
পাইকারি বাজারে গত তিন দিনে চিনির দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। ছবি: সংগৃহীত
দেশের
ভোগ্যপণ্যের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চিনির দাম
আরো এক দফা বেড়েছে।
চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত তিন দিনে
পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে
১০০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা
জানান, গত এক সপ্তাহে
আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর কিছুটা বৃদ্ধি
পাওয়ায় দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে
আমদানিকারকরা।
দেশের
বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২
কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে
দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে।
গত তিন দিন আগেও
প্রতি মণ চিনি দুই হাজার
৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে তিন
দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে চিনির দাম বেড়েছে মণে
১০০ টাকা।
বাজারে
থাকা বিভিন্ন কোম্পানির চিনির মধ্যে বর্তমানে এস আলম দুই
হাজার ৮০০ টাকা, মেঘনা
গ্রুপের ফ্রেশ দুই হাজার ৭৮০
টাকা ও সিটি গ্রুপের
ইগলু ব্র্যান্ডের চিনি দুই হাজার
৭৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত আট থেকে নয়
মাসে খাতুনগঞ্জসহ দেশীয় বাজারে চিনির বাজার উর্ধ্বমুখী। এই সময়ে চিনির
দাম মণে ৫০০ টাকা
পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ গত তিন দিনে
চিনির দাম বেড়েছে ১০০
টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের উর্ধ্বমুখী বুকিংয়ের কারণে মূলত আট থেকে
নয় মাস আগে থেকে
দেশীয় বাজারে চিনির দাম উর্ধ্বমুখী হয়
বলে জানান খাতুনগঞ্জের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা।
মাঝখানে
কিছু দিন স্থির থাকলেও
আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক সপ্তাহ
থেকে পণ্যটির দাম কিছুটা উর্ধ্বমুখী
হওয়ায় দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দাম বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের এক পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী বলেন, ‘দেশীয়
বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই।
চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত চিনি মজুদ রয়েছে।
তারপরেও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করে চিনির বাজার
নিয়ন্ত্রণ করছে।’
খাতুনগঞ্জের এক চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বলেন, গত এক সপ্তাহে
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মণ চিনির দাম দুই ডলার
পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে
২০ ডলারে। মণপ্রতি ৫৬০ টাকা আমদানি
ও রিফাইন্ড খরচ যোগ করে
প্রতি মণ চিনির দাম হয় দুই
হাজার ৩৬০ টাকা।
তিনি
আরো জানান, এক সপ্তাহ আগে
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হয়েছে
১৮ ডলারে। মণপ্রতি ৫৬০ টাকা খরচ
যোগ করে গত সপ্তাহে
প্রতি মণ চিনির ক্রয়মূল্য ছিল দুই হাজার
১৮০ টাকা। সেই হিসেবে, এক
সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মণ চিনির দাম ১৮০ টাকা
পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়
দেশিয় বাজারেও পণ্যটির দাম কিছুটা উর্ধ্বমুখী
হয়েছে।
পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা জানান,
বেসরকারি কোম্পানির বিপরীতে রাষ্ট্রায়াত্ব চিনির সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিজেদের
ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো।
আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধির অজুহাতে
স্থানীয় বাজারে কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে বুকিং দেওয়া পণ্যগুলো বাজারে পৌঁছতে কমপক্ষে আরো দুই মাস
সময় লাগবে।
আরেক পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি মণ চিনি আমদানিতে খরচ পড়ছে দুই হাজার ৩৬০ টাকা। কিন্তু প্রতি মণ চিনিতে ৪৪০ টাকা মুনাফা করে আমদানিকারকরা চিনি বিক্রি করছে দুই হাজার ৮০০ টাকায়। যা খুবই অস্বাভাবিক।’
তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে, বিষয়টা সত্য। কিন্তু বেশি দামে বুকিং হওয়া চিনি এখনো বাজারে পৌঁছেনি। বর্তমানে বাজারে যেসব চিনি রয়েছে তা আগের বাড়তি দামে কেনা।’
বাংলাদেশ
চিনি ও খাদ্য শিল্প
করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) ও টিসিবির তথ্যমতে,
প্রতিবছর দেশে চিনির মোট
চাহিদা ১৫-১৭ লাখ
টন। মোট চাহিদার এক
থেকে দেড় লাখ টন
চিনির যোগান আসে রাষ্ট্রায়াত্ব ১৫
কারখানা থেকে।
তাছাড়া
বছরের বিভিন্ন সময় সরকার টিসিবির
মাধ্যমেও কিছু চিনি আমদানি
করে। অর্থাৎ চাহিদার প্রায় সাত থেকে আট
শতাংশ চিনির যোগান আসে সরকারিভাবে। বাকি
চিনির যোগান আসে বেসরকারি কারখানা
থেকে।