
প্রতীকী ছবি
সাপ্তাহিক ছুটির দিন। বাবা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। ছয় বছরের মেয়ে তার চারপাশে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।
বাবার মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়ে মেয়ে বলল, বাবা, জানো কী হয়েছে?
মোবাইল ফোন থেকে মুখ না তুলে বাবা বলল, হুম।
তোমাকে একটা মজার কথা বলার ছিল।
হুম।
তোমাকে একটা গল্প বলার ছিল বাবা।
হুম।
ঠিক আছে, তোমাকে তাহলে পরে গল্পটা বলব।
হুম।
মেয়ে ঠোঁট উল্টে সেখান থেকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে বাবার মনে হলো, মেয়েটা গেল কই?
মোবাইল ফোন রেখে এঘর-ওঘর খুঁজে দেখল। কোথাও নেই। মেয়ের মা রান্নাঘরে ব্যস্ত। তাকে জিজ্ঞেস করল। সে বলল, যাবে আর কোথায়? দ্যাখো গিয়ে বারান্দায় হয়তো দাঁড়িয়ে আছে।
আসলেই তাই। বারান্দার রেলিং ধরে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সোনামা এখানে কী করো?
বাবার গলা শুনে মেয়ে ঘুরে তাকাল। তার চোখ ছলছল।
বাবা তাকে কোলে তুলে নিল। অভিমানী মেয়ে এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। সে বাবার কাঁধে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করল।
আরে, কী হয়েছে আমার সোনামার, বলো।
মেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল, না, তোমাকে আমি আর কিচ্ছু বলব না।
কেন বলবে না?
এমনিতেই বলব না। তোমাকে আর কোনো কথা বলব না। মজার কোনো কথা বলব না। যাও তুমি।
কেন, কী হয়েছে আমার সোনামার?
না, তুমি তোমার মোবাইল ফোন নিয়ে থাক। সোনামার তো তোমার দরকার নেই।
বাবা ভেতর থেকে চমকে উঠল। বলল, সরি সোনামা।
সবকিছুতে সরি বললে হয়! (এটা সে তার মাকে প্রায়ই বলতে শোনে। তার কাছ থেকে শিখেছে।)
ঠিকই তো। সবকিছুতে সরি বললে হয় না।
তুমি না সেদিন মাকে বালতির ঘটনা বললে। আমি যদি আরো ছোট হতাম। বাথরুমে খেলতে গিয়ে বালতির মধ্যে পড়ে যেতাম। তুমি কি টের পেতে? তুমি তো ব্যস্ত তোমার মোবাইল নিয়ে।
ছোটরা কি সহজ করে সত্যি কথা বলে!
বাবার বুকটা কেঁপে উঠল। মেয়েকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলল, আমার ভুল হয়ে গেছে সোনামা।
আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু গলার কাছে কেমন যেন দলা পাকিয়ে গেল।
কাছাকাছি থাকা দুটো হৃৎপিণ্ড তখন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত লয়ে চলছে। তিরতির করে বলছে অনেক কিছু। অনেক কথা।