দেখেই অবাক করার মতো বিষয় মনে হতে পারে। ভিনদেশে উড়ছে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। ফুটবল বিশ্বকাপে অংশ না নিয়েও এবারের বিশ্ব আসরে বাংলাদেশকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশ। আর এটি হয়েছে মূলত বিশ্বকাপে বাংলাদেশিদের আর্জেন্টিনা সমর্থনের কারণে। 

হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ বাংলাদেশকে তাদের ভালোবাসার জন্য টুর্নামেন্টের মধ্যেই ধন্যবাদ জানিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এবার টুর্নামেন্ট শেষেও বাংলাদেশের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন। বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই বাংলাদেশে লিওনেল মেসিদের নিয়ে উন্মাদনা। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এ উন্মাদনা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এসেছে।

বিশ্বকাপের মধ্যেই আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি জানতে পারেন বিষয়টি। সেদিনই ম্যাচপূর্ববর্তী প্রেস কনফারেন্সে তিনি এত এত ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশকে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন কমিউনিটি গড়ে উঠেছে আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশের সমর্থকদের নিয়ে। এছাড়া আর্জেন্টিনার অনেক বাসাবাড়িতেও বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর সংবাদও পাওয়া গেছে। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে দেখা গেছে আর্জেন্টিনার বিজয়োল্লাসে তাদের দেশের পতাকার সাথে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে। বিশ্বকাপ শেষে আবার আলোচনায় বাংলাদেশ। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে লিওনেল মেসির বিশ্বজয় সব উল্লাসের বাঁধ ভেঙেছে দেশটিতে। সামাজিক গণমাধ্যম থেকে শুরু করে দেশের কোণায় কোণায় রাস্তাঘাটে চলেছে আর্জেন্টাইনদের বিশ্বকাপ জয় উদযাপন। হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে বাংলাদেশের এই সমর্থন নজরে এসেছে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনেও। বিশ্বকাপ জয়ের পর দিনই বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দেশটির ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর সোমবার কয়েকটি দেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজেদের অফিসিয়াল টুইটারে পোস্ট করেছে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশন। সেখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি কেরালাসহ সমগ্র ভারত এবং পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। তবে বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের নাম। টুইটারে বাংলাদেশে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উল্লাসের একটি ভিডিও শেয়ার করে তারা লিখেছে, ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ। ধন্যবাদ কেরালা, ভারত ও পাকিস্তান। তোমাদের সমর্থন অসাধারণ ছিল।’ এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ বাংলাদেশের সাথে আর্জেন্টিনার সম্পর্ককে বেশ জোরালো করেছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশিদের অভাবনীয় সমর্থন দেশটিকে অভিভূত করেছে। ফলে বাংলাদেশে আবারো ৪৪ বছর পর নিজেদের দূতাবাস চালু করতে চাচ্ছে দেশটি।

এছাড়া বাংলাদেশের বন্দনায় মেতে ওঠে আর্জেন্টাইন মিডিয়া। বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনার দূরত্ব প্রায় ১১ হাজার মাইল। দুই গোলার্ধের দুই দেশ। তারপরও ফুটবল দুই দেশকে এক বৃত্তে বেঁধেছে। বাংলাদেশের জনগণের ফুটবলপ্রেমে বিস্মিত আর্জেন্টিনা। মুগ্ধ বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের লিওনেল মেসি, ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখে। বিশ্বের আর কোনো দেশের ফুটবলপ্রেমীরা এতটা উচ্ছ্বসিত হননি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে। ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারানোর পর রাতের বাংলাদেশ উৎসবমুখর হয়ে পড়েছিল। গোটা দেশে আনন্দের বান লেগেছিল। আর্জেন্টিনার মিডিয়ায় বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের এই উৎসবের খবর বড় করে প্রকাশিত হয়েছে। বন্দনায় মেতেছে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় তিন যুগ পর। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার নেতৃত্বে সর্বশেষ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আলবিসেলেস্তারা। এবার মেসির হাত ধরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় মিডিয়া বুয়েন্স এইরেস টাইমন্স তাদের প্রতিবেদন শুরু করেছে ১৮ বছর বয়সী নেফাউর রহমান জিয়ানের মন্তব্য দিয়ে। মেসি ও আর্জেন্টিনার ভক্ত জিয়ান। ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে কেঁদেছেন জিয়ান। তার এই কান্না ছিল আনন্দের। তবে বলেছেন, ‘আমি জানি না আমি কেন কাঁদছি। কিন্তু আমি তার জন্য কাঁদছি। এই “তিনি” লিওনেল মেসি।’ বাংলাদেশের এই ভালোবাসা, এই আবেগ ছুঁয়ে গেছে আর্জেন্টিনাকে।