১১-১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জুনিয়র (অনূর্ধ্ব-২১) এশিয়া কাপ হকি আসর। ওমানের মাস্কটে অনুষ্ঠিতব্য টুর্নামেন্টের চূড়ান্তপর্বে জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশের পুরুষ আর নারী হকি দল। এটি ২০২৫ সালের জুনিয়র বিশ্বকাপ হকির বাছাইপর্ব হিসেবেও বিবেচিত হবে।
আসন্ন জুনিয়র এশিয়া কাপ হকিকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি ক্যাম্প নির্ধারিত ছিল জার্মানিতে। তবে ২১ আগস্ট থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রস্তাবিত অনুশীলন ক্যাম্প বাতিল করা হয়েছে। সফরের জন্য বাংলাদেশ বহরে রাখা হয়েছিল অনূর্ধ্ব-২১ দলের ১০-১২ জন খেলোয়াড়। সফর বাতিল করায় জুনিয়র এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পারফর্ম্যান্স নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। হকি ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর গেরহার্ড পিটারের উদ্যোগে জার্মানিতে মিলেছিল অনুশীলনের সুযোগ। ক্যাম্প বাতিল হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ গেরহার্ড জানিয়েছেন, ‘জুনিয়র এশিয়া কাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং জার্মানির সঙ্গে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এবং ছয় সপ্তাহ অনূর্ধ্ব-২১ দলের সদস্যদের জন্য জার্মানিতে ক্যাম্প আয়োজনের ব্যবস্থা করেছিলাম। খেলোয়াড়দের সফরের যাবতীয় খরচ ছাড়াও পকেটমানি প্রদান করার কথা ছিল জার্মানির একাধিক ক্লাবের। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সফর বাতিল করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের হকির জন্য মোটেও ভালো খবর না।’
জার্মানি সফরের হকি বহরে ছিলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ আর ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তারা দুজনই ২০১৯ সালে বাংলাদেশের আলোচিত ক্যাসিনো-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পালিয়েছেন সাঈদ, সম্রাট। এমনকি পাত্তা নেই যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল এহসানসহ ফেডারেশনের অনেক কর্তার। বর্তমানে হকি ফেডারেশন চলছে সভাপতি বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের নির্দেশে। মূলত বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্যই জার্মান সফরের ‘জিও’ বা সরকারি আদেশ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া জুনিয়র এশিয়া কাপ সামনে রেখে পুরো অনূর্ধ্ব-২১ দলটাকেই জার্মানি পাঠালে ঠিক হতো বলে মনে করছে হকি ফেডারেশন। খণ্ডিতভাবে পাঠিয়ে লাভ নেই। সফর বাতিল করার এটাও একটা কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশের হকি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে তুঘলকি কা- কম হয়নি। বিগত লিগ নিয়ে হয়েছে তুলকালাম। দুই চির-প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান এবং আবাহনীর ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। লিগে আবাহনী আর মেরিনার্সের পয়েন্ট সমান হলেও প্লে-অফ হয়নি। ফেডারেশনের বোর্ড মিটিংয়ে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় আবাহনী আর মেরিনার্সকে। যা ছিল বাইলজের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া ডিসিপ্লিনারি কমিটি কর্তৃক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে হকির অন্যতম বড় তারকা রাসেল মাহমুদ জিমিসহ অনেকের ওপর নেমে আসে শাস্তির খড়গ। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্যের নামই জানা নেই কারও। ধারণা করা হয়, সব সিদ্ধান্ত ছিল দাপুটে সাধারণ সম্পাদক সাঈদের একক। বোর্ড সভা আর কমিটির নামে করা হয়েছে প্রহসন।
হকিতে সাঈদের একক আধিপত্য ওপেন সিক্রেট। ফেডারেশনের তহবিল প্রায় শূন্য। জেলা পর্যায়ে দূরের কথা, খোদ ঢাকা লিগের আয়োজন নিয়মিত না। ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি আয়োজনের মাধ্যমও আর্থিক দুর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। রাজনৈতিক খুঁটির জোরে সাঈদ গং ফেডারেশনের নির্বাচনকেও প্রভাবিত করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংস্কার চলছে ক্রীড়াঙ্গনে। হকির সাবেক তারকা ফরোয়ার্ড রফিকুল ইসলাম কামাল বলেছেন, ‘সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে। আমরা চাই ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কারের ছোঁয়া হকিতেও লাগুক। যারা হকিতে অবদান রেখেছেন, এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সাবেক তারকা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘৭-৮ বছর ধরে হকিতে যা হয়েছে, তা কারও কাম্য নয়। ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত হয়েছে। যোগ্য লোকদের মূল্যায়ন হয়নি কিন্তু সংগঠকদের কারণে হকিতে উন্নতি হচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকজন মিলে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অযোগ্যদের বসানো হয়েছিল।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh