
প্রতীকী ছবি
এতদূর এসে ফিরে যাবে সে! বাড়ির গেটের সামনে আছে তেমনি একটা বোগেনভেলিয়া ও রঙ্গন গাছের জড়াজড়ি। সন্ধ্যা গত হলো কেবল। রাস্তায় সাইকেলের টুংটাং ও খেজুর গাছের আড়াল হতে ডেকে ওঠা খয়রা পেঁচা ছাড়া আর কেউ নেই চারপাশে।
নীলরঙের একতলা
বাড়ির সামনে এসে তন্বী পুরনো আম গাছের আড়ালে দাঁড়ায়। বড় ব্যাগটি পাশে রাখে শুকনো
ঝোপের আড়ালে। এখন শীতকাল। এজন্যই বুঝি স্ট্যাচু রাত এলো তাড়াহুড়া করে। তন্বী
সাবধানে এদিক-ওদিক তাকায়। কই টুসিকে তো দেখা যাচ্ছে না কোথাও! টুসিকে শেষ সে
দেখেছিল টুসির কিশোরী বেলায়। বেঁচে থাকলে নিশ্চয় অনেক বড় হয়ে গেছে টুসি।
এক লাফে এক চাঁদ
উঠেছে পুড়ে যাওয়া কমলার আদলে। আকাশ বড় আনিশ্চিত, রহস্যময়, আবেগহীন। তন্বী সাবধানে কাঁঠাল গাছের সারির
ছায়ায় সরে আসে। এখান থেকে বাড়ির ডানপাশ দেখা যায়। ওই তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পুরনো
ঢাউস ডাইনিং টেবিল। বাবা খবরের কাগজ পড়ছে। মা চুপিচুপি কী যেন করছে নিচু হয়ে। একটি
নতুন মুখের সালোয়ার কামিজ পরিহিতা নারী চঞ্চল ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। ভাইকেও
দেখা গেল। কী যেন বলেই ফিরে চলল নিজ ডেরায়। সবই যেন আছে আগের মতো আবার যেন নেইও।
জীবনের স্রোত বদলানোর জন্য পাঁচ বছর খুব একটা কম সময় নয় বটে।
তন্বী ধীরে ধীরে
সরে আসলো ঘরের বাম দিকে। জানালা দিয়ে দাদুকে দেখা গেল, শুকিয়ে কঙ্কাল, দাদুর সামনে মেঝেতে এক কাপ তুলসী পাতার চা
বোধহয়, তুলসী পাতার চা দাদুকে
কতবার যত্নে বানিয়ে দিয়েছে তন্বী।
দাদুকে দেখেই তার
আচমকা মনে পড়ল, তার দাদু
সম্মানীয় ব্যক্তি এলাকায়। কত বিচার করে মানুষের শরীয়ত মতে। বাবাও স্কুল মাস্টার।
গ্রামে তাদের চারিত্রিক সুনাম। এই পাঁচ বছরে কি সেই সুনাম আদৌ আছে তন্বীর বদৌলতে!
যে কিনা ভার্সিটিতে পড়তে যাওয়ার বছর খানেকের মধ্যে পালিয়ে গিয়েছিল বাড়ি ছেড়ে। যার
জন্য পালিয়েছিল তন্বী, সে-ও পালিয়েছিল
একদিন তন্বীকে ছেড়ে। তারপর বছরখানেকের একেবারে কচুরিপানা জীবন। তারপর এই ফিরে আসা
কতটুকু যৌক্তিক হয়েছে তন্বীর? দীর্ঘশ্বাস
বাতাসে মেশে।
এমন সময় খট করে
খুলে গেল সদরদরজা। বেরিয়ে আসলো একটি কুকুর। টুসি নাকি! মাকেও দেখা গেল এক ঝলক।
মাকে দেখে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো তন্বীর। বাড়ি যেন চুপচাপ বড়। বাড়িটা সরব করে
রাখত তন্বীই। আজ সে নীরবতার কারণ নয় তো! তন্বী শক্ত করে ব্যাগ আঁকড়ে ধরল। না...
এসব দৃশ্যে সে বড় বেমানান আজ। এই বোঝা বাড়ানোর দরকার নেই আর। তন্বী ফিরে চলল
অন্ধকারে। ফেরার পথে চমকে উঠে তন্বীর পড়ে যাওয়ার উপক্রম। তীব্র গমগম শব্দে ডেকে
উঠল টুসি। মা বলল-কে ওখানে?
মায়ের হাতে টর্চ
লাইটের আলো এদিক ওদিক লাফাচ্ছে।
তন্বী দৌড় দেবে
ঠিক করল। এই সময় পরিচিত কণ্ঠ এসে ধাক্কা মারল বুকে।
বাবার ডাকে তন্বী স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পড়ে। চাঁদ তখন উজ্জ্বল কমলা ফুটেছিল পশ্চিম আকাশে।