Logo
×

Follow Us

গল্প

ব্যাঙ রাজা ঘ্যাঙরঘ্যাং

Icon

মহিউদ্দীন আহ্মেদ

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২০, ১০:৪১

ব্যাঙ রাজা ঘ্যাঙরঘ্যাং

একদা ব্যাঙ রাজা ঘ্যাঙরঘ্যাং খোয়াব দেখলেন, লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় একটি সোনার কলসের মধ্যে লুকানো আছে তার ভাগ্যলিপি। খোয়াব দেখে তিনি ঘুম ভেঙে ধড়ফড় করে উঠে বসলেন। হাঁসফাঁস করতে লাগলেন। ব্যাঙ রাজার ঘুম ভাঙার সাথে সাথে ব্যাঙ রানীরও ঘুম ভেঙে গেল।   

‘কী হয়েছে মহারাজ? আপনি এমন ছটফট করছেন কেন?’- ব্যাঙ রানী জানতে চাইলেন।

ব্যাঙ রাজা ঘ্যাঙরঘ্যাং উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, ‘পেয়ে গেছি- আমি পেয়ে গেছি!’

‘কী পেয়ে গেছেন জাঁহাপনা?’

‘সেসব পরে শোনো। তার আগে লালমাই পাহাড়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করো রানী!’

রাজার চাওয়া বলে কথা।

ভোরের পাখি ডাকার আগেই এন্তেজাম শুরু হলো। বেরোল ঘোড়াশালের ঘোড়া। হাতিশালের হাতি। গাধাশালের গাধা। সাঁজোয়া বাহিনী। উজির, নাজির, পাইক-পেয়াদার বিশাল বহর নিয়ে ব্যাঙ রাজা যাত্রা করলেন লালমাই পাহাড়ের উদ্দেশে।

রাস্তার দুই ধারে অপেক্ষমাণ জনতা ফুল ছিটিয়ে ব্যাঙ রাজার যাত্রাপথকে রঙিন করে তুলল।

একদিন একরাত পরিভ্রমণ শেষে ব্যাঙ রাজা ঘ্যাঙরঘ্যাং গন্তব্যস্থলে পৌঁছলেন।

কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিল।

লালমাই পাহাড়ের দুই পাশে বহমান দুই নদী। এক পাশের নদীর নাম কঙ্গা। অন্য পাশের নদীর নাম জঙ্গা। বাকি দুই পাশে পাহাড়ি ব্যাঙ বসতি। অর্থাৎ পাহাড়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।

ব্যাপারটা রাজা মশাইকে বলতেই তিনি হুঙ্কার ছেড়ে বলে উঠলেন, ‘রাস্তা নেই তো কী হয়েছে, রাস্তা তৈয়ার করো।’

প্রধান সেনাপতি চিন্তা করে দেখলেন, নদীতে রাস্তা তৈয়ার করা যাবে না। কারণ দুটি নদীই খরস্রোতা। ফলে পাহাড়ি ব্যাঙ বসতির ভেতর দিয়েই রাস্তা তৈয়ার করতে হবে। তাদের সারি সারি ঘর লাগোয়া পাতার ঘর। ভাঙতে সময় বিশেষ লাগবে না।

যে কথা সেই কাজ।

একদল উন্মত্ত সেনাপতি পাহাড়িদের ঘর ভাঙতে গেল। হুড়োহুড়ি লেগে গেল পাহাড়ি পাড়ায়। আশু ঘটনার ভয়াবহতা টের পেয়ে এক বুড়ি ব্যাঙ আহাজারি করতে করতে এগিয়ে এল। সে দুই হাত তুলে মিনতি করে বলল, ‘হায় হায় এ কী কথা! ঘর ভাঙলে আমরা তবে থাকব কোথায়?’

প্রধান সেনাপতি তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, ‘তোমাদের ঘর বড় নাকি রাজার ইচ্ছা বড়?’

বুড়ি ব্যাঙ বলল, ‘নিশ্চয়ই রাজার ইচ্ছা বড়।’

‘তাহলে জলদি সরে দাঁড়াও। দ্রুত পাহাড়ে উঠতে হবে।’

‘ঠিক আছে। কিন্তু তার আগে আমি একবার রাজার সাথে দেখা করতে চাই।’

‘চাইলেই যে কেউ রাজার সাথে দেখা করতে পারে না- এ কথা নিশ্চয়ই তোমার জানা আছে?’

‘যদি তা-ই হয়, তবে আমিও এক পা নড়ব না এখান থেকে।’

প্রধান সেনাপতি মুসিবতে পড়ে গেলেন। ভাবতে লাগলেন, সামনের এ বুড়ি ব্যাঙকে মাড়িয়ে গেলে রাজ্যের সমস্ত ব্যাঙ ফুঁসে উঠবে। পাশের রাজ্যের রাজারা মুখ টিপে হাসবে। সেটা মোটেই হিতকর হবে না। তার চেয়ে বরং একবার রাজার সাথে কথা বলে নেয়া ভালো।

বুড়ির কথা শুনে রাজা ঘ্যাঙরঘ্যাং তেড়েমেড়ে ক্ষেপে গেলেন। না, কোনোমতেই তিনি বুড়ির মুখ দর্শন করবেন না। এসব বুড়ি হলো মামদোভূতের সই। কেঁদেকেটে সয়লাব করতে ওস্তাদ। একে দেখা দেয়ার মানে হলো আরজি মেনে নেয়া। এখান থেকে খালি হাতে ফিরে যাওয়া। কিন্তু সেটা হওয়া চলবে না। কেননা তার সোনার কলস নিয়েই যেতে হবে। ভাগ্যলিপিতে কী লেখা আছে, তা না জানা পর্যন্ত তিনি এক মুহূর্ত স্থির থাকতে পারবেন না। সুতরাং সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল রইল।

বুড়ি ব্যাঙকে গুঁড়িয়ে-মাড়িয়ে গেল হাতির পাল, ঘোড়ার পাল, গাধার পাল। মাটির সাথে মিশে গেল বুড়ি ব্যাঙ। চোখের পলকে পাহাড়ি ব্যাঙ বসতি ধূলিসাৎ হয়ে গেল। শত শত অসহায় ব্যাঙের কান্নাকাটির শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।

রাজা ঘ্যাঙরঘ্যাং তার বাহিনী নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে আরোহণ করলেন।

সবাই এক স্থানে দাঁড়িয়ে রইল। ব্যাঙ রাজা খোয়াবে দেখা স্থানটি খুঁজতে লাগলেন। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলেন সোনার কলসটি। দেখতে পেলেন, বড় একটি পাথরের চাঁইয়ের সুড়ঙ্গ পথে কলসটি সুরক্ষিত রয়েছে। আনন্দে উত্তেজিত ব্যাঙ রাজা সেটি তুলে নিলেন। মুহূর্তকাল বিলম্ব না করে ফিরে গেলেন রাজদরবারে।

দ্বার বন্ধ করে দুরু দুরু বক্ষে সোনার কলসের কাছে গেলেন ব্যাঙ রাজা। কলসের মুখ সালু কাপড়ে আবৃত ছিল। তিনি প্রথমেই সালু কাপড় খুললেন। তারপর কলসের ভেতরে হাত ঢোকালেন। সঙ্গে সঙ্গে ফোঁস ফোঁস শব্দ হতে লাগল। তিনি সাপের ছোবল খেলেন। প্রচণ্ড ভয়ে ও বিষের জ্বালায় ব্যাঙ রাজা ঘ্যাঙরঘ্যাং মূর্ছা গেলেন!

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫