
বাজারে ডিমের দাম বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। ছবি: সংগৃহীত
ডিমের বাজারে অস্থিরতা থামছেই না। অনেক দিন ধরেই ডিমের দাম বাড়তি। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ উঠে আসছে। ইতোমধ্যে ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করেছে সরকারও। এদিকে খামারিদের দাবি, মূলত পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পকেটেই যাচ্ছে ডিমের বাড়তি দামের টাকা।
তারা জানিয়েছেন, খামারিরা একটি ডিমে লাভ করতে পারেন ২০ পয়সা। অথচ খামার থেকে ডিম কিনে এনে আড়তে পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতি ডিমে লাভ করছেন দুই টাকা। খুচরা বিক্রেতারাও প্রতি হালি ডিমে লাভ করছেন দুই টাকা। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের এমন গলাকাটা লাভে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতাদের। ডিমের বাজারে অভিযান চালিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না ভোক্তা অধিদপ্তর।
পাবনার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম ১৫৮ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকার বেশি। দোকানভেদে ডিমের দামে কিছুটা কমবেশি রয়েছে। গলির ভেতর বা টঙ দোকানগুলোতে আরও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। খামার থেকে পাইকাররা ১১ টাকা দরে প্রতিটি ডিম বিক্রি করছেন। এতে প্রতি ডজন ডিমের দাম হচ্ছে ১৩২ টাকা অর্থাৎ প্রতি হালি ৪৪ টাকা। খামার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে হালি প্রতি ডিমের দর বেড়ে যাচ্ছে প্রায় ১০ টাকা।
ডিমের লাভ পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পকেটে
খামারিরা জানান, তারা প্রতি ডিমে ২০ পয়সার মতো লাভ করছেন। আর পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ী মিলে এক হালি ডিমেই লাভ করছেন ১০ টাকা। এর অর্থ প্রতি ডিমেই তারা লাভ করছেন আড়াই টাকা।
তারা জানান, কারসাজি কিন্তু পাইকার ও খুচরা ব্যসায়ীদের মধ্যে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ডিমের বাজার সহনশীল হবে। বড় বড় কোম্পানি এবং তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি মিলে এই ডিমের বাজার অস্থির করে ফেলছে। প্রান্তিক খামারিরা ডিমের দাম নির্ধারণ করে না। সিন্ডিকেট ডিমের দাম বাড়ালে খামারি বাড়তি দামে বিক্রি করে। সিন্ডিকেট দাম কমালে খামারি কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
পাবনায় বিভিন্ন খামারে সরকার নির্ধারিত ১১ টাকা দরে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি ডজন ডিমের দাম হচ্ছে ১৩২ টাকা।
এদিকে জেলার বড় পাইকারি ডিমের বাজার টেবুনিয়া আড়তে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৬ টাকা দরে। প্রতিটি ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খামার থেকে পাইকারি আড়তে ডিমের দামে পার্থক্য ২০ থেকে ২৫ টাকা। তার মানে খামার থেকে পাইকারি বাজারে ওঠার পরই এক ডিমের দাম দুই টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাইকারি বাজার থেকে জেলা শহরের খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম ১৫৮ থেকে ১৬০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি ৫৩ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের খুচরা ডিম বিক্রেতারা বলেন, তারা প্রতিটি ডিমে ৫০ পয়সা পর্যন্ত লাভ করেন। এতে প্রতি ডজনে ৫-৬ টাকা পর্যন্ত লাভ হয় তার। প্রতি হালিতে লাভ করেন দুই টাকা। তবে জেলার অনেক জায়গায় খুচরা প্রতি হালি ডিম ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দোকানভেদে ডিমের দামে কিছুটা কমবেশি রয়েছে।
এদিকে পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, খামার থেকে ডিম সংগ্রহের পর পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ তাদের কিছু ব্যয় হয়। অন্যদিকে ভেঙে কিছু ডিম নষ্ট হয়। এজন্য খরচ বেড়ে যায়। লাভের কিছু অংশ সেখানে চলে যায়।
কারসাজি দেখছে সরকার
এদিকে ডিমের দাম বাড়ানোর পেছনে বাজারে কারসাজি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ডিম দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
সেখানে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা দাবি করছিলেন ডিমের সংকট আছে। আমদানির খবরে ডিমের দাম কিছুটা কমে গেল। তাহলে বোঝা যায় ডিমের দাম বৃদ্ধি সেটা কারসাজি। ডিমের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটই বড় কারণ।’
তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের কারসাজি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে ডিমের দাম কমাতে উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো ও ফিডের দামের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে।’