Logo
×

Follow Us

পণ্যবাজার

গরিবের আর কিছুই খাওয়ার রইলো না

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২২, ০১:২২

গরিবের আর কিছুই খাওয়ার রইলো না

ঢাকার সবজি বাজার

শাহজাহান পেশায় একজন রিকশাচালক। তার দৈনিক আয় ৯০০-১২০০ টাকার মধ্যে। এই আয়ের মধ্যে রিকশা মালিককে প্রতিদিন আবার ২০০-৩০০ টাকা দিতে হয়। ফলে নিজের প্রতিদিনের খাবার ও দৈনন্দিন খরচের জন্য তার ৬০০ টাকা চলে যায়।

শাহজাহান বলেন, ‘৪ সদস্যবিশিষ্ট আমার একটি পরিবার আছে এবং আমাকে সাবধানে হিসাব করে টাকা খরচ করতে হয়। সাধারণত টাকা বাঁচাতে আমি দিনে এক বা দুই বেলা আটার রুটি খাই। এতে আমার চাল কেনার খরচ কিছুটা বেঁচে যায়।

তিনি জানান, কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। বর্তমানে আটা (ময়দা) এবং মোটা চালের দাম প্রায় একই। এখন প্রতি কেজি আটা এবং মোটা চালের দাম ৫২-৫৫ টাকা। অথচ এক বছর আগেও ৪৫-৫০ টাকায় এক কেজি মোটা চাল এবং ২৮-৩০ টাকায় এক কেজি আটা পাওয়া যেত।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে খোলা এবং প্যাকেটজাত আটার দাম যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ৫৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে, খোলা এবং প্যাকেটজাত ময়দার দাম ৫৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ৫৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে।

যদিও অনেকের দাবি, টিসিবি দেওয়া তথ্য সবসময় সঠিক না। কারণ খুচরা বাজারের বাস্তবিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

চালের বাজারে অস্থিরতার মধ্যে প্রতি কেজি নাজিরশাইল, মোটা ও পাইজাম চালের দাম বেড়ে যথাক্রমে ৮০ টাকা, ৫৪-৫৭ টাকা এবং ৬০-৬৫ টাকা হয়েছে, যা গত সপ্তাহেও ৫-৭ টাকা কমে পাওয়া যেত।

কারওয়ান বাজারের কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মালিক জানান, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে পরিবহন খরচ ও কলকারখানার খরচে।

কারওয়ান বাজারের লক্ষ্মীপুর স্টোরের রবিউল ইসলাম জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর আবারো সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আটা ও ময়দার দাম আরো বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মার্চ থেকে এগুলোর দা বেড়ে চলছিল।

আমিষের মূল উৎস নাগালের বাইরে

বর্তমানে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগি এবং ডিমের দাম বেড়েছে। এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২১০ টাকা। অন্যদিকে, সোনালী মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩১০-৩২০ টাকা। এছাড়া, ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়ে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে।

কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কেজিপ্রতি ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছই নেই। রুই (স্থানীয় কার্প), কাতলা (প্রধান দক্ষিণ এশিয়ান কার্প) এবং পাবদার (ভারতীয় ক্যাটফিশ) পাশাপাশি পাঙ্গাস মাছের (দক্ষিণ এশিয়ান ক্যাটফিশ) দামও বেড়েছে।

আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য অধিকাংশ মধ্যম এবং নিম্ন আয়ের লোকেরাই ওপরোক্ত খাবারের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু চলমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেশির ভাগ প্রাণিজ আমিষই মধ্যম এবং নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।

বেসরকারি চাকরিজীবী সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘গরু বা খাসির মাংস কেনার সামর্থ্য না থাকায় আমি মুরগি খেতাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে আমাকে মুরগিও খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।’

একইসঙ্গে ছাত্র এবং চাকরিপ্রার্থী অমিত সাহা একটি মেসে (ব্যাচেলর বাসা) থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসায় ডিমই ছিল আমিষের প্রধান উৎস। এখন ডিমও ধীরে ধীরে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতি মাসে পাল্লা দিয়ে খাবারের পেছনে ব্যয়ও বাড়ছে।’

ফলের বাজারেও অস্থিরতা

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে বেড়েছে আমদানি ব্যয়ও। এ কারণে ফলের বাজারেও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি বিভিন্ন ধরনের আপেল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৪০-৩০০ টাকায়। অন্যদিকে, প্রতি কেজি কমলা ও মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকায়।

আনারসের দামও আকারের ভিত্তিতে প্রতি দুই পিস ৮০-১৩০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি প্রতি পিস ডাব মিলছে ১০০-১২০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি ডজন লেবু এবং কলা কিনতে যথাক্রমে ৬০ টাকা এবং ৯০-১২০ টাকা গুণতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান বাজারে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য মেলানো যায় না। এ কারণে তিনি এখন বাজারে যেতে ভয় পান।

চিনি: মিষ্টি নাকি টক?

কারওয়ান বাজারে দুদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে ৯০ টাকা হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ৮২ টাকা ছিল।

তবে কেজিপ্রতি প্যাকেটজাত চিনি ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বাজারে এই চিনির সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

বেড়েছে নিত্যপণ্য ও সবজির দামও

জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে পরিবহন খরচও। আর এর প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারেও। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েই চলেছে।

বর্তমানে বাজারে কেজিপ্রতি লাউ , শিম, বেগুন, শসা ও কাঁচা মরিচ যথাক্রমে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ৮০ টাকা,  ৮০ টাকা এবং ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, চিকন মসুর ডালের দাম প্রতি কেজি ১৪০ টাকা এবং মোটা মসুর ডালের দাম কেজিপ্রতি ১১০ টাকায় মিলছে।

এছাড়া,  প্রায় প্রতিদিনই রসুন, আদা, মাংস, পেঁয়াজসহ সবকিছুর দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫