কাওসার আলী: ফুটবল থেকে পেয়েছেন আর হকিকে দিয়েছেন

আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৯

কাওসার আলী। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল এবং হকি খেলেছেন, এমন কীর্তি রয়েছে প্রতাপ শংকর হাজরা, রামা লুসাই আর কাওসার আলীর। আবার হকি কোচ হিসেবেও কাউসার আলী সর্বজনশ্রদ্ধেয় নাম। তার ভাষায়, ‘ফুটবল থেকে আমি শুধু পেয়েছি। কিন্তু হকিকে আমি দিয়েছি।’
কাওসার আলীর জন্ম ১৯৫৮ সালে, যশোরে। নিজ জেলার হয়েই ১৯৭৪ সাল থেকে টানা এক যুগ খেলেছেন জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। শিরোপা জেতেন ১৯৭৬ সালে। ১৯৭৫ সালে ওয়ারী ক্লাবের হয়ে পেশাদার ফুটবলের সূচনা। সেরা সময় কাটিয়েছেন ১৯৭৮-৮২ সাল পর্যন্ত টিম বিজেএমসিতে। ১৯৭৯ সালে জিতিয়েছেন লিগ শিরোপা। ১৯৮৪ সালে ওয়ারী ক্লাবে খেলেই শেষ করেন ফুটবল ক্যারিয়ার। ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালের এএফসি যুব চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জার্সি গায়ে চাপান। ১৯৭৮ সালে ছিলেন ব্যাংকক এশিয়ান গেমসের বাংলাদেশ দলে। খেলেছেন দেশের মাটিতে এশিয়া কাপ কোয়ালিফাই আর কুয়েতে অনুষ্ঠিত মূলপর্বে।
ফুটবলের কুশলী মিডফিল্ডার কাওসার আলীর শুরুটা হকি দিয়ে। ১৯৭৪-৮৬ পর্যন্ত যশোর জেলার হয়ে জাতীয় হকি খেলেছেন। পেশাদার হকিতে শুরু আর শেষ ওয়ারী ক্লাবে। ১৯৭৫-৮৫ পর্যন্ত হকি ক্যারিয়ারে ওয়ারী ছাড়াও খেলেছেন সাধারণ বীমা আর সোনালী ব্যাংকের হয়ে। ১৯৭৭ সালে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন টেস্টের হকি সিরিজে অংশ নেন লাল-সবুজ জার্সিতে।
কাওসার আলী জানান, ‘১৯৭৪ সালে যশোরের হয়ে ঢাকায় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যাই। হকির কিংবদন্তি সাদেক ভাই আমার খেলা দেখে মুগ্ধ হন। সংগঠক হাশিম ভাই আর মইন ভাই ওয়ারী ক্লাবে খেলার জন্য আমাকে নিয়ে আসেন। তারা জানতে পারেন, আমি ফুটবলটাও খারাপ খেলি না। আমাকে ওয়ারী ক্লাবের ফুটবল দলেও নেওয়া হয়। এভাবেই ফুটবল আর হকির ক্যারিয়ার একই সঙ্গে শুরু আমার।’
কাওসার ১৯৭৮ সালের এশিয়ান গেমসে ফুটবলের সঙ্গে হকি দলেও সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু দুটি খেলাতে একই টুর্নামেন্টে দেশের হয়ে খেলা সম্ভব না। তিনি বেছে নেন ফুটবলকেই। অকপটে জানালেন, ‘হকির তুলনায় ফুটবল জনপ্রিয়। ফুটবল খেলে খ্যাতির সঙ্গে আর্থিক উপার্জনের সম্ভাবনাও বেশি। সব দিক বিবেচনা করেই হকির জাতীয় দলের ক্যাম্পে আমি যোগ দেইনি।’
খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবলকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কিন্তু অবসরের পর হকিতে উচ্চতর কোচিং সার্টিফিকেট নেন স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে। কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু ১৯৮৫ সালে ওয়ারী ক্লাবে। তার অধীনে মোহামেডান, আবাহনী লিগ শিরোপা জিতেছে। দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী, আজাদ স্পোর্টিংয়ের ডাগ-আউটে। ছিলেন মিয়ানমার অনূর্ধ্ব-২১ আর বাংলাদেশ যুব হকি দলের কোচ।
১৯৮৬-২০১৭ পর্যন্ত কাউসার আলী বিকেএসপির প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন। বিকেএসপির সবার প্রিয় ‘কাওসার স্যার’-এর হাতে গড়ে উঠেছে রাসেল মাহমুদ জিমি, রাসেল খান বাপ্পির মতো দেশসেরা তারকা। ২০০৫ সালে ভারতে কাওসার আলীর বিকেএসপির জুনিয়র হকি দল নেহরু কাপ জয় করে তাক লাগিয়ে দেয়। জাতীয় হকিতে ঢাকা জেলাকে ১৫ বার আর বিকেএসপিকে তিনবার শিরোপা জিতিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যা অনন্য কৃতিত্ব। তিনি বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন এবং ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য, কোচেস কোর্স কো-অডিনেটর এবং কোচিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এশিয়ান হকি ফেডারেশনের ডেভেলপমেন্ট ও এডুকেশন কমিটির সদস্য হিসেবে। ছিলেন এশিয়ান হকি ফেডারেশনের কোচেস এডুকেটর। এশিয়ান হকি ফেডারেশনের গভর্নেন্স প্যানেলেরও সদস্য ছিলেন।
বর্তমানে যশোরেই পালন করছেন সাচ্চু ফুটবল একাডেমির পরামর্শক আর সভাপতির দায়িত্ব। নারী হকি উন্নয়নে জাতীয় দলের কোচ তরিকুজ্জামান নান্নুর অনলাইন কোচিং কার্যক্রমে সহায়তা করছেন। দেশের ফুটবল আর হকির জগতে পরিচিত মুখ কাওসার আলী রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো
স্বীকৃতি পাননি। খেলোয়াড় হিসেবে সাফল্য বাদ দিলেও তিন দশকের বেশি সময় ধরে হকি কোচ হিসেবে তার অবদান অসামান্য।