Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

ডাকসু হতে পারে নতুন রাজনীতির রোল মডেল

Icon

কাজী জহিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:২২

ডাকসু হতে পারে নতুন রাজনীতির রোল মডেল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিপুল বিজয়ে যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছিল প্রগতিশীল রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে, তা একটু একটু করে কেটে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগরেও শিবিরের বিপুল বিজয়ে অনেকেরই ভ্রুকুটি, হচ্ছেটা কি দেশে! সত্যিই কি ছাত্রলীগের ভোটে শিবির জিতে যাচ্ছে? হ্যাঁ, এই অভিযোগই বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা করেছেন। মির্জা আব্বাস তো জনসভায় দাঁড়িয়েই বললেন, ছাত্রলীগের ভোটে শিবির জিতেছে। কিন্তু পার্থক্যটা যখন ছাত্রদলের ভিপির প্রাপ্ত ভোটের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ, তখন মির্জা সাহেবের এই অভিযোগ তো আমাদের চমকে দেয়ই, ছাত্রলীগ কি তাহলে এখনো ক্যাম্পাসে এত শক্তিশালী? নির্বাচন করলে ছাত্রদলের ভিপির প্রাপ্ত ভোটের দ্বিগুণ ভোট পাওয়ার ক্ষমতা রাখে? মির্জা সাহেব এখনো বুঝতে পারেননি এটা ২০২৫ সাল, এখন এআইয়ের যুগ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও গুগল টিপে, আলেক্সাকে জিজ্ঞেস করে সব জেনে ফেলে। কিছুই আর লুকানো যায় না।

প্রথাগত রাজনীতি করা নেতারা এখনো কাকের চক্ষু মুদে খাবার লুকানোর মতো কিছু সত্য লুকিয়ে রাখার কসরত করে যাচ্ছেন। তারা সবই দেখেন, সবই বোঝেন, কিন্তু ভাব দেখাচ্ছেন কিছুই হয়নি, সব আগের মতোই আছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কোনো বিপ্লব হয়নি এ কথা তারা যতই বলুন আসলে সেদিন বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে গেছে। সেদিন এ দেশের তরুণ ছেলেমেয়েরা শুধু হাসিনা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের বিতাড়িত করেনি, প্রথাগত মিথ্যার রাজনীতিকেও ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে। এখনো দেশের যেসব অঞ্চলের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মতো সচেতন হয়ে ওঠেনি, সেখানে হয়তো তারা আরো কিছুদিন পুরোনো ছড়ি ঘোরাতে পারবেন। কিন্তু সেই দিন আর বেশি দূরে নেই, যখন সারা দেশের চিত্রই হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। 

নতুন, জনবান্ধব ও ইনোভেটিভ অ্যাপ্রোচ নিয়ে মানুষের কাছে যেতে না পারলে রাজনীতিতে এগোনো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি আসলে শিবির জিতেছে? না, জিতেছে শিবিরের নেতৃত্বে গঠিত সর্বজনীন রাজনীতির আহ্বান। ওরা ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন মতের, ভিন্ন পোশাকের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তৈরি করেছে সবার প্যানেল, যা দেখে মুগ্ধ হয়েছে সাধারণ ছাত্রছাত্রী। দীর্ঘদিনের প্রচলিত ধারণার প্রস্তরখণ্ড ভেঙে দিয়েছে শিবির। কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করেছে যে তারা কোনো কট্টর রক্ষণশীল ছাত্রসংগঠন নয়। দলীয় কোন্দল মিটিয়ে যখন ছাত্রদল একটি গ্রহণযোগ্য প্যানেল দিতে পারে না, অপেক্ষায় থাকতে হয় লন্ডন থেকে ফয়সালা করার, তখন শিবির নিজেদের পদ ছেড়ে দিয়ে অন্যদের অন্তর্ভুক্ত করে। এসবই কি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আকৃষ্ট করেনি? আরো আছে। শিবিরের প্যানেলে থাকে মেধাবী এবং নিয়মিত ছাত্ররা, ছাত্রদলের প্যানেলে দেখা যায় ছাত্রত্ব ধরে রাখার জন্য বছরের পর বছর ড্রপ দেওয়া বা ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব আদু ভাইয়েরাই রাজত্ব করেছে এতদিন, কিন্তু ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশ যে এক নতুন বাংলাদেশ, এই নতুন বাংলাদেশে সবকিছু সহি হতে হবে, নয়ছয় দিয়ে আর চলবে না, তা বোধ করি সবাই টের পেতে শুরু করেছে। 

শিবির সমর্থিত প্যানেলের আলোচিত প্রতিযোগী চাকমা ছাত্র সর্বমিত্র খোলামেলা বলেছেন, ‘আমি শিবির করি না, এই প্যানেলে যুক্ত হওয়ার আগে ওদের সঙ্গে আমার ছয় ঘণ্টা কথা হয়েছে। ওরা সৎ, কথা দিয়ে কথা রাখে, তাই ওদের প্যানেলে যুক্ত হয়েছি। রাজনীতির মানুষেরা কথা দিয়ে কথা রাখে না, এটিই আমাদের প্রচলিত ধারণা, তাই আমরা রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস করি না। কিন্তু যদি কাউকে পাওয়া যায় ব্যতিক্রম, সত্যিই কথা ও কাজে কোনো অমিল নেই, তাহলে কি এ দেশের মানুষ তাদের বুকে জড়িয়ে ধরবে না?

নির্বাচিত হওয়ার পরে ডাকসুর নতুন নেতৃত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে ছুটে গেছে। ওরা নুরুল হক নূরের কাছে গেছে, মাহমুদুর রহমান মান্নার কাছে গেছে। অগ্রজদের দোয়া চেয়েছে, বলেছে ভবিষ্যতে আবারও যাবে, আরো বহুবার যাবে অভিজ্ঞতার আলো নেওয়ার জন্য। এই উদারতা কি রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল না? ওরা সব প্রথা ভেঙে জমকালো বিজয় মিছিল করেনি। এমনই অসংখ্য নতুনত্বের চমক সৃষ্টি করেছে।

মাত্র তো নির্বাচিত হলো। আমরা ওদের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করব। দেখব ওরা কতটা কথা রাখে, কতটা সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এবং কতটা মেধার স্ফুরণ ঘটায় ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে। আমাদের দেখার পালা জাতীয় রাজনীতির জন্য ওরা রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে কি না। যদি ওরা ঠিক পথে অগ্রসর হয়, তাহলে হয়তো ২০২৫-এর ডাকসু থেকেই শুরু হলো নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের নবযাত্রা। 

হলিউড, নিউইয়র্ক। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫