মুরগির বাচ্চার বাড়তি দাম নিয়ে কারসাজি

প্রতিদিন সাড়ে ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে সিন্ডিকেট

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেছেন, সিন্ডিকেট করে মুরগির বাচ্চার বাড়তি দাম নিয়ে একটি চক্র প্রতিদিন সাড়ে ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।

আজ মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলেন এ কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ মুরগীর খাবারের দাম কমানো, বাচ্চার দাম কমানোর দাবি জানান। একইসঙ্গে বিদেশ থেকে ডিম আমদানি না করে দেশীয় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে ডিমের দাম সহনীয় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

সভাপতি সমুন হাওলাদার বলেন, কর্পোরেট গ্রুপগুলো ২০১০ সাল থেকে মুরগির বাচ্চায় সিন্ডিকেট করে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে ছিলো। এরপর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২২ টাকা বের করা হয় এবং লাভসহ ৩২ টাকা দাম বেধে দেয়া হয়। কিন্তু কর্পোরেট অ্যাসোসিয়েশন হাইকোর্টে রিট করে সেই কমিটিকে বন্ধ করে দিয়ে তাদের খেয়াল খুশি মত পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।

কারা সিন্ডিকেট করছে এবং এই সিন্ডিকেট ভাঙার উপায় কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সুমন হাওলাদার বলেন, কর্পোরেট গ্রুপ এই সিন্ডিকেট করছে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে বাচ্চা ও ফিড আমদানির অনুমোদ দিতে হবে। তাহলে ডিম আর আমদানি করতে হবে না। বরং আমরা ডিম রপ্তানি করতে পারবো।

সিন্ডিকেট করে মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে ইলিয়াস খন্দকার বলেন, তিন সপ্তাহ আগে একটি ব্রয়লারের বাচ্চা বিক্রি হতো ৩৫ টাকা। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে একটি বাচ্চার দাম বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। এটা কি ভাবে হলো। বাচ্চার উৎপাদন খরচ তো বাড়েনি। বাড়লেও ১-২ টাকা বেড়েছে। আবার একটি লেয়ারের বাচ্চা ৭৫ টাকা বিক্রি করছে। সোনালী এবং কালার বার্ড একটি বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২২ টাকা, খামারিরা কেনে ৫৮ টাকায়।

তিনি বলেন, এভাবে তারা প্রতিদিন সাড়ে ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। যদি মিডিয়া তাদের কাছে যায় তাদের একটি কমন কথা বলে- গত জানুয়ারি থেকে তারা বাচ্চায় লোকসান দিয়েছে। সেটি পুষিয়ে নেয়ার জন্য তারা বাচ্চার দাম বেশি নিচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত বিষয় সেটা নয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ব্রয়লার বাচ্চার দাম ছিলো ৫৭ টাকা এবং মার্চ মাসে ছিলো ৯০ টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ব্রয়লার বাচ্চা খামারিরা সর্বোচ্চ ১১৫ টাকায় ক্রয় করেছেন, যেখানে তাদের উৎপাদন খরচ ছিলো ৩২ টাকা।

তিনি আরও বলেন, তারা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে। যারা তাদেরকে ধরবে, নিয়ন্ত্রণ করতে তারা তাদের গোলাম হয়ে আছে। প্রাণিসম্পদ তাদের হয়ে কাজ করছে। খামারিদের নিয়ে চিন্তা করে না অধিদপ্তর। তারা চিন্তা করে না খামারিরা দিন দিন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।

ইলিয়াস খন্দকার  বলেন, শবেবরাত, রোজার ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ১৬ ডিসেম্বর এ ধরনের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে অনেক মুরগি চলে। যারা বাচ্চা উৎপাদন করেন এ ধরনের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোর ৪০ দিন আগে বাচ্চার দাম দ্বিগুণ করে দেয়। কারণ ৩৫-৪০ দিন পরে একটি ব্রয়লার বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হয়।

তিনি বলেন, ডিম আমদানি সমাধান হয়। একটি চক্রকে সুবিধা দেয়ার জন্য এই ডিম আমদানির সুবিধা দেয়া হয়েছে। এতে সামনে আরও বিপর্যয় হবে দেশের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য। সাময়িকভাবে ভোক্তা কম দামে খাবে। এই ডিম একদিন ২০ টাকা করে কিনে খেতে হবে, যদি দেশিয় উৎপাদন আমরা ধরে রাখতে না পরি।

তিনি আরও বলেন, বাচ্চা আমদানি করা হোক, ফিড আমদানি করা হোক। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে এক বস্তা ফিডের দাম ২ হাজার ৭০০ টাকা। আর আমরা কিনছি ৩ হাজার ৫০০ টাকা। আবার ভারতে একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ২৮ টাকা, লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম ২৫-৩০ টাকা। খামারি যদি বাচ্চা, ফিড, মেডিসিন কম দামে পায় সিস্টেম অনুযায়ী অটমেটিক মুরগি ও ডিমের দাম কমে যাবে। ভোক্তা কম দামে কিনতে পারবে। এটা হবে একটি দীর্ঘ মেয়াদি ও টেকসই পদ্ধতি।  

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস। উৎপাদন আছে ৫ কোটি পিস। তাই ডিম আমদানি নয়, ডিম ও মুরগি রপ্তানি করার সময় হয়েছে আমাদের। এ জন্য খামারিদের কম দামে ফিড ও বাচ্চা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পোল্ট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৫০-৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। তাদের কর্মসংস্থান রক্ষার তাগিদে ডিম আমদানি বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে তদারকি করে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমিয়ে ডিম ও গুরগির উৎপাদন খরচ কমিয়ে দাম কমানো সম্ভব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //