Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

জামাইষষ্ঠী: প্রীতির অনুরণন

Icon

প্রণব চক্রবর্তী

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১০:৪৬

জামাইষষ্ঠী: প্রীতির অনুরণন

জামাইষষ্ঠী হলো জামাইয়ের প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি দিন। দিনটিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় এবং বেশির ভাগ পরিবার তাদের জামাইয়ের জন্য বিশেষ ভোজের আয়োজন করে। 

এ বছর এই পার্বনের সময় ছিল ১ জুন, অর্থাৎ ১৭ জ্যৈষ্ঠ, রবিবার। বলাই বাহুল্য, বছরের একটি দিন শ্বশুরবাড়ির স্পেশাল আদরের অপেক্ষায় থাকেন সব জামাই। নতুন বস্ত্র, উপহার, ফল-ফলাদি, পান-সুপারি, ধান-দূর্বা, বাঁশের করুল, তালের পাখা, করমচা দিয়ে শাশুড়ি মায়েরা উদযাপন করেন জামাইষষ্ঠী। তবে বর্তমানে সবার ব্যস্ততার মধ্যে রেস্তোরাঁয়ও আয়োজন হচ্ছে বিশেষ জামাইষষ্ঠীর। আর সবাই সেখানেই আদরে-যত্নে আপ্যায়ন করে আদরের জামাইকে। দিনটি শাশুড়িরা দেবী ষষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে ষষ্ঠী পূজা করেন এবং তাদের কন্যা ও জামাইদের সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির জন্য আশীর্বাদ করে।

একদিকে জ্যৈষ্ঠ মাসে চারদিকে থাকে আম-জাম-কাঁঠাল-লিচুর মতো ফল। সেই সঙ্গে এদিন জামাইদের পাতে পড়ে রকমারি সুস্বাদু পদ। ভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল, মিষ্টি সহযোগে বিশাল আয়োজন করা হয় এই বিশেষ দিনে। মাছ, মাংস, বাহারি পদের সুস্বাদু তরকারি, চপ, ভাজা, সুক্তো, মিষ্টি, দই, পায়েস, চাটনি, মালাই, ছানা ইত্যাদি উপাদেয় খাদ্যের ভোজে জামাইকে আপ্যায়িত করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে জামাইষষ্ঠী উৎসব উদযাপন করলে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের পার্থক্য কমে যায়।

জামাইষষ্ঠী উদযাপনের সময় যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য অনুসরণ করা হয়-

* শাশুড়ি খুব ভোরে স্নান করে পূজা করেন ষষ্ঠী দেবীর।

*পূজার পর মেয়ে ও জামাই বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বাগত জানানো হয় শংখ বাদন ও উলুধ্বনি দিয়ে।

* ষষ্ঠী দেবীর পূজার জন্য জল, দূর্বা, পান, সুপারি, মিষ্টি দই, ফুল ও ফল একটি থালায় রাখা হয়। পূজার জল জামাইয়ের গায়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তার আরতি করা হয়। জামাইকে দইয়ের তিলক দেওয়া হয়, ষষ্ঠী দেবীর। হলুদ সুতা বাঁধা হয় জামাইয়ের হাতে এবং সব ধরনের সুরক্ষা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। এরপর জামাই ঘরে প্রবেশ করে।

* এই দিনে জামাইয়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। নতুন পোশাক ও বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়। বাঙালি ঐতিহ্য অনুসারে, জামাইকে বিশেষভাবে মিষ্টি, আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল পরিবেশন করা হয়। তাকে বাহারী ভোজের খাবার পরিবেশন করা হয়। এই সময়ে জামাইকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা হয়। এটিও একটি ঐতিহ্য। 

* এরপর জামাই ও মেয়েকে উপহার দেওয়া হয়। আমন্ত্রিত জামাইও নতুন কাপড় পরে সেজেগুজে মিষ্টির হাঁড়ি ও শাশুড়ির জন্য শাড়ি নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যান। বর্তমানে সস্ত্রীক যাওয়ার প্রথাটি প্রচলিত।

একটি পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে ভগবান বিষ্ণু দেবী পার্বতী ও ভগবান শিবকে তার বাড়িতে খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু দেবী লক্ষ্মী দেবী পার্বতীকে স্বাগত জানাননি, কারণ তাদের মধ্যে বিবাদ ছিল। এতে ভগবান শিব রাগান্বিত হয়ে ভগবান বিষ্ণুকে অভিশাপ দেন যেন তাকে রাস্তায় ভিক্ষুকের মতো ভিক্ষা করতে হয়। এরপর ভগবান বিষ্ণু নিজেকে জামাই রূপে রূপান্তরিত করেন এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ গ্রহণ করেন।

এই ক্ষমা প্রার্থনা এবং কৃতজ্ঞতা ভগবান বিষ্ণুকে ভগবান শিবের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং ভগবান বিষ্ণু তার গৃহে ফিরে যেতে সক্ষম হন।

জামাইষষ্ঠী মূলত দুটি পরিবারের বন্ধনকে দৃঢ় করে। একই সঙ্গে এই উপলক্ষে বিবাহিতা কন্যা স্বামী সহযোগে বাবার বাড়িতে আসা ও আত্মীয়স্বজনের সান্নিধ্যে আনন্দে সময় কাটানোর সুযোগ সৃষ্টি করে, যা দাম্পত্য সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫