নতুন ভূতাত্ত্বিক যুগ নিয়ে গবেষণা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০

ক্রফোড হ্রদ। ছবি: ইন্টারনেট
পৃথিবীর ভূতত্ত্বে মৌলিক পরিবর্তন হয়ে এটি নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাদের মতে, নতুন এ ভূতাত্ত্বিক যুগ অ্যানথ্রোপোসিন বা নৃতাত্ত্বিক নামে পরিচিত। মানুষের কার্যকলাপের ফলে পৃথিবীর ভূতত্ত্ব, বায়ুম-ল এবং জীবজগতের ব্যাপক ও মারাত্মক পরিবর্তন হয়েছে। আর এই মারাত্মক পরিবর্তনের কারণেই এসেছে অ্যানথ্রোপোসিন যুগ।
অ্যানথ্রোপোসিন ওয়ার্কিং গ্রুপের (এডব্লিউজি) চেয়ারপার্সন ও লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ কলিন ওয়াটারস বলেন, এটি বেশ স্পষ্ট যে পরিবর্তনের মাত্রা অবিশ্বাস্যভাবে তীব্র হয়েছে এবং এটি মানুষের প্রভাবেই হয়েছে। আমাদেরকে এই নতুন যুগের পটভূমি বুঝতে হবে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পরিকল্পনা করতে হবে। মানুষের কর্মকা- শুধু পৃথিবীকে প্রভাবিতই করছে না, প্রকৃতপক্ষে নিয়ন্ত্রণও করছে। আর এই বিষয়টির গুরুত্ব আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।
সম্প্রতি কানাডার টরন্টো থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমের ক্রফোর্ড হ্রদে গবেষণা করে এ তথ্য প্রকাশ করেন ওই গবেষক দল। ওই হ্রদের তলদেশে জমা পলি বিশ্লেষণ করে পরিবেশগত পরিবর্তনের ভূতাত্ত্বিক এ রেকর্ডের কথা তুলে ধরেছেন গবেষকরা। ভূতাত্ত্বিক নতুন যুগের দাবি করা ওই বিজ্ঞানীরা প্রায় ১১ জায়গার মূল নমুনা সংগ্রহ করেছেন। লেক ক্রফোর্ডের গভীরতা অনেক বেশি হওয়ায় সেখানকার পলি তুলনামূলকভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে নিচের দিকে ভাসতে থাকে। সেখানে এমন স্তর তৈরি হয় যা স্বতন্ত্র পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে। গবেষকরা জানান, লেক ক্রফোর্ডের গভীরতা বেশি হওয়ার কারণেই তলদেশে পলিমাটিতে জমে থাকা প্রমাণগুলো এখনো নষ্ট হয়নি।
ওই গবেষকরা এই পলির স্তরের মধ্যে একটি ‘গোল্ডেন স্পাইক’ ফেলে নাটকীয় এ ফলাফল পান। যে ফলাফল অন্তত ভূতাত্ত্বিক পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর আকস্মিক পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। কিছু বিশেষ ভূতাত্ত্বিক গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করে তারা দেখতে পান, হ্রদের পলিতে প্লুটোনিয়ামের (ইউরেনিয়াম থেকে গঠিত মৌল পদার্থ) উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্লুটোনিয়াম খুব কমই প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। ফলে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, এটি ১৯৫০-এর দশকে পারমাণবিক পরীক্ষা থেকে এসেছে। আর এসব আলামতই ইঙ্গিত দিচ্ছে, ৭০ বছর আগে অ্যানথ্রোপোসিন যুগ বা মনুষ্যসৃষ্ট ভূতাত্ত্বিক যুগের সূচনা হয়েছে।
ভূতত্ত্ববিদ কলিন ওয়াটারস ও অন্য গবেষকরা বলেছেন, প্রায় ৭০ বছর আগে ১৯৫০ সালের দিকে যে এ যুগের সূচনা হয়েছে তার পরিষ্কার নির্দেশক এই প্লুটোনিয়াম। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে নতুন এ যুগ শুরু হয়েছে। এ সময় থেকেই নতুন যুগের নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ওয়াটারস আরও বলেছেন, পৃথিবীর জীব-জগতের আকস্মিক পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন হোলোসিন যুগে ফিরে যেতে পারি না।
যদি অ্যানথ্রোপোসিন ওয়ার্কিং গ্রুপের এই প্রস্তাব গৃহীত হয় তাহলে বর্তমানে চলা হোলোসিন ভূতাত্ত্বিক যুগের সমাপ্তি হবে। ১১ হাজার ৭০০ বছর আগে বরফ যুগ শেষ হওয়ার পর এ যুগের সূচনা হয়েছিল। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন স্ট্রাটিগ্রাফি ভূতাত্ত্বিক যুগের নামকরণ করে থাকে। গবেষণার তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যানথ্রোপোসিন যুগের স্বীকৃতি দেয় এই সংস্থাটি। নৃতাত্ত্বিক যুগের ধারণাটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়নি।
প্রায় ২০ বছর আগে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রসায়নবিদ পল ক্রুটজেন এ বিষয়ে প্রথম প্রস্তাব করেন। তখন অ্যানথ্রোপোসিন নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়। এটি কখন শুরু বা কীভাবে এটি সংজ্ঞায়ন করা যায় তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা দ্বিমত পোষণ করেন। অ্যানথ্রোপোসিন যুগ নিয়ে গবেষণা ও বিতর্ক এখনো চলমান রয়েছে।