
জনাথন অওয়েগবু নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে করছিলেন। প্রথম দিকের আচ্ছন্ন দিনগুলোতে ‘শুভ বেঁচে থাকা!’ সম্বোধনটি তাঁর জন্য নিছক একটি চলতি সম্বোধনের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। তাঁর হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করত এই শব্দগুলো। যুদ্ধের মধ্য থেকে তিনি পাঁচটি বর্ণনাতীত সৌভাগ্য পরিবহন করে আনতে পেরেছিলেন- তাঁর নিজের, তাঁর স্ত্রী মারিয়ার এবং তাঁদের চার সন্তানের মধ্যে তিন সন্তানের ঘাড়ের ওপরের অবিচ্ছিন্ন মাথাসমূহ। উপরি হিসেবে পেয়েছিলেন তাঁর পুরনো বাইসাইকেলটি, যেটি নিজেও ছিল একটি অলৌকিক ঘটনা, যদিও তাঁদের পাঁচ জনের অবিচ্ছিন্ন মুন্ডুর সৌভাগ্যের সঙ্গে যা কোনোভাবেই তুলনীয় নয়।
বাইসাইকেলটির নিজের একটি ইতিহাস আছে। যুদ্ধ যখন পুরোদমে চলছিল তখন এটিকে ‘জরুরি সামরিক কাজে’ ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাইসাইকেলটি দিয়ে দেওয়া কোনো সহজ বিষয় না হলেও তিনি বাইসাইকেলটি কোনো চিন্তা ছাড়াই দিয়ে দিতে পারতেন, যদি অফিসারটির সততা সম্পর্কে তাঁর একটু আধটু সন্দেহ না থাকত। বিষয়টি অফিসারের ময়লা ছেঁড়া কাপড় বা এক পা নীল এক পা বাদামি হয়ে যাওয়া ক্যানভাস সু, যার ভেতর থেকে আবার পায়ের বুড়ো আঙুল উঁকি দেয় কিংবা বলপয়েন্ট কলমে তাড়াহুড়োর মধ্যে এঁকে দেওয়া তাঁর দুই তারকা সামরিক মর্যাদার ছিল না যে এগুলোই জনাথনের সমস্যা মনে হচ্ছিল; কারণ অনেক ভালো ও বীর সৈনিকের ভূষণই এরকম বা এর চেয়ে খারাপ ছিল।
আসলে বিষয়টা ছিল অফিসারটির নিজের আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণের। এ কারণেই পরে জনাথন ভাবছিলেন তিনি বোধ হয় খুব সহজেই প্রভাবিত হয়ে পড়েছেন এবং তারপরই তিনি তাঁর রাফিয়া থলের ভেতর থেকে দুই পাউন্ড খুঁজে বের করে তা দিয়ে লাকড়ি কিনলেন যা তাঁর স্ত্রী মারিয়া ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে বিনিময়ে মাছ, ভুট্টা ও সঙ্গে করে বাইসাইকেলটিও ফিরিয়ে নিয়ে এলো। ওই রাতেই তিনি বাইসাইকেলটি ঝোপের মধ্যে, যেখানে তাঁর কনিষ্ঠ ছেলেসহ ক্যাম্পে মৃত অন্য ব্যক্তিদের দাফন করা হয়েছিল, সেখানে মাটিতে পুঁতে ফেললেন। এক বছরান্তে আত্মসমর্পণের পর যখন তিনি বাইসাইকেলটি আবার মাটির নিচ থেকে তুললেন তখন এটিতে সামান্য পাম তেল মাখিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কিছু করতে হয়নি। আশ্চর্য হয়ে তখন তিনি বলেছিলেন- ‘ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।’
খুব দ্রুতই তিনি বাইসাইকেলটিকে ট্যাক্সি হিসেবে কাজে লাগানো শুরু করলেন এবং ক্যাম্পের অফিসার ও তাদের পরিবারবর্গকে চার মাইল দূরে পাকা রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে বায়াফ্রান টাকার একটা ছোটখাটো স্তুপ উপার্জন করে ফেললেন। প্রতি ট্রিপে তিনি ছয় পাউন্ড করে নিতেন এবং যাঁদের কাছে এই টাকা ছিল তারাও এই টাকাগুলোর কিছু এভাবে খরচ করে ফেলতে পেরে খুশিই ছিলেন। এক পক্ষকাল পরে তিনি খেয়াল করে খুশি হয়ে উঠলেন যে তাঁর হাতে মোট একশত পঞ্চাশ পাউন্ড আছে।
তারপর তিনি যাত্রা করলেন অ্যানুগুর দিকে; যেখানে আরেকটি আশ্চর্য আনন্দের ঘটনা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার ছিল এটা। ভালো করে চোখ মুছে তিনি আবার তাকালেন এবং দেখতে পেলেন যে ওটা ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। যদিও বলাই বাহুল্য, পাঁচটি মাথা ঘাড়ের ওপর রাখতে পারার থেকে এটাও অবশ্যই একটি ছোট ঘটনা। আশ্চর্য এই ব্যাপারটি হচ্ছে ওগ্যুউই ওভারসাইডে তাঁর ছোট্ট ঘরটি। অবশ্যই ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন! কেননা মাত্র দুই বাড়ি পরেই এক ধনী ঠিকাদারের তৈরি করা ইটের দালানের ধ্বংস স্তূপ পড়ে আছে।
আর এখানে জনাথনের কাদামাটি ও টিনের ঘর মোটামুটি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য দরজা ও জানালাগুলো নেই এবং চালের পাঁচটি টিন উধাও হয়ে গেছে; কিন্তু তাতে কী? অন্য হাজারো লোক একই জিনিসের খোঁজে জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসার আগেই জনাথন তাড়াতাড়ি কিছু পুরনো টিন, কাঠ, ভেজা কার্ডবোর্ড সংগ্রহ করলেন। তারপর জোগাড় করলেন একজন অতি দরিদ্র কাঠমিস্ত্রিকে। পাঁচ নাইজেরিয়ান শিলিং বা পঞ্চাশ বায়াফ্রান পাউন্ডের বিনিময়ে কাঠ, কাগজ আর ধাতুর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দরজা জানালাগুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্য যার যন্ত্রপাতির ব্যাগে ছিল একটি পুরনো হাতুড়ি, একটি ভোঁতা র্যাঁদা এবং বাঁকা ও মরচে ধরা কিছু পেরেক। জনাথন কাঠমিস্ত্রিকে পাউন্ডে মূল্য পরিশোধ করলেন এবং ঘাড়ের ওপর পাঁচটি উৎফুল্ল মাথার অধিকারী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরে উঠে গেলেন।
নতুন জীবনের তাড়নায় তাঁর সন্তানরা সামরিক কবরস্থানের পাশে আম কুড়িয়ে সৈনিকদের স্ত্রীর কাছে এবার কিছু সত্যিকারের পয়সার বিনিময়ে বিক্রি করা শুরু করল এবং তাঁর স্ত্রী প্রতিবেশীদের জন্য সকালের নাশতা ‘আকারা’ গোলা বানাতে শুরু করলেন। পরিবারের আয় করা টাকা নিয়ে তিনি বাইসাইকেল যোগে আশপাশের গ্রাম থেকে টাটকা পাম-ওয়াইন কিনে এনে পুনরায় চালু হওয়া সরকারি টেপ থেকে পানি সংগ্রহ করে ওয়াইনের সঙ্গে উদারভাবে মিশিয়ে সৈনিক ও অন্য টাকাওয়ালা লোকেদের জন্য একটি বার খুলে বসলেন।
প্রথম দিকে দিনে একবার, তারপর একদিন বাদ দিয়ে একদিন, এবং শেষে সপ্তাহে একদিন তিনি পরিস্থিতি বোঝার জন্য কয়লা করপোরেশনে যাচ্ছিলেন। এখানে আগে তিনি একজন খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। শেষমেশ তিনি যেটা আবিষ্কার করলেন তা হলো তাঁর ছোট্ট ঘরটি তাঁর কল্পনার চেয়েও বেশি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। তাঁর বন্ধু অন্য কিছু খনি শ্রমিকেরা যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাঁরা দিনের শেষে বর্নভিটার টিনে ভিক্ষা করে যা সংগ্রহ হতো তা রান্না করে খেয়ে অফিসের বাইরে ঘুমিয়ে থাকত। সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলে গেলেও যখন কেউ বলতে পারল না এখানকার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, জনাথন এখানে সপ্তাহান্তেও আসা বন্ধ করে দিলেন এবং পাম ওয়াইন বারের দিকে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করলেন।
কিন্তু ঈশ্বর যা করেন ভালোর জন্যই করেন। কারণ ট্রেজারির সামনে পাঁচ দিন কড়া রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক ধাক্কাধাক্কি করে বিদ্রোহীদের মুদ্রাগুলো ভাঙানোর পর এখন তাঁর হাতের মুঠোর ভেতরে রয়েছে বিশ পাউন্ড। যখন টাকা বিনিময় শুরু হয়েছিল, দিনটি তাঁর এবং তাঁর মতো অন্যদের জন্য যেন হয়ে উঠেছিল একটি বড়দিন। যে প্রক্রিয়ায় তাঁরা টাকাগুলো ভাঙাতে পারছিল তার নাম ‘এক্স গ্রেশিয়া’ বা ‘কৃতজ্ঞতার নিদর্শন’। যদিও উচ্চারণের কষ্টহেতু মুখেমুখে এর নাম হয়ে গিয়েছিল ‘এগ রাশার’।
পাউন্ড নোটগুলো হাতে আসা মাত্রই জনাথন হাতের মুঠো বন্ধ করে তার ভেতরে শক্তভাবে টাকাগুলো ধরে রাখলেন এবং তারপর মুষ্ঠিবদ্ধ হাত পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন। তিনি অতিসতর্কতা অবলম্বন করছিলেন। মাত্র কদিন আগেই একজন লোককে পাগলের মতো আচরণ করতে দেখেছেন তিনি, যার কাছ থেকে এই সমুদ্রের মতো ভিড়ে এরকম বিশ পাউন্ড নোট কোনো হৃদয়হীন লোক কেড়ে নিয়েছিল। যদিও এমন চরম দুঃখের সময়ে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক না; কিন্তু তবুও সেদিন আক্রান্ত লোকটির অসতর্কতার বিষয়টি সবাই নীরবে খেয়াল করছিল, বিশেষ করে তিনি একটা পকেট বাইরে এনে দেখানোর পর যখন সবাই আবিষ্কার করল যে চোরের মাথা ঢুকে যাবে এরকম একটা ছিদ্র ওই পকেটে আছে। যদিও তিনি অন্য পকেটটি ভালো আছে দেখিয়ে সবাইকে বোঝাতে চেয়েছিলেন টাকা ওই পকেটেই ছিল। যাই হোক, এরকম মুহূর্তে মানুষের অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত।
জনাথন দ্রুত টাকাগুলো বাম পকেটে নিয়ে নিলেন যাতে করমর্দনের প্রয়োজন হলে ডান হাতটা খালি থাকে; কিন্তু তিনি এমনভাবে ওপর দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলেন যেন তার সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করা মুখগুলোকে তিনি দেখতেই পাচ্ছেন না। বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত যেন করমর্দনের কোনোরূপ প্রয়োজন সৃষ্টি না হয় সেটা তিনি নিশ্চিত করেছিলেন এভাবেই।
সাধারণত জনাথনের ঘুম খুব গভীর হয়; কিন্তু আজ তিনি একে একে আশপাশের সমার্থ শব্দ নীরব হয়ে যাওয়া টের পেলেন। এমনকি দূরে কোথাও চৌকিদার রাত একটার ঘণ্টা বাজিয়ে নীরব হয়ে গেল, সেটাও তিনি টের পেলেন। ঘুমিয়ে পড়ার আগে সম্ভবত এটাই তিনি সর্বশেষ টের পেয়েছিলেন। খুব তাড়াতাড়ি অস্বাভাবিকভাবে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় যদিও এটা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
‘কে দরজা ধাক্কাচ্ছে?’ তাঁর স্ত্রী ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।
‘আমি জানি না।’ দম বন্ধ করে তিনিও ফিসফিসিয়ে জবাব দিলেন।
দ্বিতীয় বার যখন ধাক্কাটা আসল তখন সেটা এত জোরে ছিল যে তাতে এই ভাঙাচোরা দরজাটা পড়েই যেতে পারত।
‘কে ধাক্কা দেয়?’ জনাথন শুকনো কাঁপাকাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন।
‘ডাকাত,’ শীতল জবাব এলো। ‘দরজা খোলো’ বলে তারা আবার ভীষণ জোরে দরজায় ধাক্কা দিলো।
মারিয়া প্রথম চিৎকার করে উঠল এবং তারপর শিশুরাও সেই চিৎকারে যোগ দিলো।
‘পুলিশ! ডাকাত! কেউ আছেন! পুলিশ! আমাদের সব নিয়ে গেল! আমাদের মেরে ফেলল! কেউ আছেন! আমাদের বাঁচান! পুলিশ!’
অনেকক্ষণ ধরে এই চিৎকার চলল এবং হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল। হয়তো এই চিৎকারে ডাকাতরা ভয় পেয়ে গেছে। সবকিছু একদম নীরব হয়ে গেল; কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য।
‘তোমাদের শেষ হয়েছে?’ বাহির থেকে একটা গলা জিজ্ঞেস করল। ‘চলো তোমাদের একটু সহযোগিতা করি! তোরা কই রে সবাই!’
‘পুলিশ! ডাকাত! কেউ আছেন! আমাদের সব নিয়ে গেল! পুলিশ!...’
নেতার গলার পাশে কমপক্ষে আরও পাঁচটি গলা শোনা গেল।
জনাথন এবং তাঁর পরিবার এবার ভয়ে একদম স্তব্ধ হয়ে গেল। মারিয়া এবং শিশুরা ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। জনাথন কাতর হয়ে উঠলেন।
ডাকাতদের হুঙ্কারের পর নীরবতার কাঁপন ছিল আরও ভয়ংকর। জনাথন ডাকাত সর্দারকে কথা বলতে অনুনয় করলেন।
‘বন্ধু আমার’ অনেকক্ষণ পরে ডাকাত সর্দার বললো ‘আমরা তো অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমার মনে হয় সবাই এখন ঘুমাচ্ছে তাহলে এখন আমরা কী করব? তোমরা তো বিপদে পড়লে সৈন্যদেরও ডাক, তাই না? নাকি আমরাই তোমাদের হয়ে সৈন্যদের ডেকে দেবো? সৈন্যরা পুলিশের থেকে ভালো, কী বলিস তোরা?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ,’ তার লোকেরা জবাব দিল। জনাথন সম্ভবত এবার আরও বেশি গলার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি আরও কাতর হয়ে উঠলেন, তার পা যেন নিচের দিকে দেবে যাচ্ছিল। গলায় যেন তিনি অনুভব করছিলেন শিরিষ কাগজ।
‘বন্ধু আমার, তুমি আর কথা বলছ না কেন? আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি যে তুমি কী চাও আমরা সৈন্যদের ডাকি?
‘না।’
‘ঠিক আছে। তাহলে এবার কাজের কথায় আসা যাক। আমরা খারাপ ডাকাত নই। আমরা কোনো ঝামেলা চাই না। ঝামেলা শেষ হয়ে গেছে। গৃহযুদ্ধও শেষ হয়ে গেছে। আবার কোনো গৃহযুদ্ধ চাই না আমরা। এখন তো শান্তির সময়। কী বলিস তোরা?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ!’ ভয়ংকর কোরাস জবাব দিল।
‘তোমরা আমার কাছে কী চাও? আমি একজন গরিব মানুষ। আমার যা ছিল সব যুদ্ধে নিঃশেষ হয়ে গেছে। তোমরা কেন আমার কাছে এসেছ? তোমরা জানো কাদের কাছে টাকা আছে। আমরা তো’
‘ঠিক আছে। আমরাও বলছি না তোমার কাছে অনেক টাকা আছে; কিন্তু আমাদের কাছে একটা কানাকড়িও নেই। সুতরাং জানলাটা খোলো আর আমাদের একশ’ পাউন্ড দাও, আমরা চলে যাই। আর যদি না দাও আমরা ভেতরে ঢুকে তোমাদের আমাদের যন্ত্রপাতিগুলো দেখাব’
তারপর আকাশের দিকে তাক করা লাগাতার কয়েকটি গুলির আওয়াজ হলো। মারিয়া এবং শিশুরা আবার জোরে কাঁদতে শুরু করল।
‘আহ, ম্যাডাম দেখি আবার কান্না শুরু করেছেন। কান্নার তো কোনো দরকার নাই। আমরা তো বলেছি আমরা ভালো ডাকাত। আমরা শুধু অল্প কয়টা টাকা নিয়েই চলে যাব। কোনো নির্যাতন করব না। অই আমরা কি নির্যাতন করি?’
‘মোটেই না!’ কোরাস চিৎকার করল।
‘আমার বন্ধুরা,’ জনাথন শুকনো গলায় শুরু করল। ‘আমি শুনেছি তোমরা কী বলেছ। তোমাদেরকে ধন্যবাদ। আমার কাছে যদি শুধু একশ পাউন্ড থাকত’
‘দেখো বন্ধু, খেলার চেষ্টা কর না। আমরা খেলতে আসি নাই। আমরা যদি ভুল করে ভেতরে ঢুকে যাই তাহলে কী হবে তা তুমি জানো। সুতরাং’
‘ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে বলছি; তোমরা যদি ভেতরে এসে একশ’ পাউন্ড পাও তাহলে সেটা নিয়ে আমাকে ও আমার স্ত্রী-সন্তানদের গুলি কর। কসম ঈশ্বরের। আমার কাছে সর্বসাকুল্যে ‘এগ রাশারে’র বিশ পাউন্ড আছে, যা আজকে ওরা আমাকে দিয়েছে’
‘আচ্ছা। ঠিক আছে। জানলাটা খুলে আমাদের ওই বিশ পাউন্ডই দাও। আমরা ম্যানেজ করে নেবো।’
ডাকাত দলের অন্যরা এইবার উচ্চৈঃস্বরে দ্বিমত করতে শুরু করল : ‘এই লোক মিথ্যা বলছে; ওর কাছে অনেক টাকা আছে আমরা ভেতরে গিয়ে ভালো করে খুঁজে দেখি বিশ পাউন্ডে কী হবে?...’
‘চুপ!’ সর্দারের গলা গুলির শব্দের মতো শোনাল এবং সবাই চুপ হয়ে গেল। ‘কোথায় গেলা? জলদি টাকাটা নিয়ে আসো।’
‘এইতো, আসছি,’ জনাথন বিছানায় তার পাশে রাখা ছোট কাঠের বাক্সটির চাবি নিয়ে অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে বলল।
ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে যখন প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এলো ততক্ষণে তিনি পাঁচ গ্যালনের বোতলটিকে বাইসাইকেলের সঙ্গে বাঁধছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী চুলার পাশে ‘আকারা’র গোলা ভাজতে ভাজতে গলদ্ঘর্ম হচ্ছিলেন। এক কোণায় বসে তাঁদের বড় ছেলে বিয়ারের বোতল থেকে গতকালের পাম ওয়াইনের তলানি সাফ করছিল।
‘আরে এইসব কিছু না,’ বাঁধতে বাঁধতে দড়ির দিকে তাকিয়েই তিনি তার সান্ত্বনাদাতাদের উদ্দেশ্যে বললেন। ‘এগ রাশারের’ ওই টাকাগুলো আর এমন কী! গত সপ্তাহে কী এর ওপরে নির্ভর করে আমার দিন চলেছিল নাকি? নাকি এইটা যুদ্ধে যা হয়েছে তার থেকেও বড়? আমি বলি কী, এইসব ‘এগ রাশারে’র কাঁচা পয়সা আগুনেই পুড়ে যাক! এগুলো সেখানেই চলে যাক যেখানে সবকিছু চলে যায়। অবশ্যই ঈশ্বর যা করেন ভালোর জন্যই করেন।’
ভাষান্তর : মশিউর রহমান