Logo
×

Follow Us

পণ্যবাজার

সংযোজিত গাড়ির বাজার ধরতে চাইছে সরকার

বন্ধ হবে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:১৫

সংযোজিত গাড়ির বাজার ধরতে চাইছে সরকার

কয়েক বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে ব্যবহৃত গাড়ি বা রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বন্ধ করে সংযোজিত গাড়ির বাজার তৈরি করতে চাইছে সরকার। তবে সরকার যে পরিকল্পনা করছে, তাতে উদ্বেগ জানিয়েছে ব্যবহৃত গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা।

বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে বারভিডার নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, দেশীয় গাড়ির শিল্প কারখানা গড়ে উঠুক, তারা এটি চান। পাশাপাশি ক্রেতাদের চয়েসের স্বাধীনতাও রাখা উচিত। তবে সরকার বলছে, কিছু ব্যবসায়ী এতে আপত্তি করলেও দেশের স্বার্থে এটা করা জরুরি।

সরকার যে অটোমোবাইল ইন্ড্রাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি-২০২০ খসড়া তৈরি করেছে, সেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, স্থানীয়ভাবে সংযোজিত গাড়ির বাজার তৈরি করার লক্ষ্যে ব্যবহৃত গাড়ির আমদানি আস্তে আস্তে কমিয়ে দেয়া হবে। এভাবে ছয় বছরের মধ্যে সব ধরনের রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে।

বর্তমানে পাঁচ বছর পর্যন্ত পুরনো গাড়ি আমদানি করা যায়। তবে ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বছর থেকে তিন বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে। তৃতীয় বছর থেকে তিন বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি বন্ধ, চতুর্থ বছর থেকে দুই বছরের বেশি পুরনো এবং পঞ্চম বছর থেকে এক বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে। ষষ্ঠ বছর থেকে পুরোপুরি রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশি সংযোজিত গাড়ির বাজার উৎসাহিত করতে পুরনো গাড়ির ওপর ১০ শতাংশের বেশি অবচয় হিসাব করা যাবে না। তবে দেশি সংযোজিত গাড়ির কিনতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নানা প্রকল্পে সহায়তা করবে সরকার।

দেশে বর্তমানে সরকারিভাবে প্রগতি ইন্ড্রাস্ট্রিজ জাপানি কোম্পানি মিতৎসুবিসির নকশায় গাড়ি সংযোজন করে থাকে। এছাড়া পিএইচপি মোটরস নামের চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার প্রোটন গাড়ির সংযোজন করছে। দেশে গাড়ি সংযোজন কারখানা গড়ে তোলার আগ্রহ দেখিয়েছে ভারতীয় টাটা এবং মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা কোম্পানিও।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ডড ভেহিকেল ইমপোর্টারস অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) বলছে, দেশে গাড়ি উৎপাদন বা সংযোজনের উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদা বা পছন্দের অধিকারও যেন অক্ষুণ্ন থাকে। রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তারা সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

বারভিডার সভাপতি আবদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বলেছি, আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত দেশে গাড়ি তৈরির পাশাপাশি পুরনো গাড়ি আমদানি হয়। আমরা গাড়ি উৎপাদনের বিরোধী নই, সেটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু গ্রাহকদের পছন্দ, চাহিদার বিষয়টিও যেন বজায় থাকে। ফেজআউটের কথাটা যথাযথ হয় না। আমাদের বাজারটা বড় নয়। কোনো একটা কোম্পানি বা একটা দুইটা কোম্পানি এতো গাড়ি তৈরি করতে পারে না। উৎপাদন করতে গিয়ে একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা, যেখানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ আছে, সেটা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

বারভিডার হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর যাত্রীবাহী ১৫ হাজার গাড়ির চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদার ৮৫ শতাংশই রিকন্ডিশনড গাড়ি পূরণ করে। বাংলাদেশে মূলত জাপান থেকে ব্যবহৃত গাড়ি আমদানি করা হয়। এসব গাড়িতে পাঁচ বছর পর্যন্ত অবচয় সুবিধা পাওয়া যায়। জাপানের মানে তৈরি হওয়া এসব গাড়ি টেকসই হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের কাছে পুরনো বা ব্যবহৃত হলেও এসব গাড়ির জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই খাতে বিশ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আর ৩০ হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছেন বলে বারভিডা জানিয়েছে।

মিরপুরের মুনমুন চৌধুরী এরকমই রিকণ্ডিশনড গাড়ি কিনেছেন। তিনি বলেন, নতুন গাড়ির দামের চেয়ে এই গাড়ির দাম কম। আমার বন্ধু-আত্মীয়স্বজনরাও রিকন্ডিশনড গাড়ি কিনতে পরামর্শ দিয়েছেন। একে দাম কম, আবার টেকসই। সেই বিশ্বাসের কারণেই আমি রিকন্ডিশড গাড়ি কিনেছি।

তবে বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন গণমাধ্যমকে বলেন, কোন একটি জায়গা থেকে তো আমাদের শুরু করতে হবে। যখন কিছু শুরু হয়, তখন অনেক আপত্তি আসে। আমাদের গাড়ির বাজার যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে। অনেক কিছুতে আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি। এখন নিজেরা করা উচিত।

তবে মানুষের গাড়ি বেছে নেয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে যাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রী বলেন, চয়েস কেন সীমিত হবে? নতুন গাড়ি আসবে, পুরনো গাড়ির কেনার চেয়ে মানুষ নতুন গাড়ি কিনবে।

বারভিডার তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর দেশে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি হয়েছিল ২৩ হাজার ৭৫টি। এতে সে অর্থবছর এ খাত থেকে সরকারের শুল্ককর আদায় হয় দুই হাজার ৬৪৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

মাসিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১ মাসেই রিকন্ডিশনড গাড়ির আমদানি কমেছে। এর মধ্যে জুনে সবচেয়ে বেশি আমদানি কমেছে। শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এপ্রিলে আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় আমদানি বেড়েছে।

বারভিডার তথ্যমতে, যদিও এর আগে ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বেড়েছিল। এর মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি হয়েছিল সাত হাজার ৩৫৩টি।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছিল ১৪ হাজার ৪২৭টি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিকন্ডিশনড আমদানি আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৫৫টি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৪৬৭টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২০ হাজার ১৪৯টি ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ২৩ হাজার ৭৫টি গাড়ি।

এদিকে ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছিল যথাক্রমে ৮১০ কোটি ২০ লাখ টাকা, এক হাজার ৮৮৫ কোটি, দুই হাজার ৩৬৩ কোটি ২০ লাখ, দুই হাজার ৫৯০ কোটি ২৫ লাখ ও দুই হাজার ৭৪২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫