন, ব্রাজিলের ভাভা (১৯৫৮, ১৯৬২), পেলে (১৯৫৮, ১৯৭০), জার্মানির পল ব্রিটনার (১৯৭৪, ১৯৮২) ও ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান (১৯৯৮, ২০০৬)। গত রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল ফ্রান্স। এর মধ্যে একটি গোল ছিল এমবাপ্পের। এবার কাতারের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও ছোঁয়া হলো না সাধের ট্রফিটা। তবে ফাইনালে দুর্দান্ত ছিলেন এমবাপ্পে।
তবে পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনার যেখানে দাপট, সেখানে দ্বিতীয়ার্ধে ফরাসিদের জাগিয়ে তোলেন এই এমবাপ্পেই। ২৩ মিনিটে মেসির গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৩৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ডি মারিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে শিরোপার সুবাস যখন পাচ্ছেন মেসিরা, তখনই এমবাপ্পে ঝলক। ৮০ মিনিটে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে করেন এক গোল।
এর মিনিটখানেক পরই আরেকটি দুরন্ত গোল। তার জোড়া গোলে ম্যাচে আসে ২-২ সমতা। টিকে থাকে ফ্রান্সের শিরোপা জয়ের আশা। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের ম্যাচে ১০৮ মিনিটে মেসির গোল। এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচ তখন শেষের পথে। বাকি কয়েক মিনিট। সে মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে গোল করে আবার ফ্রান্সের ত্রাতা এমবাপ্পে। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। প্রথম শটে গোল করেন এমবাপ্পে।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নিজের কাজটি ঠিকঠাক করলেও সতীর্থরা পারেননি। পরের দুটি শট মিস করেন কোমান ও চুয়েমেনি। তাতেই যেন ফ্রান্সের সমাধি রচিত হয়। চতুর্থ শটে মন্টিল গোল করলে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতে আর্জেন্টিনা। হ্যাটট্রিকম্যান এমবাপ্পের চোখেমুখে তখন রাজ্যের অন্ধকার। আবারো শিরোপার জন্য অপেক্ষাটা আরও চার বছরের।