Logo
×

Follow Us

পণ্যবাজার

বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম চড়া

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ১৯:৪৫

বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম চড়া

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ‘সরবরাহ ঘাটতির’ কথা বলে সবজির দাম বাড়িয়েছে বিক্রেতারা। সব ধরনের সবজিতেই এক সপ্তাহ আগের চেয়ে শুক্রবার প্রায় ১০ টাকার মতো দাম বেড়েছে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে, আর ক্রেতাদের প্রতি কেজি শসা কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।

বাজারে প্রতি কেজি ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, ওস্তা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি ও প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ‘বৃষ্টির কারণে’ দাম আর কমেনি কাঁচা মরিচের। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে একদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ দাম উঠেছে করলার। বৃহস্পতিবার ৪০ টাকা করে বিক্রি হলেও শুক্রবার বিক্রি চলছে ৮০ টাকা কেজি দরে।

সবজি বিক্রেতা মো. খোকন মিয়া বলেন, “গতকাল ৩০ টাকা কেজি দরে কিনে বিক্রি করছি ৪০ টাকা। আইজ সকালে মাল দেহি কম আইছে। তাই দাম বেশি। কিনছিই ৫০ টাকা থেকে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। একেক মালের একেক দাম। বেশি দিয়া কিনছি তাই আইজ বেশিই বেচতাছি। আইজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বেচি।”

তিনি আরও বলেন, “বৃষ্টির কারণে সবজি নষ্ট হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম। সেজন্য দাম একটু চড়া।”

তিনি আরও জানালেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে অন্তত ১০ টাকা করে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি।

সবজি কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. জামাল মিয়া বলেন, “গত শুক্রবারও এই বাজারে আসছিলাম। তখন দাম মোটামুটি কমের মধ্যেই ছিল। আজ আর সেই দাম পাচ্ছি না। সব জিনিসেই দাম আজ বাড়তি। দোকানদাররা বলতেছে মাল নাকি কম।”

কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে মুরগি-মাছে

সপ্তাহখানেক ধরে ২২০ টাকায় বিক্রি হওয়া সোনালি হাইব্রিড মুরগি ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে, আর সোনালি পাকিস্তানি হিসেবে পরিচিত মুরগি সপ্তাহখানেক ধরে বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকায়, শুক্রবার দেখা গেল বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা দরে।

আর ব্রয়লার একদিনের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা কেজি দরে।

কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “গতকাল পর্যন্তও দাম কম ছিল। আজ দাম বেশি। আজ ১৮৫ টাকার নিচে মুরগি নাই।”

এদিকে মুরগির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে ডিমের বাজারও। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমে বেড়েছে অন্তত পাঁচ টাকা করে। তবে হালি হিসেবে এই বাজারে দামে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। এই বাজারে লাল ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে আগের দর ৪৫ টাকাতেই, আর হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা হালিতে।

ডিম বিক্রেতা রাসেল মিয়া বলেন, “এক সপ্তাহের তুলনায় প্রতি ডজন ডিমে বাড়ছে ৫ টাকা কইরা। কিন্তু এই দামে খামারিগো নাকি লস হয়। সবকিছুর যে দাম বাড়তেছে, ডিমের দাম কিন্তু তেমন বাড়েনি।”

বাজারে ক্রেতাদের দেড় কেজি আকারের রুই কিনতে হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে, দেড় কেজির চেয়ে বড় আকারের রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। বাজারে ‘গরিবের মাছ’ খ্যাত পাঙ্গাস মাছের দরও উঠেছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।

মাছ বিক্রেতা মো. সেলিম মিয়া বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে সব ধরনের মাছেই ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেশি।

বাজারে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে ১২০০ টাকা দরে, আর গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ টাকা দরে কিনছেন ক্রেতারা।

নিম্ন মূল্যে দাম স্থিতিশীল রয়েছে আলুতে

আলুর দাম এখনও নিম্নমূল্যেই স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে। ক্রেতারা অন্য সবজির দরে কিছুটা হতাশ হলেও যেন হাসি মিলছে আলু কিনতে গিয়েই।

তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা নূরে আলম বলেন, “আলুর দাম ঠিক আছে। সবসময় এমন দাম থাকলে তো ভালোই।”

তবে এ দরে কৃষকের লোকসান হওয়ার কথা জানালেন বিক্রমপুর ট্রেডার্সের বিক্রেতা মো. জাকির শেখ। বললেন, “গেল বছর এই সময়ে আলুর দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। অধিক লাভের আশায় আলু চাষির সংখ্যা বেড়েছে। এবার কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনের চেয়েও বেশি উৎপাদন হয়েছে। আলুর প্রচুর সরবরাহ। তাই দাম পড়ে গেছে।”

আলুর মতোই এক-দুই সপ্তাহ ধরে আদা-রসুনের দর স্থিতিশীল আছে বলে জানালেন বিক্রেতা মো. ফারুখ হোসেন। তিনি বলেন, “এগুলোতে দাম বাড়ে নাই বা কমেও নাই। শুধু পেঁয়াজে একটু বাড়ছে।”

গত সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ টাকা কম ছিল। ঈদের আগে দাম বাড়তে পারে বলে জানালেন তিনি।

এই বিক্রেতা কেরালা আদা বিক্রি করছেন ১২০ টাকা কেজি দরে, আর চায়না আদা বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়, দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা।”

এই বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ তিনেক আগেও প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সামনে আরও দাম বাড়ার ইঙ্গিত দিলেন ব্যবসায়ীরা।

বেসরকারি চাকরিজীবী আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, “পেঁয়াজের দর কয়েক সপ্তাহ আগেও তো ৪০ টাকা ছিল, এখন ৫৫ টাকা করে কিনলাম। এখন মনে হচ্ছে, পেয়াজের দাম বাড়তেই থাকবে।”

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫