Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

সহকারী থেকে বিশ্বকাপ জয়ের কারিগর

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৪৯

সহকারী থেকে বিশ্বকাপ জয়ের কারিগর

লিওনেল স্কালোনি। ছবি: সংগৃহীত

একটা সময় ছিলেন লিওনেল মেসির সহকারী খেলোয়াড়। আর কাতার বিশ্বকাপে তিনি জয়ের কারিগর, পেছন থেকে নেড়েছেন কলকাঠি। কেউ কেউ বলছেন মাস্টারমাইন্ড। যদিও কোচের দায়িত্ব পাওয়ার আর্জেন্টাইনদের কাছে খুব একটা অভিনন্দন পাননি লিওনেল স্কালোনি। উল্টো পেয়েছিলেন নানা রকম টিটকারি। এমন কী আর্জেন্টাইন ফুটবলের দেবতা দিয়াগো ম্যারাডোনাও স্কালোনির সমালোচনায় ছিলেন মুখর। 

ম্যারাডোনার মত ছিল স্কালোনি ট্রাফিক সামলানোর কাজটাই ঠিকঠাক করতে পারবেন না আর্জেন্টিনার মতো বড় ফুটবল দল সামলানো তো বহু দূরের পথ। তবে স্কালোনি চুপচাপই ছিলেন। তর্ক-বিতর্কে না গিয়ে আর্জেন্টাই কোচ নিজের কাজটা করে গেছেন নিজের মতো। ২০১৬ সালে কোপা হেরে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলা মেসিকে ফের খেলায় ফেরাতে স্কালোনির ভূমিকা অনেক। তার বার্তাতেই মেসি সিদ্ধান্ত পাল্টে ছিলেন।

এরপর মেসিকে ২০২১ সালেই কোপার স্বাদ দেন স্কালোনি। আর ২০২২ সালে এনে দিলেন বিশ্বকাপ! সেই হিসেবে বলা যায় হারের বেদনায় বিশ্বছাড়া মেসিকে বিশ্বকাপ জেতানোর বড় কৃতিত্ব স্কালোনি অনায়াসে পেতেই পারেন। সেই সাথে অনাস্থা থেকে আস্থাভাজন হয়ে ওঠা লিওনেল স্কালোনিও প্রমাণ করে দিয়েছেন, নাম বড় নয় কাজটাই আসলে আসল। সাধনা করতে পারলে সিদ্ধি আসলেই মেলে। আর যোগ্যরা প্রমাণটা কাজে দেয়, মুখে নয়। তাই ম্যাচ শেষেও কথার আস্ফালনে গেলেন না স্কালোনি। কেবল বললেন, ‘আমি গর্বিত। অন্যান্য দিনের তুলনায় আমি কম রোমাঞ্চিত, আজ আমি মুক্ত। এই দলটি আমাকে কেবল গর্বিতই করেছে। এটা তাদের দিন।’ এমন সাফল্যেও যিনি থাকতে পারেন এরকম স্থির বিশ্বজয় করার মন্ত্র তো কেবল তিনিই জানেন নিশ্চয়ই।

এদিকে ২০২৬ বিশ্বকাপেও মেসিকে চান স্কালোনি। ‘যেতে চাইলে যেতে দেবো না না না, ছেড়ে দেবো না’, আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের পর কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি যেন সেটাই বলতে চাইলেন। জানালেন, লিওনেল মেসিকে তিনি চান পরের বিশ্বকাপেও। আর্জেন্টাইন মহানায়ক মেসি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়ের পরই জানিয়ে রেখেছিলেন, রবিবার লুসাইল স্টেডিয়ামের ফাইনালটাই তার জীবনের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ হয়ে থাকবে। এখন তাই শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছে গেছেন স্কালোনি। গত বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় হোর্হে সাম্পাওলির বিদায়ের পর লিওনেল স্কালোনিকে করা হয়েছিল আপৎকালীন কোচ। তাও মাত্র দুই মাসের জন্য। সেই কোচের অধীনেই আর্জেন্টিনার ৩৬ ম্যাচের অপরাজিত যাত্রা, ১৮ বছরের অপেক্ষা ফুরিয়ে কোপাও জিতেছে। আর এখন তো স্বপ্নের বিশ্বকাপ জয় থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে স্কালোনি।

লিওনেল মেসি জাতীয় দলে থাকবেন কি থাকবেন না সেই অনিশ্চয়তা ছিল। স্কালোনি কোচিং স্টাফে নিয়ে এলেন মেসির একসময়ের আদর্শ পাবলো আইমারকে, যুক্ত করলেন আলবিসেলেস্তে জার্সিতে অভিজ্ঞ রবার্তো আয়ালা ও ওয়াল্টার সামুয়েলকে। দলের খেলার ধরন, খেলোয়াড় মিলে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করলেন, যেন মেসি সবচেয়ে বেশি আশ্বস্ত বোধ করেন। আর্জেন্টিনার ৮৬ বিশ্বকাপজয়ী তারকা হোর্হে বুরুচাগা বলছিলেন, ‘নাহুয়েল মলিনা, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, লিসান্দ্রো মার্টিনেস, ম্যাক অ্যালিস্টারের মতো খেলোয়াড়কে খুঁজে বের করেছে, দলে ওদের একটা অবস্থান দিয়েছে এবং সবচেয়ে বড় কথা মেসির খেলার সুযোগ বাড়িয়েছে। গত বিশ্বকাপে এসব ছিল না।’ সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচ হারের পর যখন ‘গেল’ ‘গেল’ রব উঠে গিয়েছিল, তখন স্কালোনিই মাথা ঠান্ডা রেখে লাউতারো মার্টিনেসের বদলে হুলিয়ান আলভারেসকে মেসির পাশে খেলানোর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন। মেক্সিকোর বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে রক্ষণমনস্ক মিডফিল্ডার গিদো রদ্রিগেসকে খেলান পুরো প্রথমার্ধ।

নিজেদের কিছুটা গুছিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে এনসো ফের্নান্দেসকে নিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবলে ঠিকই ম্যাচ বের করে নিয়েছেন। ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে তিনি কোন কৌশলে যান সেটিই দেখার। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নিচে পাঁচজনকে খেলিয়েছিলেন, আবার ক্রোয়েশিয়ার শক্তিশালী মিডফিল্ডের বিপক্ষে খেলিয়েছেন ৪-৪-২। আনহেল দি মারিয়াকে নিয়ে আক্রমণাত্মক ৪-৩-৩ ছকেও খেলেছে তার দল। ফাইনালে কিছু ছোট ছোট ভুল হলেও সেগুলোকে পেছনে ফেলেছেন শিরোপা জিতে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫