Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

বিতর্কে জড়ালেন আড়ালের নায়ক মার্টিনেজ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:১২

বিতর্কে জড়ালেন আড়ালের নায়ক মার্টিনেজ

এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ছবি: সংগৃহীত

আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের শিরোপা জিতিয়েছেন লিওনেল মেসি। ম্যাচে মেসি নায়ক হলে পার্শ্ব নায়ক বলা যেতে পারে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। জিতেছেন কাতার বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভস। ফাইনালে ফ্রান্সের দুটো শট ফিরিয়ে নায়ক বনে যান তিনি। কিন্তু পুরস্কার মঞ্চে জড়িয়েছেন বিতর্কে। সেই মার্টিনেজই ম্যাচের পর অশ্লীল ভঙ্গি করে বিতর্কে জড়ালেন। যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে বিশ্ব ফুটবলে। 

মার্টিনেজের কারণেই কিন্তু আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠতে পেরেছিল। তার দুরন্ত পারফরম্যান্স বারবার প্রতিহত করেছে বিপক্ষকে। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে ম্যাচ জেতানোই হোক, বা দুরন্ত ছন্দে ফিল্ড গোল বাঁচানো, হিরোর ভূমিকা নিয়েছেন মার্টিনেজ। যার সুবাদেই তিনি টুর্নামেন্টের জিতে নিয়েছেন গোল্ডেন গ্লাভসও।

কিন্তু সেই গ্লাভস নিয়ে অশ্লীল ভঙ্গি করেই বিতর্কে জড়ালেন মার্টিনেজ। স্টেডিয়াম এবং টিভি মিলিয়ে কোটি কোটি মানুষ দেখলেন, সেলিব্রেশনের নামে পুরস্কার পাওয়া গোল্ডেন গ্লাভস মার্টিনেজ তার গোপানাঙ্গে ঠেকিয়া অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছেন। যা নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। বিষয়টি ভালো ভাবে নিতে পারেনি ফুটবল বিশ্ব। মার্টিনেজের এমন কুৎসিত কাজের জেরে তাকে সমালোচনায় ভরিয়ে দিচ্ছেন সবাইকে। তবে লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে উচ্ছ্বসিত মার্টিনেজ। তিনি এই সব বিতর্ক নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাচ্ছেন না। টাইব্রেকারে পেনাল্টি সেভ করার আসল রহস্যও তিনি উন্মোচন করেছেন।

সাথে সাথে তিনি বলেছেন, ‘প্রতিটা ম্যাচের মতো ফাইনালেও আমি পেনাল্টির সময় মাথা ঠান্ডা রেখেছিলাম। ওরা ম্যাচে ৩টি শটে গোল করেছে। কিন্তু তার পরেও আমি নিজেকে ঠান্ডা রেখেছিলাম। জানতাম, শান্ত থাকতে পারলে ঠিক সেভ করে দেব।’ এর সঙ্গেই মার্টিনেজ যোগ করেন, ‘আমি খুবই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছি। এই জয় পরিবারকে উৎসর্গ করতে চাই। পুরো পেনাল্টি শুটআউটে আমি শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। এটাই আমার স্ট্র্যাটেজি ছিল।’ 

এদিকে বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ‘আড়ালের নায়ক’ বলা হচ্ছে মার্টিনেজকে। র‍্যান্ডাল কোলো মুয়ানি ফ্রান্সের বিশ্বকাপ ফাইনালের একাদশেই ছিলেন না। মাঠে এসেছিলেন উসমান দেম্বেলের বদলি হিসেবে। ঠিক যেমন আট বছর আগে এস্তাদিও দে মারাকানায় মিরোস্লাভ ক্লোসার বদলি হয়ে মাঠে এসেছিলেন মারিও গোৎজে। গোৎজের সঙ্গে কোলো মুয়ানির আরেকটা জায়গায় মিলে যাচ্ছিল।

সেই ম্যাচে যোগ করা অতিরিক্ত সময় শেষ, তিন মিনিট ইনজুরি সময়েরও শেষ কয়েক সেকেন্ড চলছে। তখনই সেই কোলো মুয়ানি রীতিমতো একাই পেয়ে গেলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে। একটু এদিক-ওদিক হলেই আরো একবার তীরে এসে তরী ডোবা নিশ্চিত ছিল আর্জেন্টিনার। গোলটা হজম করলে যে শোধ করার সময়ই ছিল না! তবে গোলবারে এমি মার্টিনেজ আবির্ভূত হলেন রীতিমতো দেয়াল হয়ে। পা দিয়ে ঠেকালেন কোলো মুয়ানির সে শট। খেলাটা তাই গেল টাইব্রেকারে। পেনাল্টি শ্যুট আউটে তার দক্ষতা তিনি দেখিয়েছেন আগেও। গেল বছরের কোপা আমেরিকায়, কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে ঠেকিয়েছিলেন তিন তিনটি শট; ঠেকিয়েছেন এই বিশ্বকাপেও, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেই তো ঠেকিয়েছেন দুটো পেনাল্টি। সেই ‘রুটিন’টা ফাইনালেও মানলেন এমিলিয়ানো। ঠেকালেন কিংসলে কোম্যানের দারুণ শটটা। আর্জেন্টিনা জয়ের সুবাসটা পেতে শুরু করে তখনই। ফাইনালের ম্যাচসেরা লিওনেল মেসি হয়েছেন। তবে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা যদি তিন গোল হজম করা এমি মার্টিনেজকেও দেওয়া হতো, তাহলেও বোধ হয় ভুল কিছু হতো না।

ফাইনালে মেসির দুই গোল, অ্যাসিস্ট, পেনাল্টি শ্যুট আউটে গোলের সমান মূল্য যে তার দুটো সেভেরও ছিল! ম্যাচসেরার পুরস্কারটা এমি মার্টিনেজ জেতেননি, টুর্নামেন্টসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারটা জিতেছেন। পুরো টুর্নামেন্টে যে প্রভাবটা বিস্তার করেছেন তিনি, এরপর অলিভার কানের পর প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারটা জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। তার পারফর্ম্যান্সগুলো দেখুন, সৌদির কাছে দুই গোলে হারের পর আর্জেন্টিনার ভাগ্য যখন ঝুলছে সুতোয়, মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচে জয়টা অতীব প্রয়োজন ছিল তখন। সেই ম্যাচের ৪৪ মিনিটে অ্যালেক্সিস ভেগা নিয়েছিলেন দারুণ এক ফ্রি কিক, সেটা যদি জালে জড়িয়েই যেত শেষমেশ, আর্জেন্টিনার ফিরে আসতে পারত কি না ম্যাচে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর্জেন্টিনা শেষমেশ গোলটা হজম করেনি মার্টিনেজের ‘বাজপাখি’ হয়ে ওঠায়।

এরপর ঝড়ের মুখে পড়ে যাওয়া আর্জেন্টিনার বাতিটা মার্টিনেজ হাতের আড়াল দিয়ে বাঁচিয়েছেন আরো বহুবার। দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গারাং কুয়োলের সেই শটটার কথাই ধরুন? সে শটে গোল হয়ে গেলে খেলাটা গড়াত অতিরিক্ত সময়ে। আর সেটা হলে যে হয়ে যেতে পারত যে কোনো কিছুই! মার্টিনেজ তা হতে দেননি। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালের সেই পেনাল্টি শ্যুট আউট হয়ে এবার ফাইনালেরও অন্যতম নায়ক বনলেন তিনি! লিওনেল মেসি কোপা আমেরিকার সময় তার সাথে একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘সে একজন ফেনোমেনন’। কথাটা এমিকে এত বেশি প্রভাবিত করেছিল যে, রীতিমতো বলেই দিয়েছিলেন, ‘মেসি চাইলে মরেও যেতে পারি, তার জন্য জীবনটা দিয়ে দেবো!’ মেসি কেন সে কথাটা বলেছিলেন, মার্টিনেজ এরপর তা কোপা আমেরিকায় প্রমাণ করেছেন। এবার বিশ্বকাপেও করলেন। গোলরক্ষকদের কাজটা এমনিতেই ‘থ্যাংকলেস জব’ হয়। গোল বাঁচালে বাহবা নেই, কিন্তু ছেড়ে বসলে দুয়ো শুনতে হয় সবার আগে। এমিলিয়ানো আড়ালে থেকে গেছেন এবারো।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫